সরকারি মেডিকেল কলেজের মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে করার চিন্তাভাবনা চলছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেয়ার পর সরকারি মেডিকেল কলেজের জাতীয় মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়। মেধাতালিকার ভিত্তিতে ৩১ টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ স্ব-উদ্যোগে মেধাতালিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মেধাতালিকার ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রী ভর্তির নিয়ম থাকলেও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ প্রশাসন নানা অনিয়মের মাধ্যমে মেধাতালিকার বাইরে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে। মেধাতালিকায় থেকে ভর্তির সুযোগ পায়নি এমন শিক্ষার্থীর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তারা।
ওই কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে দেশে ৬৯টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এসব মেডিকেল কলেজে প্রকৃত জাতীয় মেধাতালিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে।
তারা জানান, অর্ধেকের বেশি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠুভাবে নিয়ম মেনে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে শিক্ষার্থী ভর্তিতে তাদের কারও আপত্তি নেই।
মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে চলতি বছর সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি-সংক্রান্ত এক সভা হবে। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের দু-একজন কর্মকর্তা এ প্রস্তাবনা উত্থাপন করবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ বলেন, এ ধরনের প্রস্তাবনার ব্যাপারে তার জানা নেই। তবে প্রস্তাবনা সভায় উত্থাপিত হলে এর ভালোমন্দ নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ভর্তি-সংক্রান্ত সভাটি সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্যকারণবশত সভার দিনক্ষণ আগামীকাল নির্ধারণ করা হয়।
রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ৩১ জুলাই পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৬ জন।
এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ ৭৩২ জন রোগী ভর্তি হয়। ওই মাসেই সর্বোচ্চ ৪ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে জুন মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৭ জন আক্রান্ত ও ৩ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা ডা. আয়েশা আক্তার বুধবার জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।
গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন ২৯ জন। মোট আক্রান্তদের মধ্যে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭১ জন।
ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার হলেও অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শে বাসায় রেখে রোগীর চিকিৎসা করাচ্ছেন। সরেজমিন লালবাগ ও ধানমন্ডি এলাকার একাধিক ডায়াগনস্টি সেন্টার ঘুরে দেখা গেছে জ্বরাক্রান্ত রোগীরা ডেঙ্গু পজিটিভ কি-না তা দেখতে হাজার টাকা ফি দিয়ে রক্ত (ডেঙ্গু এমএস১) পরীক্ষা করাচ্ছেন।
আলাপকালে জানা গেছে ৩ দিন পার হওয়ার পরও জ্বর না কমায় ডেঙ্গু আতঙ্কে অনেকেই রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু নেগেটিভ পাওয়া যাচ্ছে বলে ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়েন। অনেকের প্রোফাইল লোড হতে সমস্যা দেখা যায়। অবশ্য এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সমস্যায় পড়েন। অনেকেই তাঁদের সমস্যার কথা খুদে বার্তার সাইট টুইটারে প্রকাশ করেন। ফলে টুইটারে #facebookdown ট্রেন্ড উঠে আসে। ডেইলি মেইল ও খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যবহারকারী ফেসবুকে কোনো পোস্ট দিতে গেলে ‘সরি সামথিং ওয়েন্ট রং’ বার্তা দেখায়।
প্রায় ৪৩ শতাংশ ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন, ফেসবুক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে আংশিক অসুবিধার কথা বলেন।
ডাউনডিটেকটর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু এলাকায় সমস্যা দেখা দেয়। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন পেরু, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও ব্রাজিলের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। অনেকে প্রোফাইল দেখতে পারেননি। এ ছাড়া ফেসবুকে ছবি দেখতে ও অ্যাপ ব্যবহার করতে সমস্যা হয়।
ঠিক কী কারণে হঠাৎ ফেসবুক গায়েব হয়ে গিয়েছিল, তা জানায়নি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। অনেকেই ধারণা করছেন, ফেসবুক হালনাগাদ বা আপডেটের কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
ই-মেইলটার শিরোনামই অদ্ভুত। দেখলেই চমকে যাবেন নিশ্চিত। কারণ, ই-মেইলের শিরোনামেই আছে আপনার ব্যবহার করা একটি পাসওয়ার্ড এবং আপনার ইউজার নেম। না খুলে যাবেন কোথায়!! ‘ঘরের কথা পরে জানল ক্যামনে’—এই ভেবে ই-মেইলটা খুললেই আঁতকে উঠবেন।
কারণ আর কিছু না, তা হলো এই ই-মেইলটা সাইবার চাঁদাবাজদের এক নতুন ভয়াবহ কৌশল।
কম্পিউটার নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতা করি। এ জন্য সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধ নিয়ে নিয়মিত কাজ করতে হয়, শেখাতে হয় শিক্ষার্থীদের সাইবার অপরাধের নানা কৌশল। কিন্তু এই নতুন কায়দাটা দেখে আমিও অবাক হয়ে গেছি। এটা সফল হতে বাধ্য। কারণ, এখানে চাঁদাবাজেরা মানুষের মনস্তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে ভীতিকর একটা ই-মেইলের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেল করছে। আসুন দেখা যাক, ঘটনাটা কী!
ই-মেইলে যা থাকে
ই-মেইলের শুরু হয় এভাবে (ইংরেজি থেকে সহজবোধ্য বাংলায় লিখছি)—‘আপনার পাসওয়ার্ড হলো অমুক। আপনি আমাকে চেনেন না, কিন্তু আপনার সবকিছু আমার জানা, আপনারই দুর্ভাগ্য যে আমার হাতে আপনার সম্পর্কে গোপন তথ্য এসে গেছে।’
এরপরেই চলে যায় হুমকির অংশে—
‘আপনি অমুক ভিডিও/ছবির সাইট ভিজিট করেছেন (বুঝতেই পারছেন কী রকমের “ভিডিও” সাইট হতে পারে এটা) যেখানে আমরা ম্যালওয়ার বসিয়ে রেখেছিলাম। ওই সাইটে যাওয়ামাত্র আপনার কম্পিউটারে সেটা ইনস্টল হয়ে গেছে আর আপনার কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ এসে গেছে আমার হাতে। সেটা কাজে লাগিয়ে আপনার কম্পিউটারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড আমরা রেকর্ড করতে পেরেছি। এর সঙ্গে সঙ্গে আপনার ওয়েবক্যাম চালু করে আপনার ভিডিও আমরা রেকর্ড করেছি। আমরা এখন এমন একটা ভিডিও তৈরি করেছি, যার বাঁ পাশে আছে আপনি গোপনে বসে বসে যেসব দুষ্টু ভিডিও দেখছেন সেটা, আর ডান পাশে আছে সেই ভিডিও দেখে আপনি নিজে যা দুষ্টু কাজ করছিলেন, তার ভিডিও। আপনার সব ফ্রেন্ড ও কনট্যাক্ট লিস্টও আমাদের হাতে এসে গেছে।
এখন আপনার হাতে অপশন দুটি—কিছুই না করে বসে থাকতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে এক দিনের মাথায় আপনার বন্ধুবান্ধব, বউ-পরিবার, বস—সবার কাছে পৌঁছে যাবে এই ভিডিওর কপি। আর অন্য অপশন হলো, মান-সম্মান বাঁচাতে আপনি আমাদের ২৭০০ ডলার পাঠাবেন, বিটকয়েনের মাধ্যমে, অমুক ঠিকানায়। এই ই-মেইলে একটা গোপন পিক্সেল বসানো আছে। কাজেই আপনি ই-মেইলটা পড়েছেন তা আমরা জানি। যদি এক দিনের মধ্যে টাকাটা দিতে না পারেন, তাহলে কিন্তু আপনার হাঁড়ি আমরা হাটে ভাঙবই। এই কাজে অনেক সময় দিয়েছি আমি, কাজেই টাকা না দিয়ে যাবেন কোথায়! আর খবরদার, কাউকে জানাবেন না, জানালেই কিন্তু ভিডিও ছেড়ে দেব।’
আর যদি নিশ্চিত হতে চান এই ই-মেইলটা আসল কি না, ইয়েস বলে জবাব দেন। নমুনা হিসেবে পাঁচজন বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেব আপনার এই দুষ্টু ভিডিওটি।
পুলিশের কাছে গিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ, আমি ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাজেই আকাম–কুকামের এসব প্রমাণ সবার কাছে পাঠাতে না চাইলে জলদি পয়সা পাঠান। পয়সা পেলেই আমরা ভিডিওটা ডিলিট করে দেব।’
এই হলো ক্রিমিনাল ব্যাটার দেওয়া হুমকি।
আপনি কি ভয় পাবেন?
এখন প্রশ্ন হলো, আপনার কি ভয় পাওয়া উচিত? দুষ্টু সাইটে যদি না–ও গিয়ে থাকেন, আপনার ওয়েবক্যাম দিয়ে আপনার নানা সময়ের ছবি কি আসলেই কেউ তুলে রেখেছে? এই হুমকির বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু? চাঁদাবাজ অপরাধী কিন্তু শুরুতেই বড় একটা কাজ করে রেখেছে, আপনার ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দেখিয়ে দিয়েছে, যাতে করে আপনি বিশ্বাস করে ফেলেন তার কথা। আপনার গোপন পাসওয়ার্ড যদি ব্যাটা জানে, নির্ঘাত তার বাকি কথাও সত্যি!! এখন কী করবেন? বিটকয়েন কিনতে দৌড়াবেন? নাকি বনবাসে যাবেন?
কোনোটাই না! একেবারে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। কেন? বলছি এখনই।
আপনার যে ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দেখিয়ে আপনাকে কনভিন্স করছে হ্যাকার, সেটা সত্যি বটে। কিন্তু ঘরের কথা পরে জানল ক্যামনে?
ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে খুব বড় বড় কিছু পাসওয়ার্ড ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। লিংকড-ইন, বিটলি—এসব প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড চুরি গেছে। আর ডার্ক ওয়েবে এসব পাসওয়ার্ডের তালিকা গেছে ছড়িয়ে। ফলে অপরাধীদের হাতে আপনার লিংকড-ইনের বা অন্য সাইটের (পুরোনো) পাসওয়ার্ড আছে বটে। এসব কোম্পানি বছরখানেক আগেই ব্যাপারটা সবাইকে জানিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল, ফলে অধিকাংশ মানুষই পাসওয়ার্ড পাল্টে ফেলেছেন। (যদি না পাল্টান, তাহলে জলদি পাল্টে ফেলুন)। কিন্তু চাঁদাবাজ এটার সুযোগ নিয়েছে, শুরুতেই আপনার পুরোনো সেই পাসওয়ার্ডের কথা বলে আপনাকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। আপনি অন্য কথায় হয়তো বিশ্বাস করতেন না, কিন্তু আপনার গোপন একটা তথ্য দেখিয়ে আপনাকে সহজেই বিভ্রান্ত করে ফেলেছে চাঁদাবাদ। হয়তো আপনি বিশ্বাস করে বসেছেন, আসলেই আপনার ও রকম ভিডিও বানিয়ে ফেলেছে হ্যাকাররা, আর এখনই সবার কাছে ফাঁস করে দেবে।
আসল ঘটনা হলো, এ রকম কোনো ভিডিওই তাদের হাতে নেই, কেবল কানপাতলা লোকজনকে ঘোল খাইয়ে তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতানোই এই চাঁদাবাজের কাজ। আমি নিশ্চিত, প্রচুর লোকজন এ রকম ই-মেইলে বিশ্বাস করবে আর হাজার হাজার টাকা পাঠাবে এই বিটকয়েন অ্যাড্রেসের মাধ্যমে। এই প্রতারণা কয়েক মাস ধরেই চলছে—আমার একজন সহকর্মী গবেষক এই চাঁদাবাজ গ্রুপটাকে মনিটর করছে কয়েক মাস ধরে। জুলাই মাস থেকে এই রকম প্রতারণার জন্য লাখ লাখ ই-মেইল ছেড়েছে প্রতারকেরা।
অনলাইনে নিরাপদ থাকবেন কী করে?
এই প্রতারণাটা না হয় বানোয়াট একটা ব্যাপার নিয়ে, কিন্তু অনলাইনে নিরাপদ থাকবেন কীভাবে? আপনার এ কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, নিয়মিতভাবে অ্যান্টিভাইরাস হালনাগাদ করে রাখুন। আর অচেনা অজানা ওয়েবসাইটে না যাওয়াই ভালো; তার সঙ্গে সঙ্গে ই–মেইলে কেউ কোনো লিংকে ক্লিক করতে বললে নিশ্চিত না হয়ে ক্লিক করবেন না। একই কথা চলে মেসেঞ্জারে বা অন্যভাবে পাঠানো বার্তার ক্ষেত্রেও—এমনকি পরিচিত মানুষ কেউ লিংক পাঠালেও নিশ্চিত না হয়ে সেখানে ক্লিক করবেন না। কারণ, সাইবার অপরাধীরা এভাবেই অনেক সময় পরিচিত মানুষের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে সেখান থেকে ফ্রেন্ডলিস্টের সবাইকে মেসেজ পাঠায় তাদের অ্যাকাউন্ট দখল করার জন্য। কোনো ওয়েবসাইটে যাওয়ার পর ওয়েবক্যামের মাধ্যমে ভিডিও রেকর্ডের সমস্যার সমাধানটা খুব সহজ। ওয়েবক্যামের ওপরে একটা কাগজ বা কালো টেপ লাগিয়ে রাখুন, যখন ভিডিও চ্যাট করবেন আসলেই, তখনই কেবল সেটা সরিয়ে নেবেন। এতে করে আপনার কম্পিউটারে ম্যালওয়ার ঢুকে গেলেও ওয়েবক্যাম দিয়ে রেকর্ড করতে পারবে না কেউ। আর আপনার পাসওয়ার্ড বা ইউজার নেম ডার্ক ওয়েবে ছড়িয়ে গেছে কি না, তা যাচাই করতে হলে এই সাইটে দেখতে পারেন
সাইবার চাঁদাবাজদের বিশ্বাস করবেন না, প্রতিহত করুন তাদের সব প্রতারণার ফাঁদ।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম, যুক্তরাষ্ট্র।
থিসিস পেপারের শুরুতে নিশাত তাসনিম যা লিখেছেন, তার বাংলা অনুবাদ অনেকটা এমন—এই কবিতা এক বহু পুরোনো নদীর। যে নদীর জলে ভেসে আসত পলিমাটি, গড়ে উঠত উর্বর ভূমি। হাজারো মানুষ নদী পেরিয়ে পৌঁছাত তাদের গন্তব্যে। কিন্তু একদিন নদী এই মানুষগুলোকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলো। নদীর জলে ভেসে এল বহু মৃতদেহ আর রক্ত…
ভাবছেন থিসিস পেপারে তো গুরুগম্ভীর গবেষণার তথ্য-উপাত্ত আর হিসাব-নিকাশ থাকার কথা, নদীর গল্প কেন? ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) স্থাপত্য বিভাগ থেকে স্নাতক পেরোনো নিশাত তাসনিম তাঁর শেষ বর্ষের প্রকল্পের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এক ঐতিহাসিক পটভূমি। তাঁর প্রকল্পে উঠে এসেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া ইতিহাসের অন্যতম ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড, চুকনগর গণহত্যার কথা। ১৯৭১ সালে খুলনার চুকনগরে এক দিনে আট হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই ঘটনার স্মরণে চুকনগর বাজারের কাছে একটি গবেষণাকেন্দ্র, স্মৃতিস্তম্ভসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের প্রকল্প উপস্থাপন করেছিলেন নিশাত। আর সেই প্রকল্প জিতে নিয়েছে তামায়ুজ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ২০১৭।
স্নাতক প্রকল্পে শিক্ষার্থীদের করা স্থাপত্য, নগর-পরিকল্পনা ও ল্যান্ডস্কেপ নকশার কাজগুলো এই প্রতিযোগিতায় জমা পড়ে। সেখান থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার পর কয়েকটি প্রকল্পকে পুরস্কৃত করা হয়। এ বছর নিশাত তাসনিম পেয়েছেন প্রথম পুরস্কার। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে স্নাতক শেষ করে তিনি নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
এ বছর তামায়ুজ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডের জন্য ৪২টি দেশের ১১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪৬৮টি প্রকল্প জমা পড়েছিল। বিজয়ী হওয়ার পুরস্কার হিসেবে নিশাত ইরাকি বিজনেস কাউন্সিলের অর্থায়নে ইতালির পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটি অব মিলানে স্নাতকোত্তর করতে পারবেন। তামায়ুজ ইন্টারন্যাশনালের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে দেখা গেল, নিশাতের কাজটি সম্পর্কে বিচারকদের বক্তব্য, ‘বিষয়টির গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখে চমৎকার সমন্বয় করা হয়েছে এ প্রকল্পে। এটি গতানুগতিক স্মৃতিস্মারকের ধারণা থেকে আলাদা। প্রকল্পটির নকশা একই সঙ্গে শিল্পমানসম্পন্ন, স্নিগ্ধ এবং শক্তিশালী।’
