টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, পিকআপটির চালকের আসনে ছিল কিশোর হেলপার (চালকের সহকারী)। সে মাদকসেবী; স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তও করছিল সে। পরে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সখীপুর-সাগরদিঘি সড়কের বেলতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া আফরিন (১৫)। সে উপজেলার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আটক হেলপারের নাম তানভীর হাসান (১৫)। তার বাড়ি একই উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিকেলের দিকে সাদিয়াকে দাফন করা হয়েছে।
নিহত ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় সাদিয়া তার ফুপুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে হেঁটে আসছিল। সকাল ১০টার দিকে বেলতলী বাজারে পৌঁছালে ওই পিকআপের ধাক্কায় তার মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।
আটক তানভীর প্রথম আলোকে বলে, সে কচুয়া থেকে কয়েকজন যুবককে তুলে উপজেলার কুতুবপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলতলী এলাকায় পৌঁছালে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে আসা ওই মেয়েটিকে পিকআপে থাকা যুবকেরা ‘হিপহিপ হুররে’ বলে উত্ত্যক্ত করে। এ সময় তানভীর নিজেও মেয়েটির পাশ দিয়ে পিকআপ চালায়। একসময় পিকআপের পেছনের অংশ সাদিয়ার মাথায় জোরে আঘাত করে। তানভীরের দাবি, ওই যুবকদের হইহুল্লোড় সে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে ওই যুবকদের চিনতে পারেনি।
কিন্তু পুলিশের দাবি, আটক তানভীর নিজেও একজন উত্ত্যক্তকারী ও মাদকসেবী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ওই পিকআপের মূল চালক লাবলু মিয়ার কাছ থেকে তানভীর পিকআপটি নিয়ে বের হয়।
এদিকে ঘটনার পরপর সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সখীপুর-সাগরদিঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে চার ঘণ্টা ওই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এলাকাবাসী গাড়ির আসল চালক ও মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
পরে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী সরকার ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন আলী আন্দোলনকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে বেলা দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে কাল শনিবার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানা গেছে।
ওসি এস এম তুহীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। গাড়ির চালকের সহকারী তানভীরকে থানায় রাখা হয়েছে। মূল চালক লাবলু মিয়া ও গাড়ির মালিক উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের রাজ্জাক বিপ্লবকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।