স্নাতক প্রকল্পের জন্য কেন এমন একটি বিষয় নির্বাচন করলেন? প্রশ্নের উত্তরে নিশাত বলেন, ‘অতীত সম্পর্কে জানা আমাদের দায়িত্ব। জানতে হবে আমরা কোথা থেকে, কীভাবে এসেছি। আমাদের ভিতটা শক্ত না হলে, স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলে একসময় আমরা হারিয়ে যাব। আমরা ’৭১ নিয়ে কথা বলি। আমরা আমাদের বীরত্বকে সব সময় সামনে রাখি। বীরত্বের পাশাপাশি আমাদের ত্যাগের গল্পও কিন্তু কম নয়। নির্বিচারে, নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে একাত্তরে। সেসব ইতিহাস কতখানি স্বীকৃত, কতটুকু জানে বর্তমান প্রজন্ম, এসব ভাবনা থেকেই বিষয়টি নির্বাচন করেছিলাম।’ জানালেন, তাঁর প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ইউএপির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক মুহতাদিন ইকবাল, জিয়াউল ইসলাম, মাশরুর মামুন ও উদয় শংকর দত্ত।
পোয়েম, প্রেয়ার অ্যান্ড প্রমিজেস—এই ছিল প্রকল্পটির শিরোনাম। নিশাত তাসনিমের চাওয়া, এই গণহত্যা নিয়ে আরও বেশি গবেষণা হোক। নিজের আগ্রহেই তরুণ প্রজন্ম জানুক তাঁর অতীতের ইতিহাস।
আগামী ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ অক্টোবর। ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা হবে ৯ নভেম্বর। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তি পরীক্ষা-সংক্রান্ত সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এতে সভাপতিত্ব করেন।
এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২৭ আগস্ট এবং আবেদন জমার শেষ সময় ১৮ সেপ্টেম্বর। বিডিএস ভর্তির অনলাইন আবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা ১৬ থেকে ২৭ অক্টোবর। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হবে।
সভায় অতীতের মতো কঠোর নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একটি স্বচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এবারও মেধাবী শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস ভর্তির সুযোগ পাবেন বলে এ সময় মন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভায় অন্যদের মাঝে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব জি এম সালেহ উদ্দিনসহ চিকিৎসক নেতা, সাংবাদিক নেতা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঠোঁটকাঠি, মানে লিপস্টিকের জন্ম প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। নানা পদ্ধতিতে ঠোঁট রাঙানোর কারিগরি চলত প্রাচীন সেই সময়ে। কয়েক শতক আগেও লিপস্টিক বলতে লাল রংই বোঝাত। ত্বকের রং যেমনই হোক, ওই একটা রংই চলত। বিশেষজ্ঞ মতামত—ত্বকের রঙের ধারার সঙ্গে মিলিয়ে লিপস্টিকের রং বেছে নেওয়া ভালো। লিপস্টিকের সঠিক রং যতটা সুন্দর করে তুলবে আপনাকে, বেঠিক রং ঠিক ততটাই অসুন্দর করে তুলতে পারে।লিপস্টিক পাওয়া যখন দুষ্কর ছিল, তখন থেকেই কিন্তু লিপস্টিকের প্রচলন। নিত্যনতুন পদ্ধতিতে ঠোঁট রাঙানো হতো। পাশ্চাত্যে বেরি ফলের রস দিয়ে লিপস্টিক, ব্লাশঅন কিংবা আইশ্যাডোর কাজ সারতেন অনেকে। আমাদের এখানে একই কাজটি করা হতো ঠোঁটে রঙিন কাগজ চেপে ধরে।
চিত্র বদলে গেছে। এখন লিপস্টিক হাতের মুঠোয়। লিপস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়সও এখন কোনো বিষয় নয়। বরং ত্বকের রংটা এখানে মুখ্য। লিপস্টিক এমনই একটা প্রসাধন, ত্বকের রঙের সঙ্গে না মানালে যা নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করাই ভালো।
রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খানের মতে, মেরুন, রুবি লাল রঙের লিপস্টিকে প্রায় সবাইকে ভালো লাগে। যাঁদের গায়ের রং চাপা, তাঁরা যদি লালের সঙ্গে একটু কালচে কোনো রং মিশিয়ে নেন, মানাবে ভালো।
ত্বকের রঙের ধারা মানে স্কিন টোন বোঝার সহজ বুদ্ধি হলো ত্বকের নিচের শিরার রং বোঝা। শিরার রং যদি নীল বা বেগুনি হয়, তাহলে আপনি ‘কুল টোন’-এর অধিকারী। অর্থাৎ আপনার ত্বকের নিচের রং হলো গোলাপি, লাল বা নীলচে। ত্বকের নিচের রং (আন্ডার টোন) হলদেটে, বাঙ্গি বা সোনালি ধাঁচের হলে সেটি ‘ওয়ার্ম টোন’ আর শিরার রং সবুজ। নীল ও সবুজ শিরা যাঁদের, তাঁদের সুবিধা সবচেয়ে বেশি। ত্বকের রং নিরপেক্ষ হওয়ায় তাঁরা প্রায় সব রঙেই সাজাতে পারেন ঠোঁট। ত্বকের ওপরের রঙের ওপর নির্ভর করে লিপস্টিকের রং ঠিক করা হয় না। বরং ত্বকের নিচে যে রং লুকিয়ে আছে, সেটার ওপর নির্ভর করেই লিপস্টিকের রঙের তালিকা (কালার চার্ট) বানানো হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে—জানালেন কানিজ আলমাস খান।
আন্ডার টোন নীলচে হলে মেরুন ধাঁচের গাঢ় রং মানাবে। হলদেটে টোন যাঁদের, তাঁদের জন্য চকলেট, কফির মতো রং। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের আন্ডার টোন জলপাই রঙের। কারোরটা একটু উজ্জ্বল জলপাইরঙা, কারও-বা চাপা।
দিনের বেলায় ম্যাট লিপস্টিকই ভালো। রাতের বেলায় দাওয়াতে বা চকচকে (শাইনি) মেকআপের সঙ্গে গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। দুটোই এখন বেশ চলছে। লিপলাইনার শুধু লিপস্টিকের লাইন ঠিক করার জন্য। মেটালিক লিপস্টিকও চলছে। এখন তো কালো লিপস্টিকও জনপ্রিয়। ন্যুড রং পাশ্চাত্যে আগে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। আমরা যখন পাশ্চাত্যের ফ্যাশন ও স্টাইলগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা শুরু করলাম, তখন থেকে ন্যুড রঙের ব্যবহারও শুরু হয়েছে। প্লাম রং, লাল, মেরুন, নীল, সবুজ, ছাই রঙের লিপস্টিক এখন বেশ জনপ্রিয়। কানিজ আলমাসের মতে, কোনো স্টাইলই এখন আর উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সবাই সবকিছু ব্যবহার করে দেখছেন।
লিপস্টিক আর একটু কাজল একজন মানুষের চেহারায় সতেজতা নিয়ে আসতে পারে। একটু রঙের ছোঁয়া পুরো চেহারায় প্রাণবন্ত ভাব নিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক কোনো আয়োজনে যাওয়ার আগে লিপস্টিক লাগানো উচিত। এতে চেহারাতেও আনুষ্ঠানিকতা ফুটে ওঠে।
মডেল তৃণর ত্বকের রং উজ্জ্বল হওয়ায় তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বাঙ্গি ন্যুড টোন, রুবি লাল, প্লাম (একটু মেরুনরঙা বেগুনি), মভ (হালকা বেগুনি ধাঁচের) রঙের লিপস্টিক। মডেল সায়রার ত্বক মিষ্টি শ্যামলা, ঠোঁটের রংগুলোতেও আছে সেই ধারা। কোরাল কমলা, হালকা গোলাপি, ন্যুড, হালকা বাঙ্গি রংগুলো মানিয়ে গেছে তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও। মডেল মাইশার চাপা রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পাউডার গোলাপি, হালকা বেগুনি, কমলা রঙের লিপস্টিকগুলো প্রাধান্য পেয়েছে।
ঠোঁটকাঠির রঙে রাঙা ঠোঁটে আপনাকে দেখাবে সুন্দর, সে নিয়ে তো সন্দেহ নেই। এতে আপনার ব্যক্তিত্বও ফুটে উঠবে। শুধু ত্বকের রংটা কোন ধাঁচের, তা বুঝে নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
সমস্যা
আমরা ভালোবেসে পরিবারের সম্মতিতে চার বছর আগে বিয়ে করেছি। দুজনই প্রকৌশলী। ওর নিজের একটা ফার্ম রয়েছে। এত দিন অনেক সুখী ছিলাম। কিন্তু এ বছর একজন মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয়, দেখা করা এবং ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটানো আমাকে আহত করেছে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ঘটনাগুলো ঘটেছে। আমার স্বামী সবকিছু স্বীকার করে নিয়ে কথা দিয়েছে, সে আর কখনো এমনটা করবে না। সে বলেছে, মেয়েটার সঙ্গে তার কোনো মানসিক সম্পর্ক ছিল না, তা শুধুই শারীরিক। মেয়েটার সঙ্গে তার আর যোগাযোগ নেই, কখনো আর কথা বলবেও না। বিষয়টার জন্য সে খুবই অনুতপ্ত। কিন্তু যা হয়েছে আমি সেটা কিছুতেই মানতে পারছি না। আমি ততক্ষণই ভালো থাকি, যতক্ষণ এটা ভুলে থাকি। বাস্তবতা হলো, আমি তাকে ছেড়ে কখনো থাকতে পারব না। আবার আমি তাকে ভালোবাসতেও পারছি না। খুব ঘৃণা হয় ওকে। ঘটনার কথা মনে হলেই, পাগলের মতো আচরণ করি। এভাবে চললে, যেকোনো দিন বড় একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে। আমার কী করা উচিত?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তোমার মনের ওপর দিয়ে যে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে গেছে তা সহজেই অনুমেয়। জীবনে চলতে গিয়ে আমরা যত ধরনের ট্রমা বা ভীতিকর ও পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাই, তার মধ্যে সবচেয়ে দুঃসহ হচ্ছে খুব কাছের, বিশ্বস্ত একটি মানুষের দ্বারা প্রতারণা বা প্রবঞ্চনার শিকার হওয়া। এতে করে অত্যন্ত অসহায়ত্বের সৃষ্টি হয়, মনে হয় আর কখনো এই মানুষটিকে বিশ্বাস করা বা তার সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব নয়। যে মানুষটি সবচেয়ে আস্থার জায়গায় ছিল, যে সমস্যাগুলো সমাধানের সহায়ক ছিল, হঠাৎ করে সে সমস্যার উৎস হয়ে মনের মধ্যে সব সময় ঘোরাফেরা করতে থাকে। একেবারে বিশ্বাসের শিকড়ে গিয়ে প্রচণ্ডভাবে আঘাত লাগে। মনে হতে থাকে, ভবিষ্যতে আর কখনো কোনো কাছের মানুষকে বিশ্বাস করা যাবে না। তার প্রতি ঘৃণা, অশ্রদ্ধা ও অনীহা সৃষ্টি হয়। তার কণ্ঠস্বর, শারীরিক উপস্থিতি সবকিছুই অরুচিকর মনে হতে থাকে। আবার যখন তাকে একেবারে ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবা যায় না, তখন মনঃকষ্ট আরও হাজার গুণ বেড়ে যায়।
বর্তমানে তুমি এই অবস্থাতেই রয়েছ। তোমরা দুজন সহপাঠী ছিলে কি না তা জানাওনি। এমনকি হয়েছে যে একই সঙ্গে প্রকৌশলী হওয়ার পর থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেক সময় দিতে হয়েছে? দাম্পত্য ও কর্মজীবন একই সঙ্গে শুরু হওয়ার ফলে তোমরা কি পারস্পরিক সম্পর্কটি খুব একটা যত্ন করতে পারনি? অনেক সময় বিয়ের আগের প্রেমের সম্পর্কটিকে আমরা কিছুটা গুরুত্ব দিয়ে সেটির প্রতি বেশ মনোযোগী থাকি। বিয়ের পর দুজন সারা জীবনের জন্য পরস্পরের সঙ্গী হয়ে থাকার অঙ্গীকার হয়ে যায় বলে সম্পর্কটি কিছুটা অযত্নেœপড়ে যায়। তখন আমরা জীবনের অন্য দিকগুলো গোছাতে শুরু করি। তোমার স্বামী নিজের ফার্মটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পেছনে অতিরিক্ত সময় দিয়ে দেওয়ার ফলে সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা এসেছিল কি না তা ভেবে দেখতে পারো। হয়তো নিজেদের অজান্তেই পারস্পরিক নির্ভরশীলতার জায়গাটি কমে গিয়ে থাকতে পারে। যদিও ব্যাপারটি খুব অল্প দিনের ছিল এবং তোমার স্বামী সব স্বীকার করেছে, তারপরও তুমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছ। সে অনুতপ্ত হয়েছে ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তোমার কাছে যে অঙ্গীকার করেছে সেটি তোমাকে এই মুহূর্তে খুব একটা স্বস্তি দিতে পারছে না।
তুমি লিখেছ, এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে যা সত্যিই বেশ আশঙ্কার নির্দেশ করে। তুমি কি তাকে এখন অনেক প্রশ্ন করে যাচ্ছ? যেমন, তোমার মধ্যে কিসের ঘাটতি ছিল, মেয়েটির কাছে সে এমন কী পেয়েছে তা তোমার মধ্যে পায়নি ইত্যাদি? আমি অনুরোধ করব, এই প্রশ্নগুলোর পরিবর্তে তুমি তার কাছে জানতে চাইতে পার এই অভিজ্ঞতাটি তাকে নিজের নতুন কোনো সত্তার সন্ধান দিয়েছে কি না যার খোঁজ সে আগে জানত না? এই নতুন সত্তাটি সঙ্গে করেই সে আবার তোমার সঙ্গে আগের মতোই সংযুক্ত হতে পারবে কি না। তাকে ক্রমাগত প্রশ্নবাণে বিদ্ধ না করে বা নিজের কোনো ক্ষতি না করে দুজনে সম্ভব হলে আবার আগের সময়গুলোর মতো একসঙ্গে কাটাও। ওর মোবাইল ফোন বা ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দিতে অনেক ইচ্ছে হলেও চেষ্টা কর সেখান থেকে বিরত থাকতে। এই ঘটনার জন্য নিজেকে একদম কষ্ট না দিয়ে আত্মমর্যাদা বোধটি কীভাবে আরও বাড়ানো যায় তা চেষ্টা কর, কেমন?
তোমার স্বামীকেও বল যে সে যেন এখন তোমার প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ও ¯স্নেহপরায়ণ হয়। অনেক ধৈর্য নিয়ে সে যেন তোমার অস্থির মনের বহিঃপ্রকাশকে কিছুটা সহ্য করে নেয়। কারণ, তাকেই বেশি চেষ্টা করতে হবে তোমার বিশ্বাসটি পুনরুদ্ধার করতে। যে কারণেই হোক না কেন সে তোমার মনে অনেক বেশি আঘাত দিয়ে ফেলেছে। যদি বিবাহিত সম্পর্কটি ওর কাছে মূল্যবান হয়, তাহলে বেশ কিছুদিন ওকে তোমার এলোমেলো আচরণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। তবে তোমার মনের এই ক্ষতটি যদি দীর্ঘায়িত হয় এবং সম্পর্কটির মধ্যে টানাপোড়েন চলতেই থাকে, তাহলে তোমাদের কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানীর কাছে যেতে হবে। তাঁরা অনেক ধৈর্যের সঙ্গে ও সহমর্মী হয়ে কথাগুলো শুনবেন এবং সাইকো-থেরাপিউটিক কৌশল দ্বারা নিজেদের মনকে গুছিয়ে নিতে এবং সম্পর্কটিকে কিছুটা হলেও একটি স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যেতে সহায়তা করবেন। এককভাবে নিজেদের কথা অকপটে বলার জন্য বসে কিছু সেশন করতে পার। আবার একসঙ্গে বসেও নিজেদের সম্পর্কটি আবার উন্নয়নের লক্ষ্যে থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা করতে পার।
বাবার পথে হাঁটছে তাঁর ছয় বছরের মেয়ে। এমনকি বাবার দেখাদেখি মেয়েও চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। ভারতের দক্ষিণের সুপারস্টার মহেশ বাবু তাঁর ব্যস্ত শিডিউলের মাঝে তেলেঙ্গানা সরকারের বিধায়ক কে টি রমা রাওয়ের ‘গ্রিন চ্যালেঞ্জ’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বাবার এই চ্যালেঞ্জকে সার্থক করতে এগিয়ে এসেছে মহেশ বাবুর মেয়ে সিতারা।
তেলেঙ্গানা সরকারের ‘গ্রিন চ্যালেঞ্জ’ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এরপর ভারতের অনেক তারকা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। এই তারকাদের মধ্যে আছেন শচীন টেন্ডুলকার, সাইনা নেওয়াল, পরিচালক রাজমৌলীসহ অনেকে। এবার এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন মহেশ বাবু। দেশকে সবুজায়ন করার অভিযানে দক্ষিণের এই নায়কের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তাঁর মেয়ে সিতারা আর ছেলে গৌতম। মহেশ বাবু টুইট করে জানিয়েছেন, এই অভিযানে তাঁর ছেলেমেয়েরাও যুক্ত হয়েছে। ‘গ্রিন চ্যালেঞ্জ’ তেলেঙ্গানা সরকারের ‘হরিথা হরম’-এর অংশ। এই অভিযানের লক্ষ্য হলো, ‘দেশজুড়ে বৃক্ষ রোপণ করে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। আর দেশকে সবুজ থেকে আরও সবুজ করা।’
মহেশ বাবু তাঁর ২৫তম ছবির শুটিং করেছেন উত্তরাখন্ডের অন্তর্বর্তী রাজধানী শহর দেরাদুনে। উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিভেন্দ্র সিং রাউত দক্ষিণের এই সুপারস্টারের সঙ্গে দেখা করতে তখন ছবির সেটে যান। মহেশ বাবু দক্ষিণের সুপারস্টার হলেও দেশজুড়ে তাঁর অসংখ্য ভক্ত রয়েছে।
ফোন নম্বর বন্ধ। ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ কোনো মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না। ফেসবুকে হঠাৎ উঁকি দিলেও ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো প্রশ্নের কোনো কথার উত্তর দিচ্ছেন না সারিকা। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এই মডেল ও অভিনয়শিল্পীকে। কোথায় তিনি, পরিচিতজনদের অনেকেরই এই প্রশ্ন? প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সারিকা আর তাঁর মায়ের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও কোনো লাভ হয়নি। সারিকা তাহলে কোথায়?
ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ও পরিচালক এস এ হক অলীকের নাটকে অভিনয় করেছেন সারিকা। তিনি বলেন, ‘প্রযোজকদের সংগঠন থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। ফোন করেছি, এসএমএসও পাঠিয়েছি—কিন্তু সারিকা কোনো উত্তর দেয়নি। আমি শুনেছি, কারও সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ নাই।’
অভিনয়জগতে সারিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিত্রনায়ক ইমন। একসঙ্গে তাঁরা দুজন বিজ্ঞাপনচিত্র আর নাটকে অভিনয় করেছেন। বিভিন্ন স্টেজ শোতে তাঁদের পারফর্ম করতে দেখা গেছে। সারিকার সঙ্গে তাঁর বন্ধু ইমনেরও নাকি অনেক দিন কোনো যোগাযোগ নেই। আজ শনিবার দুপুরে ইমন বলেন, ‘ফোনে কথা হতো না। শেষ কথা হয়েছে, তা-ও মাস দুয়েক আগে। এসএমএসে বেশি যোগাযোগ হতো। ওর যে আসলে কী হয়েছে, কিছুই বুঝি না! যথেষ্ট সম্ভাবনাময় একজন মডেল ও অভিনয়শিল্পী। একটু যদি সিরিয়াস হতো, তাহলে অনেক ভালো করতে পারত।’
এদিকে ‘অ-শিল্পীসুলভ আচরণ’-এর জন্য অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্য সারিকা সাবরিনকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব)। ১ আগস্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা অবস্থায় এই অভিনেত্রী কোনো নাটক, মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপনসহ সংগঠনের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। গত ১০ এপ্রিল সারিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন প্রযোজক মোহাম্মদ বোরহান খান। তাঁর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জুলাই টেলিপ্যাবের সালিস বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সংগঠনের কার্যকরী কমিটিতে পাস হয় সিদ্ধান্তটি। সালিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টেলিপ্যাবের সভাপতি মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক ইরেশ যাকের, সালিস বৈঠকের আহ্বায়ক তারেখ মিন্টুসহ অনেকেই।
সাংগঠনিক বিবৃতি থেকে জানা যায়, গত ২১ মার্চ পাঁচটি নাটকের শুটিংয়ে নেপাল যাওয়ার কথা ছিল সারিকার। এর জন্য নির্মাতার কাছ থেকে অগ্রিম পারিশ্রমিক ৫০ হাজার টাকা নেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশে ফেরার টিকিট এবং নাটকের চিত্রনাট্য বুঝে নেন। এর আগে ২০ মার্চ সারিকার সঙ্গে নির্মাতাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঠিক সময়ে বিমানবন্দর পৌঁছে যাবেন। কিন্তু সঠিক সময়ে বিমানবন্দরে শুটিং ইউনিট পৌঁছালেও সারিকা যাননি। এরপর সারিকাকে ছাড়াই নেপালে চলে যায় শুটিং ইউনিট। তাই পরিকল্পনায় থাকা সারিকাকে নিয়ে পাঁচটি নাটক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি, যার কারণে প্রযোজক বোরহান খান আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন।
ফুটবল-বিশ্বকে ব্রাজিল উপহার দিয়েছে পেলে। দিয়েছে গারিঞ্চা, টোস্টাও, জিকো, সক্রেটিস, রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহো ও নেইমারদের মতো তারকাদের। সুতরাং দলবদলের বাজারে ব্রাজিলিয়ানদের ঘিরে যে বাড়তি আগ্রহ থাকবে, এ তো জানা কথাই! তবে সর্বশেষ কয়েক মৌসুমের মধ্যে এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ব্রাজিলিয়ানদের দাপটটা একটু বেশিই বলে মনে হচ্ছে। দলবদলের তথ্য-উপাত্তবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, এবার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দামি ১৮টি দলবদলের মধ্যে ৯টিই ব্রাজিলিয়ানদের।
দলবদলের বাজারে সাড়া ফেলে দেওয়া এই ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে অবশ্য একজন গোলরক্ষক-আলিসন। কিছুদিন আগে রোমা থেকে তাঁকে কিনতে লিভারপুলের খরচ হয়েছে ৭ কোটি ২৫ লাখ ইউরো। যে দলবদলটা আলিসনকে বানিয়ে দিয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে দামি গোলরক্ষকও। আলিসন ছাড়াও গ্রীষ্মকালীন এই দলবদলে বাড়তি নজর কেড়েছেন ফ্রেড, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, ফাবিনহো, আর্থার ও ম্যালকম। শাখতার দোনেৎস্ক থেকে মিডফিল্ডার ফ্রেডকে কিনতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খরচ হয়েছে ৬ কোটি ইউরো।
বিস্ময়-বালক তকমা লেগে যাওয়া ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে পেতে অবশ্য ২০১৬ সালেই ফ্ল্যামেঙ্গোর সঙ্গে ৪ কোটি ৬০ লাখ ইউরোতে চুক্তি করে
রেখেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেই চুক্তি অনুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় কয়েক দিন আগে পাকাপাকিভাবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে চলে এসেছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। অবশ্য এখনই তাঁকে রিয়ালের মূল দলে দেখা যাবে না, আরও পরিণত হতে তাঁকে রাখা হয়েছে বয়সভিত্তিক দলে।
কেন এত আগ্রহ ব্রাজিলিয়ান এই ফুটবলারদের ঘিরে? তাঁদের বেশির ভাগই তরুণ ও প্রতিভাবান, এটা বড় কারণ। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে জুভেন্টাসে
যোগ দেওয়া ডগলাস কস্তা ছাড়া এই ৯ জন ব্রাজিলিয়ানের মধ্যে কারও বয়সই ২৫-এর বেশি নয়। গড় বয়স ২৩। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র তো সদ্য কৈশোর পেরিয়েছেন। বার্সেলোনার নতুন দুই ব্রাজিলিয়ান ম্যালকম ও আর্থার, এভারটনের রিচার্লিসনরা ২১-এ পা রেখেছেন মাত্র। লিভারপুলের ফাবিনহোর
বয়সও মাত্র ২৪।
আলিসন-কস্তারা তো রাশিয়া বিশ্বকাপের দলেই ছিলেন। তাঁদের তাই নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। ম্যালকম, আর্থার, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিচার্লিসনরা এখনো জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষায়। ওয়েস্ট হামের ২৫ বছর বয়সী উইঙ্গার ফিলিপে অ্যান্ডারসন ব্রাজিলের হয়ে খেলেছেন মাত্র একটি ম্যাচ, ফাবিনহো মাত্র চারটি। তবে নিজেদের সাবেক ক্লাবে সর্বশেষ কয়েকটা মৌসুম পারফর্ম করে হয়ে উঠেছেন দলবদল-বাজারের বড় আকর্ষণ।
যে কারণেই হয়তো বোর্দো থেকে ম্যালকমকে কিনতে বার্সেলোনা রীতিমতো মরিয়া হয়ে উঠেছিল। শেষ মুহূর্তে ৪ কোটি ১০ লাখ ইউরো দাম দিয়ে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারকে রোমার কাছ থেকে প্রায় ছিনতাই করে নিয়েছে লা লিগার চ্যাম্পিয়নরা। যে ঘটনায় রোমার সঙ্গে সম্পর্কটাই খারাপ হয়ে গেছে বার্সেলোনার।
দলবদলের বাজারে ব্রাজিলিয়ানদের নিয়ে এমন কাড়াকাড়ি দেখে হয়তো ভালোই লাগে তিতের। আরও চার বছরের জন্য ব্রাজিলের কোচ হিসেবে চুক্তি নবায়ন হয়েছে তাঁর। আগামী দিনের ব্রাজিল দল গড়তে এই খেলোয়াড়দের ওপর তো চোখ থাকবে তাঁরও।
রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় জানিয়ে তাঁর আবেগময় চিঠির কথা মনে আছে?
‘রিয়াল মাদ্রিদ আমার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।…আমি এ জার্সি ছেড়ে যাচ্ছি কিন্তু যেখানেই থাকি না কেন, এই ক্লাব ও সান্তিয়াগো বার্নাব্যু আমার অংশ হয়ে থাকবে’, চিঠিতে এমন সব আবেগময় কথাই লিখেছিলেন রোনালদো। কিন্তু কে জানত, জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরই তিনি সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবেন!
রোনালদো যা করেছেন, তা নিয়ে বেশ শোরগোলই পড়ে গেছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার পর যে ক্লাবে খেলে তিনি আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার, সেই রিয়াল মাদ্রিদকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘আনফলো’ করেছেন রোনালদো! ভুল পড়েননি। রোনালদো তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ‘আনফলো’ করেছেন রিয়ালকে। অর্থাৎ, ইনস্টাগ্রামে তিনি আর রিয়ালের অনুসারী নন।
ফুটবল পেশাদারির দুনিয়ায় ঠিকানা পাল্টানোই রীতি। রোনালদো সেই রীতি মেনেই রিয়াল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন জুভেন্টাসে। তার আগে রিয়ালের হয়ে গড়েছেন অজস্র রেকর্ড—ক্লাবটির হয়ে সর্বোচ্চ গোল (৪৫১), লা লিগায় সর্বোচ্চ গোল (৩১১), চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোল (১০৫) আর চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও জিতেছেন রোনালদো। ‘হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া’ সেই ক্লাবের অনুসারী তালিকা থেকে রোনালদো কিনা নিজেকে সরিয়ে নিলেন!
এমন তো নয়, জুভেন্টাসকে অনুসরণ করলে অন্য কোনো ক্লাবকে অনুসরণ করা যাবে না। সাধারণত তারকা জুটির মধ্যে দেখা যায় এই প্রবণতা। সম্পর্ক ছিন্ন হলে তারকাদের অনেকেই প্রথম যে কাজটা করেন, সামাজিক মাধ্যম থেকে একে অন্যকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। রোনালদো এত দ্রুত রিয়ালকে আনফলো কেন করলেন, এ নিয়ে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
পেশাদারির পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে রোনালদো এখন জুভেন্টাসের অনুসারী। ইনস্টাগ্রামে তিনি এখন ইতালিয়ান ক্লাবটির ‘ফলোয়ার’। তবে রিয়ালের সাবেক সতীর্থদের ‘আনফলো’ করেননি পর্তুগিজ তারকা। এ ছাড়াও সাবেক দুই কোচ কার্লো আনচেলত্তি আর জিনেদিন জিদানকেও তিনি অনুসরণ করছেন ইনস্টাগ্রামে। রিয়ালে তাঁর শেষটা কি তবে মনমতো হয়নি? তবে কি রিয়ালের কর্তাব্যক্তিদের ওপর রোনালদো আসলেই নাখোশ? যে গুঞ্জন শোনা গেছে এত দিন!
সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহার যথাক্রমে নয় ও ছয় শতাংশ কার্যকর সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কত কমবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৮ আগস্ট অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ৯ আগস্ট থেকে ব্যাংকের নয়-ছয় সুদহার কার্যকর করা হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কার্যালয়ে অংশীজনদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকঋণের সুদহার কমানোর আশ্বাস দিয়ে সরকার থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিলেও সুদহার কমায়নি বেশির ভাগ ব্যাংক। গত ১ জুলাই থেকে কয়েকটি ব্যাংক এক অঙ্কের সুদহার কার্যকরের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা হয়নি। সুদহার কমানোর ঘোষণায় সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। ফলে পুরো আর্থিক খাতে একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় এখন এসে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকেরা বলছেন, ছয় শতাংশ সুদে সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। আমানতের সুদহারের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার সমন্বয় করতে হবে। কারণ, বেশি সুদের আশায় ব্যাংকের আমানত ভেঙে অনেকে সঞ্চয়পত্র কিনছে, ফলে টান পড়ছে আমানতে।
গতকালের সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, দেশে কোনো তারল্য-সংকট নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখার বিধান করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনেক সুবিধা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, আমানতের সুদহার ছয় শতাংশের বেশি হবে না। ঋণের সুদহার নয় শতাংশ করতেই হবে। সেখানে কিছু ব্যাংকের আপত্তি আছে, বিশেষ করে ভোক্তা ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে।
মুহিত আরও বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের সুদহার আমরা পর্যালোচনা করব। সঞ্চয়পত্রের সুদহার মাঝে মাঝে পর্যালোচনা করি। কোনো সময় দুই বছর, তিন বছর, আবার বছরেও হতে পারে। বাজারের সুদহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হলেই পর্যালোচনা করা হয়। এ নিয়ে আমরা ৮ আগস্ট সিদ্ধান্ত নেব। ৯ আগস্ট থেকে নতুন সুদহার কার্যকর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এটা করেছি। ৯ আগস্টের পর কেউ না মানলে আপনারা (সাংবাদিকেরা) রিপোর্ট করতে পারেন।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিছু ব্যাংক ইতিমধ্যে নতুন সুদহার কার্যকর করেছে। ৯ আগস্ট থেকে সবাই করবে। আজকের সভায় সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যান ছিলেন। সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার সহযোগিতা দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংক পাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশ পেয়ে গেছে।’
ইআরডিতে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এবিবির চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘১ জুলাই থেকে আমরা নতুন সুদহার বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে আমরাও ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে চাই। আমানতের সুদহারের বিষয়টা অর্থমন্ত্রী দেখছেন। আমানতের প্রভাবই পড়ছে ঋণের সুদে। আড়াই লাখ কোটি টাকা সরকারি আমানত আছে। এ আমানত পেলেই ঋণের সুদে প্রভাব পড়বে। আজকের সভায়, তা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক পরিচালকেরা চেয়েছিল, সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের টাকা ছয় শতাংশ সুদে বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করুক। তবে এ প্রস্তাব বাস্তবসম্মত না হওয়ায় এতে রাজি হয়নি মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করে, ছয় শতাংশ সুদের সিদ্ধান্ত কার্যকরের বিষয়ে নির্দেশনা দেবে।
আর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১০ শতাংশের বেশি হওয়ায় তা কিছুটা কমানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে এ হার কতটা কমবে, তা ৮ আগস্ট বৈঠকে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
প্রথম আলো: আমরা জানি, সামিট গ্রুপ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশ ছেড়ে কেন বিদেশে চলে গেলেন?
মুহাম্মদ আজিজ খান: আমাদের সব ব্যবসা বাংলাদেশে। তাই বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছি, কথাটা ঠিক নয়। বরং বাংলাদেশের জন্যই বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য থাকে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। আমরাও বিদেশে আমাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছি দেশের ও আমাদের কোম্পানির সুনাম বৃদ্ধি করতে।
বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের জন্য কতটা আকর্ষণীয়, তা এখন আমরা সরাসরি তুলে ধরতে পারছি। এখানে একটি বিষয় আমি গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, আমরা সিঙ্গাপুরে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) হাত ধরে। তারা (আইএফসি) ওখানে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তারা মূলধন হিসেবে এ বিনিয়োগ করেছে। এর বাইরে কয়েক শ মিলিয়ন ডলারের ঋণও দিয়েছে আইএফসি। অর্থাৎ আইএফসির মতো প্রতিষ্ঠানের সরাসরি সহযোগিতায় আমরা সিঙ্গাপুরে গিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য, সিঙ্গাপুর থেকে অর্থ এনে বাংলাদেশে আরও বড় বড় কাজ করা।
প্রথম আলো: তার মানে আন্তর্জাতিক পরিসর থেকে আরও সহজে অর্থ সংগ্রহ করে তা দেশে বিনিয়োগের জন্য সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু করেছেন?
আজিজ খান: অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিও মূল উদ্দেশ্য। অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে সুনামের বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত। কিছুদিন আগে আমরা গাজীপুরে ৩০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র মাত্র ৯ মাসে নির্মাণ করেছি। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে মূলত বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের হাতে থাকায়।
পৃথিবীতে এত কম সময়ে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র আগে আর হয়নি। এ ছাড়া প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা ঘাটে ৫৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি হবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। আশা করছি, ২০২০ সাল নাগাদ এটি উৎপাদনে চলে আসবে। এ ছাড়া মাতারবাড়ীতে এলএনজিভিত্তিক ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৩০০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৩ লাখ ৬০ হাজার মিটার কিউব এলএনজি টার্মিনাল করার জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছি সরকারকে। ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে ৭ হাজার কোটি টাকার মূলধনের দরকার। বাকিটা ঋণ হিসেবে সংগ্রহ করা হবে। এত বড় বিনিয়োগ বাংলাদেশ থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
প্রথম আলো: তাহলে সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু করায় সহজে অর্থ সংগ্রহ করতে পারছেন?
আজিজ খান: আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সিঙ্গাপুর একটি ‘এএএ’ ঋণমানের দেশ। আর বাংলাদেশের ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’। তাই স্বাভাবিকভাবে সিঙ্গাপুর থেকে যখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা বলছি, তখন অনেক কম সুদে ও সহজ শর্তে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ ও মূলধন সংগ্রহ করতে পারছি। ঋণ বা মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোম্পানির সুনাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরুর পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোম্পানির সুনাম আরও বেড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সুনাম উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনামও বাড়বে।
প্রথম আলো: আমরা জেনেছি, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামে সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটিকে সেখানকার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিয়েছেন। তালিকাভুক্তির অগ্রগতি কতটুকু?
আজিজ খান: সিঙ্গাপুরের স্টক মার্কেট এসজিএক্স থেকে আমরা এরই মধ্যে ইটিএল (এনটাইটেলমেন্ট টু লিস্ট) পেয়ে গেছি। এখন যেকোনো সময় চাইলে আমরা এটিকে তালিকাভুক্ত করতে পারি। তবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে যে শুল্কযুদ্ধ চলছে, তাতে নতুন শেয়ারের প্রতি বাজারের লোকজন যথাযথ দৃষ্টি দিতে পারছেন না। তাই কৌশলগত কারণে আমরা কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছি।
প্রথম আলো: দেশে বড় বিনিয়োগ আনতে আপনারা বিদেশে কার্যক্রম শুরু করেছেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ স্থবিরতা কেন?
আজিজ খান: বিনিয়োগ বাড়ছে না, এ কথাটা ঠিক নয়। বিনিয়োগ বাড়ছে। আপনি যদি পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই। বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সবার আগে দরকার বাজার চাহিদা তৈরি করা। আমাদের এমন পণ্য তৈরি করতে হবে, যার দেশে ও বিদেশে চাহিদা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি মানসম্মত বিক্রয়যোগ্য পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ আসবেই। তার বড় প্রমাণ এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে হলে শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এটি করতে হলে মানসিকতা ও শিক্ষার মান উভয়ই উন্নত করতে হবে।
প্রথম আলো: আপনি বলছেন বিনিয়োগ বাড়ছে। কিন্তু তার সুফল কর্মসংস্থানে মিলছে না। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই এখন সবচেয়ে বেশি। একদিকে বিনিয়োগ বাড়ছে, অন্যদিকে বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। এটি কেন হচ্ছে?
আজিজ খান: কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, শিক্ষার মান ও সময়োপযোগী শিক্ষা। সময়োপযোগী শিক্ষায় আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে আছি। শিক্ষার সঙ্গে সময়ের তথা সমাজের প্রয়োজনীয়তার সংযোগ ঘটাতে হবে। সেখানেই আমাদের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। আবার আমাদের সমাজব্যবস্থায় দক্ষতা ও অদক্ষতা ঘাটতিও প্রকট। এ কারণে শিল্পমালিকেরা একদিকে যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছেন না, অন্যদিকে শিক্ষিতরা তাঁদের পছন্দের চাকরি পাচ্ছেন না। আমি মনে করি, বাংলাদেশে শিল্পসংক্রান্ত পড়ালেখা বাড়াতে হবে।
প্রথম আলো: দেশের বর্তমান বাস্তবতায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কী কী বলে মনে করছেন আপনি?
আজিজ খান: বাংলাদেশ প্রতিদিনই বিনিয়োগবান্ধব হচ্ছে। তা সত্ত্বেও ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত অনেক আইনকানুন, বিধিবিধান এখনো সময়োপযোগী ও ব্যবসাবান্ধব হয়নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে আইনকানুনেরও ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সরকার বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু সঞ্চালন ও বিতরণে সুযোগ দেওয়া হয়নি, যে কারণে একধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আবার এলএনজি ব্যবসার ক্ষেত্রে সময়োপযোগী কোনো আইন নেই। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি একটি সমস্যা।
প্রথম আলো: অনেক উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি বলে থাকেন, সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলে এ দেশে ভালোভাবে ব্যবসা করা যায় না। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
আজিজ খান: বিশ্বে এমন কোনো দেশ কি আছে, যেখানে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রেখে ভালোভাবে ব্যবসা করে বড় হওয়া যায়? গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত যেকোনো সরকার গঠিত হয় জনগণের পছন্দে। কাজেই সেই সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা যেকোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির উচিত। আর আমি একজন দায়িত্বশীল ব্যবসায়ী হিসেবে সরকারের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছি। বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে কাজ করতে হলে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছাড়া সেটি হবে না।
প্রথম আলো: আমরা দেখছি কিছুদিন পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তাতে জীবনযাত্রা ও শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
আজিজ খান: বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিদ্যুতের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বল্পতা রয়েছে। এ কারণে এলএনজি ও ভারী জ্বালানি তেল (হেভি ফুয়েল অয়েল বা এইচএফও) আমদানি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব জ্বালানির দামের ওপর। তবে আমি মনে করি, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটি মাথাপিছু জিডিপির ভিত্তিতে করা দরকার। তাতে যদি এ খাতে সরকারকে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি দেওয়া উচিত। দেশের মাথাপিছু আয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিদ্যুতের দামও বাড়বে বলে আমি মনে করি।
প্রথম আলো: এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেন কুইক রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এ বক্তব্যের সঙ্গে কি আপনি একমত?
আজিজ খান: এখানে প্রথমত আমি বলতে চাই, কুইক রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নামকরণটিই ভুল। এগুলোর নাম হওয়া দরকার ছিল পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট। অর্থাৎ পিক আওয়ারে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত সময়টাতে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময়টাতে ভারী জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উত্তম সমাধান। অন্য সময়ের জন্য গ্যাসচালিত কম্বাইন্ড সাইকেল ও বেইজড লোড বিদ্যুৎকেন্দ্র ভালো সমাধান। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বর্তমানে মেরিট অর্ডার ডিসপোস ভিত্তিতে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহব্যবস্থা পরিচালনা করছে। তাই কুইক রেন্টালের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, বিষয়টি পুরোপুরি ঠিক নয়।
প্রথম আলো: দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন। সামিট গ্রুপকে ঘিরে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আজিজ খান: যেকোনো বড় পরিকল্পনার জন্য বড় ভিত হচ্ছে বড় মন নিয়ে বড় চিন্তা করা। বর্তমানে আমার চেষ্টা নিজের চিন্তাকে বড় করার পাশাপাশি আমার সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁদের চিন্তার জগৎটাকেও বড় করে তোলা। আমি বিশ্বাস করি, আমার সহকর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের কর্মদক্ষতা রয়েছে। এ কারণে আমরা আন্তর্জাতিক পরিসরে যাত্রা শুরু করতে পেরেছি। এ ছাড়া দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বপ্নও বড় হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক যে অগ্রগতি, তা সত্যিই গর্ব করার মতো। তাই ব্যবসার পরিকল্পনা ও আর্থিক সামর্থ্য মিলিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছি। ১০ বছর পর সেটিকে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করতে চাই। আর বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ, প্রতিটি ঘরে ফাইবার অপটিক সেবা এবং প্রত্যেক আমদানি-রপ্তানিকারককে সেরা বন্দর-সেবা দিতে পারি, সেটাই লক্ষ্য।
প্রথম আলো: বর্তমানে সামিট গ্রুপের কত ধরনের ব্যবসা রয়েছে? সিঙ্গাপুর ছাড়া দেশের বাইরে আর কোথায় আপনাদের ব্যবসা রয়েছে?
আজিজ খান: বিদ্যুৎ, ফাইবার অপটিক, বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসা, পোর্ট, এলএনজিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় আমাদের বিনিয়োগ রয়েছে। সিঙ্গাপুরের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পাটনায় আমরা দুটি ইনল্যান্ড ওয়াটার পোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি। আন্তর্জাতিক নিলামে অংশ নিয়ে আমরা এ কাজ পেয়েছি। আশা করছি, আগামী বছরের জুনে পশ্চিমবঙ্গে গার্ডেন রিচ টার্মিনাল চালু করা সম্ভব হবে। সেটি হলে বেনাপোল দিয়ে দ্রুতগতিতে ও কম খরচে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া সম্ভব হবে।
প্রথম আলো: আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী? কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?
আজিজ খান: আমি স্বপ্ন দেখি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তি ও ভালোবাসার বাংলাদেশের, যেখানে মানুষে মানুষে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক থাকবে। দেশের পিছিয়ে থাকা ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলে আনতে কাজ করতে চাই। এ জন্য আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে আমার ব্যক্তিগত অর্থে এক হাজার কোটি টাকার একটি ফাউন্ডেশন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শান্তি, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক তৈরিতে কাজ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে এ ফাউন্ডেশন থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
একনজরে সামিট গ্রুপ
যাত্রা শুরু ১৯৮৫ সালে
ব্যবসার ধরন: বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ফাইবার অপটিক, পোর্ট ইত্যাদি
বার্ষিক আয়ের পরিমাণ: প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা
মোট কর্মসংস্থান: ৩ হাজার
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত: ২টি কোম্পানি।
সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু: ২০১৬ সালের জুলাইয়ে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় একটি রেস্তোরাঁ থেকে ১১ শিশুকে উদ্ধার করেছে র্যাব। অভিযোগ রয়েছে, রেস্তোরাঁর মালিক এই শিশুদের আটকে রেখে তাঁর দোকানে কাজ করাতেন। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তিকেও আটক করা হয়।
শুক্রবার বিকেলে উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজারের এ ঘটনা ঘটে। র্যাব-৭ এই অভিযান চালায়। আটক দোকান মালিকের নাম কামাল উদ্দিন (৩২)। তিনি পোমরা ইউনিয়নের রোসাই পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, অভিযান পরিচালনাকালে ওই দোকানের ক্যাশবাক্সে দুটি প্যাকেটে চার শ পিচ ইয়াবা বড়িও পাওয়া যায়। কামাল দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনসহ শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ভবঘুরে ও টোকাই শ্রেণির পথশিশুদের দালালের মাধ্যমে স্বল্প টাকায় কিনে দোকানে জিম্মি করে কাজ করাতো। অভিযোগ রয়েছে, কামাল এসব শিশুদের খাবার ও পড়নের কাপড়চোপড় ঠিকমতো না দিয়ে বিনে টাকায় কাজ করাতো। পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও চালাতো।
র্যাব বলছে, এক শিশু পালিয়ে গিয়ে তার পরিচিত আরেক শিশুর অভিভাবককে বিষয়টি জানায়। আবদুর রহিম নামের ওই অভিভাবক ঢাকার টঙ্গী এলাকায় বসবাস করেন। পরে তিনি টঙ্গী থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার একটি কপি নিয়ে রহিম চট্টগ্রামে র্যাব-৭ এর শরণাপন্ন হন।
শান্তিরহাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে জানান, ‘দোকানদার কামাল উদ্দিনের আচরণ ছিল রহস্যজনক। তিনি সারা রাত দোকান খোলা রেখে সকাল আটটায় বন্ধ করতেন। এরপর সন্ধ্যার পরে পুনরায় দোকান চালু করত।’ কামাল এসব শিশুদের ব্যবহার করে এলাকায় ইয়াবার ব্যবসা করত বলে তাদের অভিযোগ।
র্যাব-৭ এর গণমাধ্যম কর্মকর্তা সিনিয়র এএসপি মিমতানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযুক্ত কামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে দালালের মাধ্যমে শিশুদের দুই থেকে তিন হাজার টাকায় কিনে নেন। এরপর তাদের দোকানে রেখে অমানবিক পরিশ্রম করাতেন এবং তাদের ঠিকমতো খাবার ও কোনো টাকা দিত না।’
আদালতের সঙ্গে প্রতারণার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে। একটি শ্রমিক পরিবারের চার সদস্যকে শিল্পকারখানার মালিক সাজিয়ে ১০টি চেক প্রতারণার মামলা করেন এক ব্যক্তি। আটটি মামলায় ওই চারজনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। অন্য দুটি মামলা এখনো বিচারাধীন।
আদালতের রায় ঘোষণার পর ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে আসামির ইপিজেড থানাধীন নিউমুরিং এলাকার বাড়িতে যায়। তখন থেকে চারজনই পালিয়ে আছেন। কথিত আসামিরা হলেন রেজিয়া বেগম এবং তাঁর তিন সন্তান ফারহানা সুলতানা, সাবরিনা সুলতানা ও সৈয়দ আবদুল দায়ান।
আদালত সূত্র জানায়, জনৈক মো. মোরশেদ ২০১৫ সালের ১৫, ১৭ ও ২৩ সেপ্টেম্বর ১০টি চেক প্রত্যাখ্যাত (ডিজঅনার) হওয়ার মামলা করেন। এর মধ্যে ৯টি চেক ৩০ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং অন্যটি ৫০ লাখ টাকার চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মামলা। অথচ আসামিরা একটি শ্রমিক পরিবারের সদস্য। রেজিয়া বেগমের স্বামী আবদুল হাই চট্টগ্রাম বন্দরের মজুরিভিত্তিক শ্রমিক। তাঁর দৈনিক মজুরি ৩০০-৪০০ টাকা। রেজিয়ার এক মেয়ে স্নাতক পাস করেছেন। আরেক মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন। ছেলেটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলাগুলো করার সময় মোরশেদ চারজনকে সানরাইজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের মালিক দেখিয়েছেন। বাস্তবে এই কারখানার সঙ্গে আসামিদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
মামলায় বাদী মোরশেদের ঠিকানা দেওয়া আছে চান্দগাঁও থানাধীন বহদ্দারহাটের চেয়ারম্যানঘাটার রাফি ভিলা। আরেকটি মামলায় নগরের মতিয়ারপুলের কুমারী লেনের কদমতলী স্কুল গলি ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম আদালতে এ-সংক্রান্ত মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে পাঁচটি মামলার রায় দেন তৎকালীন চট্টগ্রামের যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ সপ্তম আদালতের বিচারক বেগম সালমা খাতুন। রায়ে প্রত্যেক আসামির আট মাস করে কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের চতুর্থ মহানগর যুগ্ম দায়রা জজ ফায়জুন্নেছা একই বছর একটি এবং ২০১৭ সালে দুটি মামলার রায় দেন। রায়ে প্রত্যেকের ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত রেজিয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ১০টি চেকের মামলার ব্যাপারে তাঁরা অন্ধকারে ছিলেন। তাঁরা দিনে এনে দিনে খান। তাঁদের কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। শ্রমিক পরিবারের সদস্য হয়ে শিল্পকারখানার মালিক হওয়ার খবরে তিনি বিস্মিত। বাদী মোরশেদ তাঁর ননদের ছেলে। পারিবারিক বিরোধ থেকে মোরশেদ এই প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারেন বলে তাঁর ধারণা।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, এসব মামলা ভুয়া। কথিত আসামির সঙ্গে চেকের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করে চারজনকে ফাঁসানো হয়েছে। বাদীর আইনজীবীদের খোঁজা হচ্ছে। এই আইনজীবীরাও ভুয়া বলে তাঁর ধারণা।
আসামিদের আইনজীবী মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘বাদী এমনভাবে কাগজপত্র বানিয়ে মামলাগুলো উপস্থাপন করেছেন, যা আদালতের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। কিন্তু একটি শ্রমিক পরিবার কীভাবে শিল্পকারখানার মালিক হলেন! পুরো বিষয়টি আদালতের কাছে আমরা তুলে ধরব।’
ব্যবহার হয় ব্র্যাক ব্যাংকের চেক
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাদী মোরশেদ ব্র্যাক ব্যাংক মোমিন রোড শাখার একটি হিসাবের ১০টি চেক ব্যবহার করেন। চেকগুলো সিবিএল-৪৬৯২১৬ থেকে সিবিএল-৪৬৯২২৫ ক্রমিক নম্বরের। চেকগুলো আসামি চারজনের নামে কি না, তা যাচাই করে জবাব দিতে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ চিঠি পাঠান আসামিদের আইনজীবী মো. আলী হাসান ফারুক। ব্যবস্থাপক চিঠির জবাব দিয়ে বলেন, ‘উল্লেখিত ব্যাংক হিসাব আপনার মক্কেলের (চার আসামি) নয়।’
আইনজীবী আলী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, চেক প্রত্যাখ্যাত মামলার বাদী মোরশেদ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ১০টি মামলা করেছিলেন। কিন্তু চেকগুলো আরেক ব্যক্তির নামে। ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে জানিয়েছে যে চার আসামির সঙ্গে ১০টি চেক বা ব্র্যাক ব্যাংকের ওই হিসাবের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে মোমিন রোড শাখার ব্র্যাক ব্যাংকে আবার যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে উল্লেখিত চেক চার আসামির নয় বলে নিশ্চিত করেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, কীভাবে চেকগুলো প্রতারণার কাজে ব্যবহার হয়েছে তা আদালত অনুসন্ধানের নির্দেশ দিলে ব্যাংক থেকে সব ধরনের তথ্য সরবরাহ করা হবে।
আসামিদের প্রক্সি
একে একে ১০ মামলা হওয়ার পর কথিত চার আসামি ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট আদালতে মহানগর হাকিম আদালতে হাজির ছিলেন বলে আদালতের নথি থেকে জানা গেছে। কিন্তু রেজিয়া বেগম ও তাঁর তিন সন্তান এ বিষয়ে তখন কিছুই জানতেন না। অর্থাৎ আসামির কাঠগড়ায় রেজিয়া বেগম ও তাঁর তিন সন্তান হয়ে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, তাঁরা বাদীর পরিচিত কেউ হতে পারেন। তাঁরাও প্রতারক চক্রের সদস্য বলে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইফতেখার সাইমুলের ধারণা।
রেজিয়া বেগম বলেন, কথিত মামলাগুলোয় সাজা হওয়ার পর পুলিশ পরোয়ানা নিয়ে তাঁদের বাড়িতে যায়। এখন দুই মেয়েসহ তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানান। বিচারাধীন দুটি মামলার আসামি তাঁর ছেলে দায়ান। তিনি জামিনে আছেন। কিন্তু অন্য আট মামলায় দায়ানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে।
রেজিয়া বেগমের স্বামী আবদুল হাই বাকপ্রতিবন্ধী। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের অস্থায়ী শ্রমিক। তাঁর উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল পরিবারটি।
বাদী যা বলেন
বাদী মো. মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে লেনদেন ছিল। তাঁরা (চারজন) আমাকে চেক দিয়েছেন। চেক প্রত্যাখ্যান হওয়ায় মামলা করেছি। আদালত সাজা দিয়েছেন। আসামিরা যদি মনে করেন তাঁরা ন্যায়বিচার পাননি তাহলে উচ্চ আদালতে যেতে পারেন।’
রেজিয়া বেগমের ভাই কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মোরশেদের জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি আপসের প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে পাঁচ মামলার ভুয়া জামিননামা বের করেন বাদী। আদালতে গিয়ে জানা যায়, ওই জামিননামা ভুয়া। তিনি আদালতের সঙ্গে যেভাবে প্রতারণা করেছেন, তাঁর কঠিন শাস্তি আমরা দেখতে চাই।’
বিএনপির তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠক আজ শুক্রবার দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে শুরু হয়েছে। দুই দিনের এই কর্মসূচির প্রথম দিন রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের তৃণমূলের নেতারা কথা বলছেন। সকালে বৈঠকটি শুরু হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আজকের অধিবেশনে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বৈঠকে প্রথম বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সারা দিন তৃণমূণ নেতাদের বক্তব্য শুনবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ নেতারা। এরপর দলের পক্ষ থেকে তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশেও দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল মঈন খান বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়া দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম, বেলাল আহমেদ প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত আছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেছেন, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, অপশাসন নিয়েও মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এই ক্ষোভেরও বিস্ফোরণ ঘটবে। এটা ঘটতে বাধ্য।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশের লেবার পার্টির (একাংশ) এক আলোচনা সভায় মওদুদ আহমদ এ কথা বলেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা বলেছে যে আমরা আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতে চাই না, আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ দেখতে চাই। নিরাপদ বাংলাদেশ মানে হলো আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ দেখতে চাই। এটা গণবিস্ফোরণের একটি অংশ।’
মওদুদ বলেন, জনবিস্ফোরণ ঘটার ক্ষেত্রে শুধু বিএনপি নয়, দেশের সব গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল, যারা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চায়, তারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবে এবং তার সঙ্গে দেশের সাধারণ মানুষও মাঠে নামবে। তিনি সরকারকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনবিস্ফোরণ হলে তখন সংলাপ করতে সরকার বাধ্য হবে। কারণ মানুষের ক্ষোভের যদি একবার বিস্ফোরণ ঘটে, সেই ক্ষোভ ঠেকানোর ক্ষমতা সরকারের থাকবে না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাধুবাদ জানিয়ে মওদুদ বলেন, ‘আজকে আমার গাড়িও থামিয়েছে একজন ইয়ং ছেলে, বয়স বড়জোর ১৭-১৮ বছর হবে। গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারকে বলেছে, আপনার গাড়ির কাগজ দেখান। তারপর আমার ড্রাইভার কাপড় থেকে কাগজ দেখাল। বলল, আপনার কাগজ ঠিক আছে, আপনি যান। তবে কাগজ ওখানে রাখবেন না। ব্লুবুকের ভেতরে রাখবেন। এটা দেখে একদিকে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি, অন্যদিকে অনুপ্রাণিত হয়েছি, গর্বিত হয়েছি।’
মওদুদ আহমদ বলেন, এটা তো পুলিশের কাজ। তাদের এই কাজ কেন করতে হচ্ছে? এটাই প্রমাণ করে যে রাষ্ট্র পরিচালনায় এই সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এ সময় তিনি মিরপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘মিরপুরে যুবলীগ-ছাত্রলীগকে নামিয়ে দিয়েছেন রাস্তায়। ঠিক আগের মতো। কোটা আন্দোলনের সময়ে তাদের সমর্থন দিয়ে পরে যখন ব্যাক-ট্র্যাক করেছেন। আজকে আবার একই কাজ করছেন।’
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান, লেবার পার্টির নেতা আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
তোপের মুখে কথার সুর বদলালেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হেলসিঙ্কিতে মার্কিন গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সমর্থনের বদলে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন করায় ঘরে-বাইরে সমালোচিত হওয়ার পর ট্রাম্প জানালেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করে—এই কথা তিনি মানেন। পুতিনকে রেহাই দিয়ে যে বক্তব্য তিনি সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছিলেন, তাতে সঠিক শব্দ ব্যবহৃত হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে নিজের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক লিখিত বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তরগুলোর যে সিদ্ধান্ত, তা তিনি সঠিক বলে মনে করেন। তবে শুধু রাশিয়া নয়, এই কাজে আরও অনেকে যুক্ত থাকতে পারে। তিনি পুনরায় দাবি করেন, তবে এই নির্বাচনে তাঁর ক্যাম্পেইনের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো গোপন আঁতাত ছিল না, কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না। ট্রাম্প বলেন, হেলসিঙ্কিতে তিনি রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেনি বলে যে কথা বলেছিলেন, তাতে শব্দ ব্যবহারে ভুল ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বলতে চেয়েছিলাম, এই কাজ রাশিয়াও করতে পারে। আমার কথা থেকে “না” বাদ দিন, তাহলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।’
ট্রাম্পের এই ব্যাখ্যা খুব বেশি লোক যে বিশ্বাসযোগ্য বলে ভাবছে, তা মনে হয় না। একাধিক ভাষ্যকার বলেন, কথাটা ভুল হলে সে কথা স্বীকার করতে দেড় দিন লাগার কথা নয়। তা ছাড়া একবার নয়, একই সংবাদ সম্মেলনে তিনি একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থনের বদলে রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের অব্যবহিত পরে তিনি ফক্স নিউজের সঙ্গে দুটি সাক্ষাৎকার দেন, তাতে সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন।
সিনেটে ডেমোক্রেটিক নেতা সিনেটর চাক শুমার এক টুইটে ট্রাম্পের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ট্রাম্প যা বলেছেন, এখন তা বদলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাজটা করতে ২৪ ঘণ্টা দেরি হয়ে গেছে, কথাটা যেখানে বলার কথা ছিল, সেখানে না বলে এখন ভিন্ন জায়গায় বলছেন।
যে কাগজ দেখে ট্রাম্প তাঁর কথার ব্যাখ্যা করেন, তাতেও এক নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক ফটোসাংবাদিক সে কাগজের ক্লোজআপ ছবি তুলতে সক্ষম হন। তাতে দেখা যায়, ট্রাম্প নিজের হাতে যোগ করেছেন, ‘কোনো আঁতাত ছিল না।’ কাগজের অন্যত্র ট্রাম্প একটি বাক্য কেটে দেন, যেখানে লেখা ছিল, গত নির্বাচনে যারা হস্তক্ষেপের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার করা হবে।
ট্রাম্প নিজ বক্তব্যের নতুন ব্যাখ্যা দিলেও তাঁর দলের ভেতরেও এ নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল জানিয়েছেন, রুশ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সমর্থন করে কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। এই প্রশ্নে তাঁর দলের সদস্যদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের সরাসরি সমালোচনা না করে ম্যাককনেল রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দাদের সিদ্ধান্ত সঠিক, সে কথা উল্লেখ করে বলেন, কংগ্রেসে এমন অনেকে আছেন, যাঁরা মনে করেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাতে একই রকম কোনো ঘটনা না ঘটে, তার বিরুদ্ধে তিনি রাশিয়াকে সাবধান করে দেন।
এদিকে ট্রাম্পের বিতর্কিত বক্তব্যের পর তাঁর নিকট উপদেষ্টাদের ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছে। জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান ড্যান কোটস গত সোমবারই এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন। একাধিক সূত্র থেকে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের অনুমোদন ছাড়াই তিনি এই বিবৃতি প্রদান করেন। ভাবা হচ্ছে, হেলসিঙ্কি বিপর্যয়ের পর ড্যান কোটসই হবেন প্রথম পদত্যাগকারী ট্রাম্প কর্মকর্তা।
মস্কোতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হান্টসম্যানেরও পদত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে। ইউটার এই সাবেক গভর্নরকে তাঁর ভাইয়ের মালিকানাধীন সল্ট লেক ট্রিবিউন পত্রিকা অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে লিখেছে, ‘রাষ্ট্রদূত হান্টসম্যান, ট্রাম্প স্বাধীন কোনো প্রেসিডেন্ট নন, একজনের দাবার গুটি মাত্র। আপনি সেই দাবার গুটির হয়ে কাজ করছেন। এখন সময় এসেছে নিজ ঘরে ফিরে আসার।’ উল্লেখ্য, ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের আগে হান্টসম্যান জোর দিয়ে বলেছিলেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য পুতিনকে সরাসরি প্রশ্ন করতে হবে।
জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগোয়াকে নির্বাচনে জয়ী ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০টি প্রদেশের সব কটির ফল গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জানু-পিএফ পার্টির নানগাগোয়া জয়ী হয়েছেন। বিরোধী দলের নেতা নেলসন চামিসা পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করার পর নির্বাচন কমিশনের মঞ্চ থেকে বিরোধী দলের কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
সোমবার জিম্বাবুয়েতে সাধারণ নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়। একই দিন পার্লামেন্টারি ও স্থানীয় নির্বাচনেরও ভোট নেওয়া হয়। বুধবার আংশিক ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, বেশির ভাগ আসনে জয়ী ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ। ১১০টি আসনে শাসক দল জানু-পিএফ ও ৪১টিতে এমডিসি জোট জয় পায়। জিম্বাবুয়ের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে মোট ২১০টি আসন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে মোট ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি পেতে হয়।
বুধবার নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করার কথা ছিল। বিরোধী দলের দাবি, চামিসা জয় পাওয়ায় কমিশন ফল প্রকাশে দেরি করে।
নির্বাচিত ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট নানগাগোয়া দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পেরে তিনি সম্মানবোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে দ্বিমত থাকলেও স্বপ্ন পূরণে আমরা এক। এটা নতুনভাবে শুরু। সবার জন্য নতুন জিম্বাবুয়ে গড়ে তুলতে আসুন আমরা শান্তি, একতা ও ভালোবাসায় একসঙ্গে হাতে হাত মিলাই।’
আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগে নির্বাচনে জয় পেয়েছেন বলে দাবি করেন চামিসা। গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি ‘ফল জালিয়াতির চেষ্টা করছে’ এবং তাঁরা ‘এটা হতে দেবেন না’।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, কোনো কারচুপি হয়নি।
গত নভেম্বরে সামরিক বাহিনীর চাপে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। ৯৪ বছর বয়স্ক মুগাবে প্রায় ৩৭ বছর দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। নানগাগোয়া একসময় রবার্ট মুগাবের মিত্র ছিলেন। তবে এখন তাঁরা পরস্পরের চরম শত্রু।
গত বছর পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়ে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতা দখল করেন দেশটির জেনারেলরা। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় রবার্ট মুগাবে তাঁর স্ত্রী গ্রেসকে ক্ষমতায় বসাতে চেয়েছিলেন।
ভোট কারচুপির অভিযোগে রাজধানী হারারেতে বুধবার বিরোধী দলের বিক্ষোভে জিম্বাবুয়ের পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা সরকারবিরোধী মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানায় স্থানীয় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বেশ কজন। সহিংসতার ঘটনায় গতকাল হারারে ভুতুড়ে নগরে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। একই সঙ্গে বহিরাগতদের দ্বারা বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছে তারা। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের একটি দল শাহবাগে এসে তাদের সঙ্গে সংহতি জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, আজ সকাল নয়টার পর থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও সেন্ট্রাল উইমেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হয়। তারা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে থাকে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে আসা শাহবাগ মোড়ের যানবাহনগুলোর কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে থাকে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি দল সেখানে আসে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এবং আন্দোলনকারীদের কোনো বহিরাগতদের দ্বারা বিভ্রান্ত না হতে পরামর্শ দেয়।সদ্য নির্বাচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি দল শাহবাগে আসে।
দলের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসেছেন। তাঁরা আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তবে ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষার্থীদের কোনোভাবে ভিন্নপথে পরিচালিত না হওয়ার এবং বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের সে নির্দেশনাই দিয়েছেন।
সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের বোঝানোর জন্য। যাতে তারা মিস গাইডেড না হয়। ওরা যে রাস্তায় নেমেছে, এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো আক্ষেপ নেই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ওরা আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে।’
আগামীকাল রোববার থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করবে পুলিশ। এ সময় গাড়ির চালকের লাইসেন্স, ফিটনেসবিহীন গাড়িসহ ট্রাফিক আইনে যা যা করণীয় সব করা হবে। এ ক্ষেত্রে কোমলমতি শিশুরা সাহায্য করতে চাইলে তাদের স্বাগত। আন্দোলনরত শিশুরা পুলিশের নৈতিক ভিতকে জাগিয়ে তুলেছে।
আজ শনিবার রাজধানীর ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এ ঘোষণা দেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ট্রাফিক সপ্তাহে গার্লস গাইড ও বয়েজ স্কাউটের সহায়তা নেওয়া হবে। আমাদের কোমলমতি শিশু, তরুণেরা যা করেছে তাকে স্যালুট। তারা ট্রাফিক সপ্তাহে সহায়তা করতে চাইলে তাদের স্বাগতম। তারা পুলিশের নৈতিক ভিতকে জাগিয়ে তুলেছে, অনেক শক্তিশালী করেছে, চোখ কান খুলে দিয়েছে। তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে এখন তাদের ঘরে যাওয়া উচিত।
একটি পক্ষ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার নাশকতা চালাতে তৎপর উল্লেখ করে আছাদুজ্জামান বলেন, একটি পক্ষ চাইছে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে যেন সরকার বেকায়দায় পড়ে। কিন্তু আমাদের পুলিশ বাহিনী তা সফল হতে দেবে না। এ আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং নাশকতামূলক কিছু করতে স্কুল ড্রেস সরবরাহ করছে। অনেক বহিরাগত স্কুল পোশাকে ঢুকে পড়ছে। কিছু লোক আন্দোলনকারীদের রাস্তায় খাবার সরবরাহ করছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে, অন্যদের চেষ্টা চলছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনের জমায়েত আজকের মতো শেষ বলে ঘোষণা করেছে শাহবাগে অবস্থানরত বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে আবার একই দাবিতে শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
আজ শনিবার বিকেল সোয়া তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়। তারা জানায়, নয় দফা দাবি না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। নৌপরিবহনমন্ত্রীর পদত্যাগসহ তাদের সব দাবি মানতে হবে। দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এনে সঠিক, সুষ্ঠু ও সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। তারা বলছে, আন্দোলন চলাকালীন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হচ্ছে। এগুলোর দায়ভার কে নেবে, শিক্ষার্থীরা এমন প্রশ্ন তুলে ধরে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান সরকারি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সজল আলম গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘দাবি আদায়ে বিষয়ে আমরা আশ্বাসে বিশ্বাসী না। নয় দফার মধ্যে একটি হলো নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না। সরকার নয় দফা দাবি মেনে নিয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন করেনি। আমরা বাস্তবায়ন চাই।’
শাহবাগে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বলছে, ছাত্র আন্দোলনে পুলিশি হামলা বারবার চলতে থাকলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হবে। কারণ, এ অবস্থার জন্য তিনি দায়ী। এসব হামলার দায়ভার একমাত্র তাঁর।
শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন শেষে শাহবাগ মোড় থেকে চলে যায়। এরপর সেখানে আবারও যান চলাচল শুরু হয়।
আজ সকাল নয়টার পর থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হয়। তারা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে থাকে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন দিক থেকে আসা শাহবাগ মোড়ের যানবাহনগুলোর কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে থাকে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি দল সেখানে আসে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এবং আন্দোলনকারীদের কোনো বহিরাগতদের দ্বারা বিভ্রান্ত না হতে পরামর্শ দেয়।
সদ্য নির্বাচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি দল শাহবাগে আসে।
দলের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসেছেন। তাঁরা আন্দোলনকে সমর্থন করেন। তবে ছাত্রলীগের নেতারা শিক্ষার্থীদের কোনোভাবে ভিন্নপথে পরিচালিত এবং বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের সে নির্দেশনাই দিয়েছেন।
সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষার্থীদের বোঝানোর জন্য, যাতে তারা মিস গাইডেড না হয়। ওরা যে রাস্তায় নেমেছে, এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো আক্ষেপ নেই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। ওরা আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে।’
এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে শাহবাগে এক বিদেশির গাড়ি ঘিরে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। ঘটনাস্থলে থাকা প্রথম আলো প্রতিবেদক জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হলুদ নম্বরপ্লেটের একটি প্রাইভেট কার শাহবাগ মোড়ে আসে। দ্রুতগতির ওই গাড়িকে থামিয়ে শিক্ষার্থীরা লাইসেন্স দেখতে চায়। চালক তা না করে দ্রুতগতিতে মোড় পার হয়ে যাওয়ার সময় গাড়িটি এক শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেয়। শিক্ষার্থীরা দৌড়ে গাড়িটির পিছু নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় জাদুঘরের মাঝে থাকা পদচারী-সেতুর নিচে আটকে দেয়। তারা গাড়িটিকে ঘিরে বিক্ষোভ করতে থাকে। ওই সময় গাড়ির ভেতরে একজন বিদেশি নারীকে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর শাহবাগ থানা-পুলিশ এসে গাড়িটিকে থানায় নিয়ে যায়।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের গোলাবাড়ি গ্রাম। সেখানকার হাওর বিলাস হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকাযোগে ছুটলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের রউয়া বিলের দিকে। খানিকটা এগোনোর পর দেখলাম, একটি মাইজলা বক মাছের জন্য স্থির দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। দুর্লভ সেই বকটির ছবি তোলার সময় ওর প্রায় ১০ মিটার পেছনে তিনটি হাঁস ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ল। নৌকা কাছাকাছি যেতেই ওরা উড়ে গেল। আরেকটু পর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরও ১৫-২০টি হাঁসের দেখা মিলল।
রউয়া বিল থেকে চটাইন্না খাল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমের চটাইন্না বিলে গিয়ে একটি কান্দায় (উঁচু জায়গা) নামলাম। এটি পার হয়ে সামনে যেতেই হঠাৎ রউয়া বিলে দেখা সেই হাঁসের বিশাল একটি ঝাঁক উড়াল দিল।
টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা হাঁসগুলো পরিযায়ী পাখি নাইরলি হাঁস। জিরিয়া হাঁস, ইটাপেরি হাঁস বা গাঙ রৈব নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম গারগেনি (Garganey) বা ব্লু-উইঙ্গড টিল (Blue-winged Teal)।
নাইরলি হাঁসের গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। প্রজননকালে হাঁসা, হাঁসির পালকের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। হাঁসার গাঢ় বাদামি মাথার চাঁদি হয় কালো। চোখের ওপর থাকে সাদা চওড়া ভ্রুরেখা। মুখ ও ঘাড়-গলা হয় গাঢ় বাদামি। পিঠ, পেটের নিম্নাংশ ও লেজের তলা বাদামি এবং তাতে থাকে কালো কালো বুটি। সাদাটে পেটের দুপাশে ছোট ছোট রুপালি দাগ। ডানার ওপরটা ধূসর।
হাঁসির পালক বাদামি ও তাতে গাঢ় বুটির মতো থাকে। কিন্তু ভ্রুরেখা অস্পষ্ট। হাঁসা-হাঁসি নির্বিশেষে চোখ ঘন বাদামি ও চঞ্চু কালচে-বাদামি। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় হাঁসা ও হাঁসি দেখতে একই রকম, শুধু ডানার পালকে কিছুটা পার্থক্য থাকে।
নাইরলি হাঁস বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। মাঝারি থেকে বড় দলে বিচরণ করে। জলজ উদ্ভিদের বিচি, পাতা প্রিয় খাবার। তবে কদাচিৎ কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট এবং খোলকি প্রাণী, যেমন চিংড়ি ও কাঁকড়া ইত্যাদি খায়।
নাইরলি হাঁসের প্রজননকাল এপ্রিল-মে। এ সময় এরা মূল আবাস ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে মাটিতে তৃণলতার ওপর বাসা বানায়। হালকা পীতাভ রঙের ৮-১২টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২১-২৩ দিনে। বাচ্চাদের পালক গজায় ৩৫-৪৯ দিনে। এরপর নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে তারা। এদের আয়ুষ্কাল ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর।
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকার পাশে শিল্প-কারখানা স্থাপন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক বিশেষ দূত জন এইচ নক্স।
গত মঙ্গলবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত ওই বনটি জাতিসংঘ ঘোষিত রামসার এলাকা বা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে তা শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনের জন্যই হুমকি না। এই বনে বসবাসকারী বেঙ্গল টাইগার, ডলফিন ও অন্যান্য বিপদাপন্ন বন্য প্রাণীর অস্তিত্বের জন্যও হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, শুধু বন্য প্রাণী নয়, সুন্দরবনের ওপরে নির্ভরশীল ৬৫ লাখ মানুষের জীবিকা, স্বাস্থ্য, বসতি, খাদ্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাও এর ওপরে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে ৩২০টি শিল্প-কারখানাকে অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের মতামত ও যথাযথ পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে না। সুন্দরবনের পাশে যেসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, তা আর সম্প্রসারণ না করার নির্দেশ সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব তথ্য জাতিসংঘের কাছে জমা দেব। আশা করি, তারা আমাদের তথ্যের সঙ্গে একমত হবে।’
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, গত বছর বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের সংবেদনশীল এলাকার (বাফার জোন) মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানার অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা অমান্য করে শিল্প-কারখানা অনুমোদনের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। পরিবেশের প্রতীক সুন্দরবনে এই বিশৃঙ্খল শিল্পায়ন বিশ্বের পরিবেশের জন্য হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে অল্প সময়ের অর্থনৈতিক স্বপ্নপূরণের চেষ্টা ‘ভুল জিনিসকে স্বর্ণ ভেবে পেছনে ছোটার মতো’। একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হবে না। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়ন পেতে হলে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে—পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। সুন্দরবনের পাশে এসব শিল্পায়নের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের কথা শুনতে হবে। তিনি বলেন, যেসব মানুষ ওই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের টেকসই উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ম্যানগ্রোভ বন বায়ু ও পানিকে বিশুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছে। যার সুবিধা বনের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সর্বত্র ম্যানগ্রোভ বন ছড়িয়ে পড়ুক—এটা আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এর বাইরেও সুন্দরবন আমাদের সবার সামনে দুটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে—তা হচ্ছে আমরা কি এমন উন্নয়নের দিকে যাব, যা মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলবে? নাকি আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে শিল্পায়নের দিকে এগোব। আমরা কি একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাই, নাকি একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি চাই?
জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের চারপাশের শিল্প-কারখানার ব্যাপারে যেসব আপত্তি তুলছিল, তার যৌক্তিকতা আবারও প্রমাণিত হলো। আমরা আবারও বলব, সরকার যাতে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে, চারপাশের সব শিল্প-কারখানার অনুমোদন বাতিল করে। নয়তো সুন্দরবন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে, আর এ জন্য এই সরকার দায়ী থাকবে।
ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটা দ্বীপ। বলা হয়, ওকিনাওয়ার লোকেরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বাঁচে বেশি দিন। ওখানে অনেক শতবর্ষী লোকের দেখা মেলে। মেয়েরা বাঁচে পুরুষদের চেয়ে বেশি দিন; তাদের গড় আয়ু প্রায় ৯০ বছর।
সেখানকার মানুষের হৃদ্রোগ খুব কম হয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই, ক্যানসারও খুব একটা হয় না। এসবের পেছনে আসলে রহস্যটা কী? জাপানের একদল গবেষক তা খুঁজেও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কারণটা আর কিছুই না; তাদের খাদ্যাভ্যাস। ওখানকার লোকেরা রোজ একটি গাছকে তাদের খাবারের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। গাছটা হলো বড় এলাচির গাছ। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম আলপিনিয়া জেরামবেট, পরিবার জিঞ্জিবারেসি। আদাগোত্রীয় গাছের পাতা ও শিকড় খাবারের সঙ্গে খায় না এমন একটি লোকও নাকি সেখানে নেই। আবার রোজ খায় না, তেমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ গাছকে যেমন তারা খাদ্য হিসেবে খায়, গাছের পাতা দিয়ে চা বানায়, তেমনি এ গাছ থেকে বানানো ওষুধও তারা খায়। এই খাদ্যাভ্যাসটাই তাদের দীর্ঘজীবনের মূল চাবিকাঠি।
এমন একটি গাছ আমাদের দেশেও আছে। সে গাছের দেখা পেলাম লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই গ্রামের বাসিন্দা আলম সরকারের বাড়িতে। উঁচু দুটি ঝোপে অনেকগুলো গাছ আকাশের দিকে পাতা মেলে যেন তাদের বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। আলম সরকার বললেন, ‘এটা এলাচিগাছ। তবে আমরা বাজার থেকে যে বিদেশি এলাচি কিনে খাই, ওটা সে জাতের এলাচিগাছ না। এই এলাচিগাছের শুকনো ফল আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করি।’
এ গাছের ফল বাজারের এলাচির চেয়ে অনেক বড়। সে জন্য আলম সরকার এ গাছের নাম দিয়েছেন বড় এলাচি। বইপত্রেও নাম পেলাম বড় এলাচি।
ঘন সবুজ পাতার ঝোপে গাছের ডাঁটির মাথায় পাকা শুকনো ফলের কিছু থোকা তখনো ঝুলে ছিল। কড়ে মার্বেল আকারের গোল ফলের রং শুকিয়ে হলদে বাদামি হয়ে গেছে। খোসা মচমচে ও সূক্ষ্ম পশমে আবৃত। একটা ফল ছিঁড়তেই আঙুলে কিছু শুঙ্গ বিঁধে গেল। কিন্তু আঙুলের চাপে ফলটা ভাঙতে ভুল করলাম না। ভাঙতেই খোসার ভেতরে পেলাম এলাচির মতো কালো বিচি। বিচি ও খোসার ঘ্রাণ এলাচির মতোই।
আলম সরকার জানালেন, প্রায় চার বছর আগে তিনি পাশের পশ্চিম আমবাড়ি গ্রামের শাহদাতের মেয়ের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের বাড়িতে এলাচিগাছ আছে, সে গাছে এলাচি ধরছে। গাছপাগল আলম সরকার সেই বাড়ি থেকে দুটি চারা সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতে লাগান। বছরের মাথায় তাতে ফল ধরে। দ্রুত গাছের গোড়া থেকে নতুন অনেক চারা গজাতে থাকে। একসময় বড় ঝোপ হয়ে যায়। মাঘ মাসে চমৎকার ফুল ফোটে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই। ক্ষুদ্র ঝিনুক আকৃতির সাদাটে রঙের ফুলের মধ্যে হলদে কমলা ছোপ। এ জন্যই কিনা জানি না, এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Shell ginger. ফুল থেকে ফল হয়।
প্রথমে কাঁচা ফলের রং থাকে পাতার মতোই সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হলুদ, পরে কমলা রং ধারণ করে। শেষে ধূসর বাদামি হয়ে যায়। একটা ছড়ায় ১০-১৫টা ফল ধরে। আষাঢ়-শ্রাবণে ফল পাকে। এলাচির গুঁড়ার মতোই রান্নায় ব্যবহার করেন তা।
হৃদ্রোগ, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদি সারাতে এটা এক ওস্তাদ গাছ। মাথাব্যথা হলে এর কাঁচা পাতা মাথায় বেঁধে রাখলে দ্রুত উপশম হয়। হজমেও সাহায্য করে এই এলাচি।
প্রেমের সূত্র ধরে এক তরুণীকে নিয়ে সারা দিন বেড়িয়ে রাতে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ওঠেন তাঁর কথিত প্রেমিক। সেখানে ওই প্রেমিকসহ তাঁর সহযোগীরা তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের রেলস্টেশন সড়কের একটি হোটেলে ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, কুলাউড়া পৌর শহরের মধ্য চাতলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সামী আহমদ (২২), শ্রীপুরের মো. আল আমিন (২৩), সিলেটের মোগলাবাজারের শাহান আহমদ (২২), হোটেলের ব্যবস্থাপক নির্মল বর্ধন (৩৫) ও হোটেলের কর্মচারী খোকন মিয়া (২০)।
পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামী সাভারের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে সহকর্মী তরুণীর (২০) সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শুক্রবার সামী ওই তরুণীকে বেড়ানোর কথা বলে সিলেটে নিয়ে যান। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বেড়িয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা ট্রেনে কুলাউড়ায় পৌঁছে ওই হোটেলে ওঠেন। রাতে সামীসহ তাঁর সহযোগী আল আমিন, শাহান ও সিলেটের মোগলাবাজারের কাশেম (২২) তরুণীকে ধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে কাশেম পালিয়ে যান।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, অভাবের তাড়নায় বছরখানেক আগে তিনি সাভারের পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে মামলা করবেন।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিনয় ভূষণ রায় শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া সামী, আল আমিন ও শাহান ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তরুণীকে রোববার হাসপাতালে পাঠানো হবে। হোটেলের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভাগ্যবদলের আশায় তাঁদের কেউ তিন মাস, কেউ ছয় মাস, কেউবা এক বছর আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব বেশি দিন লাগেনি তাঁদের। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন প্রায় এক হাজার নারী। এর মধ্যে ১-৬ জুন পর্যন্তই এসেছেন ৮২ নারী।
দেশে ফিরে সরকারের কোনো সংস্থাকে পাশে পাননি ওই নারীরা। এমনকি পরিবারেও ঠাঁই হচ্ছে না অনেকের। সামাজিকভাবেও হেয় হতে হচ্ছে তাঁদের। ফিরে আসা নারীদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন তাঁরা। সরকারের পক্ষে কেউ বিমানবন্দরে তাঁদের খোঁজ নিতে যায়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে কেন দেশে ফিরে আসার দায় রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আলাদাভাবে নারীশ্রমিকদের জন্য কোনো কার্যক্রম নেই। তাঁর দাবি, বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে তাঁদের কর্মীরা বিদেশফেরত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করছেন।
সরকারি এই কর্মকর্তা সৌদি আরবে নারীশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর দায় চাপালে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এর জন্য এককভাবে দায়ী নয়। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নারী গৃহকর্মীরা সৌদি আরবে গেছেন। এ ঘটনায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব-২ শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তির আগে কোনো নারী শ্রমিক ফেরত এলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে ওই দেশের মালিককে। আর শরীরে ইস্তিরির পোড়া দাগ, হাত-পা ভাঙাসহ শরীরে যতই প্রমাণ থাকুক, দূতাবাসগুলো এসব সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরছে না। এর আগেই ওই নারীকে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে নির্যাতনের বিষয়টি আর প্রমাণ করা যাচ্ছে না। অথচ সরকার এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। তিনি বলেন, বিদেশফেরত নারীদের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো কার্যক্রম নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা নারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত দুই সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে সচিবের নেতৃত্বে একাধিক সভা হয়েছে। ফেরত আসা নারীদের বিষয়ে সরকারের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বায়রা থেকে তদারক কমিটি গঠন, বিদেশে পাঠানো প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অভিবাসন খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরত আসা নারীদের শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের সমাজে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে শুধু সৌদি আরব নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো থেকেও যাঁরা ফেরত আসছেন, তাঁদের বিষয়েও সরকারকে ভাবতে হবে।
লেবানন থেকে প্রায় এক বছর আগে দেশে ফেরেন ২৫ বছর বয়সী এক নারী গৃহকর্মী। তাঁর কোলে ছিল ১ মাস ১০ দিন বয়সী শিশু। তিনি যেখানে কাজ করতেন, ওই বাসার গৃহকর্তা শিশুটির বাবা। এই নারী জানান, লেবাননে যাওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা তাঁকে যৌন নির্যাতন করতে থাকেন। ওই ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি এটি বিশ্বাস করেননি। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উল্টো মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাঁকে দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন কর্মসূচির (ওকাপ) নিরাপদ আবাসে। সেখানে টানা কয়েক মাস ছিলেন তিনি। সংস্থাটি চিকিৎসার পাশাপাশি এই নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি লেবানন থেকে প্রতি দুই মাস পরপর ২৪ হাজার করে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা নিতেন স্বামী। এই নারী বলেন, ‘স্বামীই আমারে বিদেশ পাঠাইছিল, এহন স্বামী তাকাইয়্যাও দেহে না। বাপ-ভাইও চেনে না। বিদেশি বাচ্চা দেইখ্যা অন্যরা হাসে।’
সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফেরত আসা এক নারী রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি গ্রামে ফিরেছেন। ওই নারীর ভাই টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানালেন, বিদেশ যাওয়ার আগেই স্বামী তাঁর বোনকে ফেলে চলে গেছেন। সৌদিতে নয় মাস কাজ করলেও ছয় মাসের টাকা দেশে পাঠাতে পেরেছিলেন। বোন কবে সুস্থ, স্বাভাবিক হবে ঠিক নেই। এখন কে তাঁর দায়িত্ব নেবে, তা ভেবে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।
বেসরকারি সংস্থা ওকাপের কর্মকর্তা (কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার) শাহীনূর আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশফেরত নারীদের অনেককেই পরিবার নিতে চাচ্ছে না, কখনোবা ওই নারী নিজেই যেতে চাইছেন না। অনেকে সন্তান নিয়ে ফিরেছেন। এ অবস্থায় সামাজিকভাবে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ নারী সৌদি আরবে গেছেন। আর ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ৭ লাখ নারী। এই তথ্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অভিবাসনবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার।
নারী গৃহকর্মীদের ফিরে আসার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরত আসা নারীরা সবাই সরকারের বৈধ পথে বিদেশ গিয়েছিলেন। বর্তমানে নারীদের ফেরত আসার সংখ্যাটা বেড়েছে, কিন্তু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তার ইঙ্গিত তো আগে থেকেই ছিল। কোনো নারীর পরিবার যদি এই নারীদের নিতে না চায়, সেই পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্বও নিতে হবে সরকারকেই। আর পরিবার অপারগ হলে দীর্ঘ মেয়াদে ওই নারীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ সরকারের এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে কোনো নীতি নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যৌক্তিক একটি আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন উদ্বিগ্ন হতে হয়। এই আন্দোলনে এই পর্যন্ত বারবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আজ শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।
আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক সহসভাপতির ছবি দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ধ্যার পর কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যায়। তখন তাদের বাস ভাঙচুরের উসকানি দেওয়া হয়।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক ঘৃণ্য মতলব নিয়ে আজকে এই আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এখন তারা স্কুলের কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেশ বিশৃঙ্খল করতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। যারা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।
ছাত্রছাত্রীদের সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের শুভবুদ্ধির অনেকেই বলেছেন সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমাদ, আবুল মকসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন ।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রী কাদের আরও বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাসের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন। ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে আন্ডারপাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেন্ডার ছাড়াই সেনাবাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ যেগুলো করতে হয়, সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয় যাতে করে কোনো জটিলতা না থাকে। দ্রুত কাজগুলো শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে করে আধুনিক ডাম্বল স্পিডব্রেকার করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে স্কুল–কলেজের সামনে ডাম্বলস্পিড ব্রেকার করা হবে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট বাতিলসহ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে কিছুটা দেরিও হতে পারে।
সরকার অনুপ্রবেশকারীদের কেন আইনের আওতায় আনছে না, এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের ভূমিকা অবলোকন করছি। আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে তাদের ছবিও পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংগ্রহ করছে। তাদের গতিবিধিগুলো আমরা রাজনৈতিকভাবেও দূর থেকে দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর নেওয়া যাবে না।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘পুলিশ নানা অপমান–অপদস্থ এবং হয়রানির শিকার হয়ে ধৈর্যের প্রয়াস দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক অপশক্তির মদদ যে আছে, সেটা আমরা কাছ থেকে লক্ষ করছি। আমরা ধৈর্য ধরছি। আমাদের বিশ্বাস কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’
শান্তির স্বার্থে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করে কাদের বলেন, ‘শিক্ষক-অভিভাবক তাদের আমি গতকালও অনুরোধ করেছি। শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি সবাই এই ব্যাপারে হাত বাড়াবে। আমরা তাদের আবার অনুরোধ করব। দয়া করে শান্তির স্বার্থে আমাদের এই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সবাই যদি সমন্বিতভাবে চেষ্টা করি, ভালোভাবে বোঝালে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ভবিষ্যতের কথা অনুধাবন করে ঘরে ফিরে যাবে বলে আমরা আশা করি।’
জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালু রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, পিয়ংইয়ং জাহাজ থেকে জাহাজে অবৈধ তেলজাতীয় পণ্য স্থানান্তর বৃদ্ধি করেছে এবং বিদেশে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এই গোপনীয় প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জমা দেয়।
উত্তর কোরিয়া এখনো প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেয়নি।
গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্ক ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান সত্ত্বেও পিয়ংইয়ং নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।
একজন অজ্ঞাতনামা মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের একটি সাইটে অব্যাহত কর্মতৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া এর পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলো বন্ধ করেনি এবং সাগরে জাহাজ থেকে জাহাজে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও কয়লা অবৈধ স্থানান্তর করছে।’
এতে আরও বলা হয়, লিবিয়া, সুদান ও ইয়েমেনর কাছে ‘পিয়ংইয়ং বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও হালকা অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।’
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন, উত্তর কোরিয়ার কার্যক্রম আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করেছে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের ব্যাপারে তিনি ‘আশাবাদী’।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, পিকআপটির চালকের আসনে ছিল কিশোর হেলপার (চালকের সহকারী)। সে মাদকসেবী; স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তও করছিল সে। পরে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সখীপুর-সাগরদিঘি সড়কের বেলতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া আফরিন (১৫)। সে উপজেলার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আটক হেলপারের নাম তানভীর হাসান (১৫)। তার বাড়ি একই উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিকেলের দিকে সাদিয়াকে দাফন করা হয়েছে।
নিহত ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় সাদিয়া তার ফুপুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে হেঁটে আসছিল। সকাল ১০টার দিকে বেলতলী বাজারে পৌঁছালে ওই পিকআপের ধাক্কায় তার মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।
আটক তানভীর প্রথম আলোকে বলে, সে কচুয়া থেকে কয়েকজন যুবককে তুলে উপজেলার কুতুবপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলতলী এলাকায় পৌঁছালে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে আসা ওই মেয়েটিকে পিকআপে থাকা যুবকেরা ‘হিপহিপ হুররে’ বলে উত্ত্যক্ত করে। এ সময় তানভীর নিজেও মেয়েটির পাশ দিয়ে পিকআপ চালায়। একসময় পিকআপের পেছনের অংশ সাদিয়ার মাথায় জোরে আঘাত করে। তানভীরের দাবি, ওই যুবকদের হইহুল্লোড় সে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে ওই যুবকদের চিনতে পারেনি।
কিন্তু পুলিশের দাবি, আটক তানভীর নিজেও একজন উত্ত্যক্তকারী ও মাদকসেবী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ওই পিকআপের মূল চালক লাবলু মিয়ার কাছ থেকে তানভীর পিকআপটি নিয়ে বের হয়।
এদিকে ঘটনার পরপর সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সখীপুর-সাগরদিঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে চার ঘণ্টা ওই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এলাকাবাসী গাড়ির আসল চালক ও মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
পরে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী সরকার ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন আলী আন্দোলনকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে বেলা দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে কাল শনিবার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানা গেছে।
ওসি এস এম তুহীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। গাড়ির চালকের সহকারী তানভীরকে থানায় রাখা হয়েছে। মূল চালক লাবলু মিয়া ও গাড়ির মালিক উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের রাজ্জাক বিপ্লবকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বান্দরবানে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে গতকাল শুক্রবার রাতে উজানীপাড়ার এক সাবেক কার্বারী (পাড়াপ্রধান) ও তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কার্বারীর আরেক আত্মীয়কে মারাত্মক আহত অবস্থায় সেনাসদস্যরা উদ্ধার করেছেন বলে সেনাবাহিনী রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন।
পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে উজানীপাড়ার সাবেক কার্বারী কে অং প্রু মারমার (৬০) বাড়ির ওপর নতুন কার্বারীর লোকজন হামলা চালায়। হামলায় সাবেক কার্বারী কে অং প্রু সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন। তাঁর ছেলে মং এচিং মারমাকে (৩২) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে সেনাসদস্যরা তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাড়ার নিচে জঙ্গলে খুঁজে পান। একজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম জানা যায়নি।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেছেন, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি উজানীপাড়ায় নতুন কার্বারী ও পুরোনো কার্বারীর মধ্যে গত বছর থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। গত বছর নতুন কার্বারীর আত্মীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুসিংমং মারমাকে হত্যা করা হয়। তাঁকে হত্যার অভিযোগে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলে কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর নতুন কার্বারীর সঙ্গে বিরোধ আবার চরম আকার ধারণ করে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, পাড়াটি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। লাশ উদ্ধারে তিনি পাড়ার দিকে যাচ্ছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, সেনাবাহিনী সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজানীপাড়া গেছে। সেখান থেকে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত আরেকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে। পাড়ার সাবেক ও বর্তমান কার্বারীর লোকজনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, তারা তো নিজের জন্য কিছু চায়নি। তাদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন নয়। তারা চেয়েছে নিরাপদ সড়ক।
বাসচাপায় নিহত দিয়া খানমের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে আজ শুক্রবার সকালে তাদের মহাখালীর বাড়িতে গিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এরশাদ। সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নানা মন্তব্যের সমালোচনা করেন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘শাজাহান খানের হাসি দেখে দুঃখ পেয়েছি। একটা ছেলে মারা গেছে, একটা মেয়ে মারা গেছে। তিনি হাসিমুখে ঘটনাকে তুলনা করছেন ভারতের দুর্ঘটনার সঙ্গে। এই যদি তাঁর প্রতিক্রিয়া, কী বলার আছে।’
সড়ক পরিবহন আইনকে আরও কঠোর করার দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকতে আমি মৃত্যুদণ্ডের আইন করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে আইনটি পরে বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু যারা সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে, তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘আমার ছেলে যদি আজকে গাড়িতে করে স্কুলে যেত, সর্বক্ষণ আমি চিন্তায় থাকতাম ছেলে বাসায় ফিরবে কি না। মৃত্যু দেখলে তো আমি আত্মহত্যা করতাম। মৃত ছেলের মুখ দেখতে চাই না আমি।’
সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহার যথাক্রমে নয় ও ছয় শতাংশ কার্যকর সরকারের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কত কমবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৮ আগস্ট অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ৯ আগস্ট থেকে ব্যাংকের নয়-ছয় সুদহার কার্যকর করা হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কার্যালয়ে অংশীজনদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাংকঋণের সুদহার কমানোর আশ্বাস দিয়ে সরকার থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিলেও সুদহার কমায়নি বেশির ভাগ ব্যাংক। গত ১ জুলাই থেকে কয়েকটি ব্যাংক এক অঙ্কের সুদহার কার্যকরের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা হয়নি। সুদহার কমানোর ঘোষণায় সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। ফলে পুরো আর্থিক খাতে একধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় এখন এসে বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকেরা বলছেন, ছয় শতাংশ সুদে সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে হবে। আমানতের সুদহারের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার সমন্বয় করতে হবে। কারণ, বেশি সুদের আশায় ব্যাংকের আমানত ভেঙে অনেকে সঞ্চয়পত্র কিনছে, ফলে টান পড়ছে আমানতে।
গতকালের সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, দেশে কোনো তারল্য-সংকট নেই। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখার বিধান করার ফলে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনেক সুবিধা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, আমানতের সুদহার ছয় শতাংশের বেশি হবে না। ঋণের সুদহার নয় শতাংশ করতেই হবে। সেখানে কিছু ব্যাংকের আপত্তি আছে, বিশেষ করে ভোক্তা ঋণ ও ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে।
মুহিত আরও বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের সুদহার আমরা পর্যালোচনা করব। সঞ্চয়পত্রের সুদহার মাঝে মাঝে পর্যালোচনা করি। কোনো সময় দুই বছর, তিন বছর, আবার বছরেও হতে পারে। বাজারের সুদহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য না হলেই পর্যালোচনা করা হয়। এ নিয়ে আমরা ৮ আগস্ট সিদ্ধান্ত নেব। ৯ আগস্ট থেকে নতুন সুদহার কার্যকর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এটা করেছি। ৯ আগস্টের পর কেউ না মানলে আপনারা (সাংবাদিকেরা) রিপোর্ট করতে পারেন।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিছু ব্যাংক ইতিমধ্যে নতুন সুদহার কার্যকর করেছে। ৯ আগস্ট থেকে সবাই করবে। আজকের সভায় সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যান ছিলেন। সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকার সহযোগিতা দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ আমানত বেসরকারি ব্যাংক পাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশ পেয়ে গেছে।’
ইআরডিতে অনুষ্ঠিত সভা শেষে এবিবির চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘১ জুলাই থেকে আমরা নতুন সুদহার বাস্তবায়ন শুরু করেছি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে আমরাও ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে চাই। আমানতের সুদহারের বিষয়টা অর্থমন্ত্রী দেখছেন। আমানতের প্রভাবই পড়ছে ঋণের সুদে। আড়াই লাখ কোটি টাকা সরকারি আমানত আছে। এ আমানত পেলেই ঋণের সুদে প্রভাব পড়বে। আজকের সভায়, তা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক পরিচালকেরা চেয়েছিল, সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের টাকা ছয় শতাংশ সুদে বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করুক। তবে এ প্রস্তাব বাস্তবসম্মত না হওয়ায় এতে রাজি হয়নি মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করে, ছয় শতাংশ সুদের সিদ্ধান্ত কার্যকরের বিষয়ে নির্দেশনা দেবে।
আর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১০ শতাংশের বেশি হওয়ায় তা কিছুটা কমানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে এ হার কতটা কমবে, তা ৮ আগস্ট বৈঠকে নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
প্রথম আলো: আমরা জানি, সামিট গ্রুপ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশ ছেড়ে কেন বিদেশে চলে গেলেন?
মুহাম্মদ আজিজ খান: আমাদের সব ব্যবসা বাংলাদেশে। তাই বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছি, কথাটা ঠিক নয়। বরং বাংলাদেশের জন্যই বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত পাঠানো হয়। এ ক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য থাকে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। আমরাও বিদেশে আমাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছি দেশের ও আমাদের কোম্পানির সুনাম বৃদ্ধি করতে।
বাংলাদেশ যে বিনিয়োগের জন্য কতটা আকর্ষণীয়, তা এখন আমরা সরাসরি তুলে ধরতে পারছি। এখানে একটি বিষয় আমি গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে চাই, আমরা সিঙ্গাপুরে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) হাত ধরে। তারা (আইএফসি) ওখানে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তারা মূলধন হিসেবে এ বিনিয়োগ করেছে। এর বাইরে কয়েক শ মিলিয়ন ডলারের ঋণও দিয়েছে আইএফসি। অর্থাৎ আইএফসির মতো প্রতিষ্ঠানের সরাসরি সহযোগিতায় আমরা সিঙ্গাপুরে গিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য, সিঙ্গাপুর থেকে অর্থ এনে বাংলাদেশে আরও বড় বড় কাজ করা।
প্রথম আলো: তার মানে আন্তর্জাতিক পরিসর থেকে আরও সহজে অর্থ সংগ্রহ করে তা দেশে বিনিয়োগের জন্য সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু করেছেন?
আজিজ খান: অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিও মূল উদ্দেশ্য। অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে সুনামের বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত। কিছুদিন আগে আমরা গাজীপুরে ৩০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র মাত্র ৯ মাসে নির্মাণ করেছি। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে মূলত বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অর্থ আমাদের হাতে থাকায়।
পৃথিবীতে এত কম সময়ে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র আগে আর হয়নি। এ ছাড়া প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা ঘাটে ৫৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র করার উদ্যোগ নিয়েছি। এটি হবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। আশা করছি, ২০২০ সাল নাগাদ এটি উৎপাদনে চলে আসবে। এ ছাড়া মাতারবাড়ীতে এলএনজিভিত্তিক ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৩০০ মেগাওয়াট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৩ লাখ ৬০ হাজার মিটার কিউব এলএনজি টার্মিনাল করার জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছি সরকারকে। ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের বিপরীতে ৭ হাজার কোটি টাকার মূলধনের দরকার। বাকিটা ঋণ হিসেবে সংগ্রহ করা হবে। এত বড় বিনিয়োগ বাংলাদেশ থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
প্রথম আলো: তাহলে সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু করায় সহজে অর্থ সংগ্রহ করতে পারছেন?
আজিজ খান: আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সিঙ্গাপুর একটি ‘এএএ’ ঋণমানের দেশ। আর বাংলাদেশের ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’। তাই স্বাভাবিকভাবে সিঙ্গাপুর থেকে যখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা বলছি, তখন অনেক কম সুদে ও সহজ শর্তে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ঋণ ও মূলধন সংগ্রহ করতে পারছি। ঋণ বা মূলধন সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোম্পানির সুনাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরুর পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোম্পানির সুনাম আরও বেড়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সুনাম উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আমার দায়িত্ব। পাশাপাশি এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সুনামও বাড়বে।
প্রথম আলো: আমরা জেনেছি, সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামে সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটিকে সেখানকার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নিয়েছেন। তালিকাভুক্তির অগ্রগতি কতটুকু?
আজিজ খান: সিঙ্গাপুরের স্টক মার্কেট এসজিএক্স থেকে আমরা এরই মধ্যে ইটিএল (এনটাইটেলমেন্ট টু লিস্ট) পেয়ে গেছি। এখন যেকোনো সময় চাইলে আমরা এটিকে তালিকাভুক্ত করতে পারি। তবে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে যে শুল্কযুদ্ধ চলছে, তাতে নতুন শেয়ারের প্রতি বাজারের লোকজন যথাযথ দৃষ্টি দিতে পারছেন না। তাই কৌশলগত কারণে আমরা কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছি।
প্রথম আলো: দেশে বড় বিনিয়োগ আনতে আপনারা বিদেশে কার্যক্রম শুরু করেছেন। আবার দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ স্থবিরতা কেন?
আজিজ খান: বিনিয়োগ বাড়ছে না, এ কথাটা ঠিক নয়। বিনিয়োগ বাড়ছে। আপনি যদি পার্শ্ববর্তী ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই। বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সবার আগে দরকার বাজার চাহিদা তৈরি করা। আমাদের এমন পণ্য তৈরি করতে হবে, যার দেশে ও বিদেশে চাহিদা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি মানসম্মত বিক্রয়যোগ্য পণ্য তৈরি করা সম্ভব হয়, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ আসবেই। তার বড় প্রমাণ এ দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নিতে হলে শ্রম উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। এটি করতে হলে মানসিকতা ও শিক্ষার মান উভয়ই উন্নত করতে হবে।
প্রথম আলো: আপনি বলছেন বিনিয়োগ বাড়ছে। কিন্তু তার সুফল কর্মসংস্থানে মিলছে না। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই এখন সবচেয়ে বেশি। একদিকে বিনিয়োগ বাড়ছে, অন্যদিকে বেকারের সংখ্যাও বাড়ছে। এটি কেন হচ্ছে?
আজিজ খান: কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, শিক্ষার মান ও সময়োপযোগী শিক্ষা। সময়োপযোগী শিক্ষায় আমরা সবচেয়ে পিছিয়ে আছি। শিক্ষার সঙ্গে সময়ের তথা সমাজের প্রয়োজনীয়তার সংযোগ ঘটাতে হবে। সেখানেই আমাদের বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। আবার আমাদের সমাজব্যবস্থায় দক্ষতা ও অদক্ষতা ঘাটতিও প্রকট। এ কারণে শিল্পমালিকেরা একদিকে যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছেন না, অন্যদিকে শিক্ষিতরা তাঁদের পছন্দের চাকরি পাচ্ছেন না। আমি মনে করি, বাংলাদেশে শিল্পসংক্রান্ত পড়ালেখা বাড়াতে হবে।
প্রথম আলো: দেশের বর্তমান বাস্তবতায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা কী কী বলে মনে করছেন আপনি?
আজিজ খান: বাংলাদেশ প্রতিদিনই বিনিয়োগবান্ধব হচ্ছে। তা সত্ত্বেও ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত অনেক আইনকানুন, বিধিবিধান এখনো সময়োপযোগী ও ব্যবসাবান্ধব হয়নি। আবার অনেক ক্ষেত্রে আইনকানুনেরও ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সরকার বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু সঞ্চালন ও বিতরণে সুযোগ দেওয়া হয়নি, যে কারণে একধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আবার এলএনজি ব্যবসার ক্ষেত্রে সময়োপযোগী কোনো আইন নেই। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি একটি সমস্যা।
প্রথম আলো: অনেক উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি বলে থাকেন, সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলে এ দেশে ভালোভাবে ব্যবসা করা যায় না। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
আজিজ খান: বিশ্বে এমন কোনো দেশ কি আছে, যেখানে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রেখে ভালোভাবে ব্যবসা করে বড় হওয়া যায়? গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত যেকোনো সরকার গঠিত হয় জনগণের পছন্দে। কাজেই সেই সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা যেকোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির উচিত। আর আমি একজন দায়িত্বশীল ব্যবসায়ী হিসেবে সরকারের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছি। বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে কাজ করতে হলে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছাড়া সেটি হবে না।
প্রথম আলো: আমরা দেখছি কিছুদিন পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। তাতে জীবনযাত্রা ও শিল্পে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
আজিজ খান: বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিদ্যুতের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের স্বল্পতা রয়েছে। এ কারণে এলএনজি ও ভারী জ্বালানি তেল (হেভি ফুয়েল অয়েল বা এইচএফও) আমদানি ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব জ্বালানির দামের ওপর। তবে আমি মনে করি, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির হিসাবটি মাথাপিছু জিডিপির ভিত্তিতে করা দরকার। তাতে যদি এ খাতে সরকারকে ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি দেওয়া উচিত। দেশের মাথাপিছু আয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিদ্যুতের দামও বাড়বে বলে আমি মনে করি।
প্রথম আলো: এ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেন কুইক রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। এ বক্তব্যের সঙ্গে কি আপনি একমত?
আজিজ খান: এখানে প্রথমত আমি বলতে চাই, কুইক রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নামকরণটিই ভুল। এগুলোর নাম হওয়া দরকার ছিল পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট। অর্থাৎ পিক আওয়ারে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত সময়টাতে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময়টাতে ভারী জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উত্তম সমাধান। অন্য সময়ের জন্য গ্যাসচালিত কম্বাইন্ড সাইকেল ও বেইজড লোড বিদ্যুৎকেন্দ্র ভালো সমাধান। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বর্তমানে মেরিট অর্ডার ডিসপোস ভিত্তিতে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহব্যবস্থা পরিচালনা করছে। তাই কুইক রেন্টালের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, বিষয়টি পুরোপুরি ঠিক নয়।
প্রথম আলো: দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন। সামিট গ্রুপকে ঘিরে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আজিজ খান: যেকোনো বড় পরিকল্পনার জন্য বড় ভিত হচ্ছে বড় মন নিয়ে বড় চিন্তা করা। বর্তমানে আমার চেষ্টা নিজের চিন্তাকে বড় করার পাশাপাশি আমার সঙ্গে যাঁরা আছেন, তাঁদের চিন্তার জগৎটাকেও বড় করে তোলা। আমি বিশ্বাস করি, আমার সহকর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের কর্মদক্ষতা রয়েছে। এ কারণে আমরা আন্তর্জাতিক পরিসরে যাত্রা শুরু করতে পেরেছি। এ ছাড়া দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমার স্বপ্নও বড় হচ্ছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক যে অগ্রগতি, তা সত্যিই গর্ব করার মতো। তাই ব্যবসার পরিকল্পনা ও আর্থিক সামর্থ্য মিলিয়ে ২৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছি। ১০ বছর পর সেটিকে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করতে চাই। আর বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ, প্রতিটি ঘরে ফাইবার অপটিক সেবা এবং প্রত্যেক আমদানি-রপ্তানিকারককে সেরা বন্দর-সেবা দিতে পারি, সেটাই লক্ষ্য।
প্রথম আলো: বর্তমানে সামিট গ্রুপের কত ধরনের ব্যবসা রয়েছে? সিঙ্গাপুর ছাড়া দেশের বাইরে আর কোথায় আপনাদের ব্যবসা রয়েছে?
আজিজ খান: বিদ্যুৎ, ফাইবার অপটিক, বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসা, পোর্ট, এলএনজিসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় আমাদের বিনিয়োগ রয়েছে। সিঙ্গাপুরের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও পাটনায় আমরা দুটি ইনল্যান্ড ওয়াটার পোর্ট পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি। আন্তর্জাতিক নিলামে অংশ নিয়ে আমরা এ কাজ পেয়েছি। আশা করছি, আগামী বছরের জুনে পশ্চিমবঙ্গে গার্ডেন রিচ টার্মিনাল চালু করা সম্ভব হবে। সেটি হলে বেনাপোল দিয়ে দ্রুতগতিতে ও কম খরচে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া সম্ভব হবে।
প্রথম আলো: আপনার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী? কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?
আজিজ খান: আমি স্বপ্ন দেখি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তি ও ভালোবাসার বাংলাদেশের, যেখানে মানুষে মানুষে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক থাকবে। দেশের পিছিয়ে থাকা ও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলে আনতে কাজ করতে চাই। এ জন্য আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে আমার ব্যক্তিগত অর্থে এক হাজার কোটি টাকার একটি ফাউন্ডেশন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শান্তি, সমতা ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক তৈরিতে কাজ করে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে এ ফাউন্ডেশন থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে।
একনজরে সামিট গ্রুপ
যাত্রা শুরু ১৯৮৫ সালে
ব্যবসার ধরন: বিদ্যুৎ-জ্বালানি, ফাইবার অপটিক, পোর্ট ইত্যাদি
বার্ষিক আয়ের পরিমাণ: প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা
মোট কর্মসংস্থান: ৩ হাজার
দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত: ২টি কোম্পানি।
সিঙ্গাপুরে কার্যক্রম শুরু: ২০১৬ সালের জুলাইয়ে।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের গোলাবাড়ি গ্রাম। সেখানকার হাওর বিলাস হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকাযোগে ছুটলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের রউয়া বিলের দিকে। খানিকটা এগোনোর পর দেখলাম, একটি মাইজলা বক মাছের জন্য স্থির দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। দুর্লভ সেই বকটির ছবি তোলার সময় ওর প্রায় ১০ মিটার পেছনে তিনটি হাঁস ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ল। নৌকা কাছাকাছি যেতেই ওরা উড়ে গেল। আরেকটু পর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরও ১৫-২০টি হাঁসের দেখা মিলল।
রউয়া বিল থেকে চটাইন্না খাল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমের চটাইন্না বিলে গিয়ে একটি কান্দায় (উঁচু জায়গা) নামলাম। এটি পার হয়ে সামনে যেতেই হঠাৎ রউয়া বিলে দেখা সেই হাঁসের বিশাল একটি ঝাঁক উড়াল দিল।
টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা হাঁসগুলো পরিযায়ী পাখি নাইরলি হাঁস। জিরিয়া হাঁস, ইটাপেরি হাঁস বা গাঙ রৈব নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম গারগেনি (Garganey) বা ব্লু-উইঙ্গড টিল (Blue-winged Teal)।
নাইরলি হাঁসের গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। প্রজননকালে হাঁসা, হাঁসির পালকের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। হাঁসার গাঢ় বাদামি মাথার চাঁদি হয় কালো। চোখের ওপর থাকে সাদা চওড়া ভ্রুরেখা। মুখ ও ঘাড়-গলা হয় গাঢ় বাদামি। পিঠ, পেটের নিম্নাংশ ও লেজের তলা বাদামি এবং তাতে থাকে কালো কালো বুটি। সাদাটে পেটের দুপাশে ছোট ছোট রুপালি দাগ। ডানার ওপরটা ধূসর।
হাঁসির পালক বাদামি ও তাতে গাঢ় বুটির মতো থাকে। কিন্তু ভ্রুরেখা অস্পষ্ট। হাঁসা-হাঁসি নির্বিশেষে চোখ ঘন বাদামি ও চঞ্চু কালচে-বাদামি। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় হাঁসা ও হাঁসি দেখতে একই রকম, শুধু ডানার পালকে কিছুটা পার্থক্য থাকে।
নাইরলি হাঁস বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। মাঝারি থেকে বড় দলে বিচরণ করে। জলজ উদ্ভিদের বিচি, পাতা প্রিয় খাবার। তবে কদাচিৎ কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট এবং খোলকি প্রাণী, যেমন চিংড়ি ও কাঁকড়া ইত্যাদি খায়।
নাইরলি হাঁসের প্রজননকাল এপ্রিল-মে। এ সময় এরা মূল আবাস ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে মাটিতে তৃণলতার ওপর বাসা বানায়। হালকা পীতাভ রঙের ৮-১২টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২১-২৩ দিনে। বাচ্চাদের পালক গজায় ৩৫-৪৯ দিনে। এরপর নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে তারা। এদের আয়ুষ্কাল ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর।
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকার পাশে শিল্প-কারখানা স্থাপন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক বিশেষ দূত জন এইচ নক্স।
গত মঙ্গলবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত ওই বনটি জাতিসংঘ ঘোষিত রামসার এলাকা বা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে তা শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনের জন্যই হুমকি না। এই বনে বসবাসকারী বেঙ্গল টাইগার, ডলফিন ও অন্যান্য বিপদাপন্ন বন্য প্রাণীর অস্তিত্বের জন্যও হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, শুধু বন্য প্রাণী নয়, সুন্দরবনের ওপরে নির্ভরশীল ৬৫ লাখ মানুষের জীবিকা, স্বাস্থ্য, বসতি, খাদ্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাও এর ওপরে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে ৩২০টি শিল্প-কারখানাকে অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের মতামত ও যথাযথ পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে না। সুন্দরবনের পাশে যেসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, তা আর সম্প্রসারণ না করার নির্দেশ সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব তথ্য জাতিসংঘের কাছে জমা দেব। আশা করি, তারা আমাদের তথ্যের সঙ্গে একমত হবে।’
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, গত বছর বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের সংবেদনশীল এলাকার (বাফার জোন) মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানার অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা অমান্য করে শিল্প-কারখানা অনুমোদনের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। পরিবেশের প্রতীক সুন্দরবনে এই বিশৃঙ্খল শিল্পায়ন বিশ্বের পরিবেশের জন্য হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে অল্প সময়ের অর্থনৈতিক স্বপ্নপূরণের চেষ্টা ‘ভুল জিনিসকে স্বর্ণ ভেবে পেছনে ছোটার মতো’। একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হবে না। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়ন পেতে হলে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে—পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। সুন্দরবনের পাশে এসব শিল্পায়নের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের কথা শুনতে হবে। তিনি বলেন, যেসব মানুষ ওই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের টেকসই উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ম্যানগ্রোভ বন বায়ু ও পানিকে বিশুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছে। যার সুবিধা বনের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সর্বত্র ম্যানগ্রোভ বন ছড়িয়ে পড়ুক—এটা আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এর বাইরেও সুন্দরবন আমাদের সবার সামনে দুটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে—তা হচ্ছে আমরা কি এমন উন্নয়নের দিকে যাব, যা মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলবে? নাকি আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে শিল্পায়নের দিকে এগোব। আমরা কি একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাই, নাকি একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি চাই?
জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের চারপাশের শিল্প-কারখানার ব্যাপারে যেসব আপত্তি তুলছিল, তার যৌক্তিকতা আবারও প্রমাণিত হলো। আমরা আবারও বলব, সরকার যাতে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে, চারপাশের সব শিল্প-কারখানার অনুমোদন বাতিল করে। নয়তো সুন্দরবন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে, আর এ জন্য এই সরকার দায়ী থাকবে।
ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটা দ্বীপ। বলা হয়, ওকিনাওয়ার লোকেরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বাঁচে বেশি দিন। ওখানে অনেক শতবর্ষী লোকের দেখা মেলে। মেয়েরা বাঁচে পুরুষদের চেয়ে বেশি দিন; তাদের গড় আয়ু প্রায় ৯০ বছর।
সেখানকার মানুষের হৃদ্রোগ খুব কম হয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই, ক্যানসারও খুব একটা হয় না। এসবের পেছনে আসলে রহস্যটা কী? জাপানের একদল গবেষক তা খুঁজেও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কারণটা আর কিছুই না; তাদের খাদ্যাভ্যাস। ওখানকার লোকেরা রোজ একটি গাছকে তাদের খাবারের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। গাছটা হলো বড় এলাচির গাছ। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম আলপিনিয়া জেরামবেট, পরিবার জিঞ্জিবারেসি। আদাগোত্রীয় গাছের পাতা ও শিকড় খাবারের সঙ্গে খায় না এমন একটি লোকও নাকি সেখানে নেই। আবার রোজ খায় না, তেমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ গাছকে যেমন তারা খাদ্য হিসেবে খায়, গাছের পাতা দিয়ে চা বানায়, তেমনি এ গাছ থেকে বানানো ওষুধও তারা খায়। এই খাদ্যাভ্যাসটাই তাদের দীর্ঘজীবনের মূল চাবিকাঠি।
এমন একটি গাছ আমাদের দেশেও আছে। সে গাছের দেখা পেলাম লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই গ্রামের বাসিন্দা আলম সরকারের বাড়িতে। উঁচু দুটি ঝোপে অনেকগুলো গাছ আকাশের দিকে পাতা মেলে যেন তাদের বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। আলম সরকার বললেন, ‘এটা এলাচিগাছ। তবে আমরা বাজার থেকে যে বিদেশি এলাচি কিনে খাই, ওটা সে জাতের এলাচিগাছ না। এই এলাচিগাছের শুকনো ফল আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করি।’
এ গাছের ফল বাজারের এলাচির চেয়ে অনেক বড়। সে জন্য আলম সরকার এ গাছের নাম দিয়েছেন বড় এলাচি। বইপত্রেও নাম পেলাম বড় এলাচি।
ঘন সবুজ পাতার ঝোপে গাছের ডাঁটির মাথায় পাকা শুকনো ফলের কিছু থোকা তখনো ঝুলে ছিল। কড়ে মার্বেল আকারের গোল ফলের রং শুকিয়ে হলদে বাদামি হয়ে গেছে। খোসা মচমচে ও সূক্ষ্ম পশমে আবৃত। একটা ফল ছিঁড়তেই আঙুলে কিছু শুঙ্গ বিঁধে গেল। কিন্তু আঙুলের চাপে ফলটা ভাঙতে ভুল করলাম না। ভাঙতেই খোসার ভেতরে পেলাম এলাচির মতো কালো বিচি। বিচি ও খোসার ঘ্রাণ এলাচির মতোই।
আলম সরকার জানালেন, প্রায় চার বছর আগে তিনি পাশের পশ্চিম আমবাড়ি গ্রামের শাহদাতের মেয়ের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের বাড়িতে এলাচিগাছ আছে, সে গাছে এলাচি ধরছে। গাছপাগল আলম সরকার সেই বাড়ি থেকে দুটি চারা সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতে লাগান। বছরের মাথায় তাতে ফল ধরে। দ্রুত গাছের গোড়া থেকে নতুন অনেক চারা গজাতে থাকে। একসময় বড় ঝোপ হয়ে যায়। মাঘ মাসে চমৎকার ফুল ফোটে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই। ক্ষুদ্র ঝিনুক আকৃতির সাদাটে রঙের ফুলের মধ্যে হলদে কমলা ছোপ। এ জন্যই কিনা জানি না, এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Shell ginger. ফুল থেকে ফল হয়।
প্রথমে কাঁচা ফলের রং থাকে পাতার মতোই সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হলুদ, পরে কমলা রং ধারণ করে। শেষে ধূসর বাদামি হয়ে যায়। একটা ছড়ায় ১০-১৫টা ফল ধরে। আষাঢ়-শ্রাবণে ফল পাকে। এলাচির গুঁড়ার মতোই রান্নায় ব্যবহার করেন তা।
হৃদ্রোগ, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদি সারাতে এটা এক ওস্তাদ গাছ। মাথাব্যথা হলে এর কাঁচা পাতা মাথায় বেঁধে রাখলে দ্রুত উপশম হয়। হজমেও সাহায্য করে এই এলাচি।
প্রেমের সূত্র ধরে এক তরুণীকে নিয়ে সারা দিন বেড়িয়ে রাতে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ওঠেন তাঁর কথিত প্রেমিক। সেখানে ওই প্রেমিকসহ তাঁর সহযোগীরা তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের রেলস্টেশন সড়কের একটি হোটেলে ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, কুলাউড়া পৌর শহরের মধ্য চাতলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সামী আহমদ (২২), শ্রীপুরের মো. আল আমিন (২৩), সিলেটের মোগলাবাজারের শাহান আহমদ (২২), হোটেলের ব্যবস্থাপক নির্মল বর্ধন (৩৫) ও হোটেলের কর্মচারী খোকন মিয়া (২০)।
পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামী সাভারের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে সহকর্মী তরুণীর (২০) সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শুক্রবার সামী ওই তরুণীকে বেড়ানোর কথা বলে সিলেটে নিয়ে যান। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বেড়িয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা ট্রেনে কুলাউড়ায় পৌঁছে ওই হোটেলে ওঠেন। রাতে সামীসহ তাঁর সহযোগী আল আমিন, শাহান ও সিলেটের মোগলাবাজারের কাশেম (২২) তরুণীকে ধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে কাশেম পালিয়ে যান।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, অভাবের তাড়নায় বছরখানেক আগে তিনি সাভারের পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে মামলা করবেন।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিনয় ভূষণ রায় শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া সামী, আল আমিন ও শাহান ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তরুণীকে রোববার হাসপাতালে পাঠানো হবে। হোটেলের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভাগ্যবদলের আশায় তাঁদের কেউ তিন মাস, কেউ ছয় মাস, কেউবা এক বছর আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব বেশি দিন লাগেনি তাঁদের। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন প্রায় এক হাজার নারী। এর মধ্যে ১-৬ জুন পর্যন্তই এসেছেন ৮২ নারী।
দেশে ফিরে সরকারের কোনো সংস্থাকে পাশে পাননি ওই নারীরা। এমনকি পরিবারেও ঠাঁই হচ্ছে না অনেকের। সামাজিকভাবেও হেয় হতে হচ্ছে তাঁদের। ফিরে আসা নারীদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন তাঁরা। সরকারের পক্ষে কেউ বিমানবন্দরে তাঁদের খোঁজ নিতে যায়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে কেন দেশে ফিরে আসার দায় রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আলাদাভাবে নারীশ্রমিকদের জন্য কোনো কার্যক্রম নেই। তাঁর দাবি, বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে তাঁদের কর্মীরা বিদেশফেরত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করছেন।
সরকারি এই কর্মকর্তা সৌদি আরবে নারীশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর দায় চাপালে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এর জন্য এককভাবে দায়ী নয়। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নারী গৃহকর্মীরা সৌদি আরবে গেছেন। এ ঘটনায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব-২ শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তির আগে কোনো নারী শ্রমিক ফেরত এলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে ওই দেশের মালিককে। আর শরীরে ইস্তিরির পোড়া দাগ, হাত-পা ভাঙাসহ শরীরে যতই প্রমাণ থাকুক, দূতাবাসগুলো এসব সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরছে না। এর আগেই ওই নারীকে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে নির্যাতনের বিষয়টি আর প্রমাণ করা যাচ্ছে না। অথচ সরকার এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। তিনি বলেন, বিদেশফেরত নারীদের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো কার্যক্রম নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা নারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত দুই সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে সচিবের নেতৃত্বে একাধিক সভা হয়েছে। ফেরত আসা নারীদের বিষয়ে সরকারের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বায়রা থেকে তদারক কমিটি গঠন, বিদেশে পাঠানো প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অভিবাসন খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরত আসা নারীদের শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের সমাজে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে শুধু সৌদি আরব নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো থেকেও যাঁরা ফেরত আসছেন, তাঁদের বিষয়েও সরকারকে ভাবতে হবে।
লেবানন থেকে প্রায় এক বছর আগে দেশে ফেরেন ২৫ বছর বয়সী এক নারী গৃহকর্মী। তাঁর কোলে ছিল ১ মাস ১০ দিন বয়সী শিশু। তিনি যেখানে কাজ করতেন, ওই বাসার গৃহকর্তা শিশুটির বাবা। এই নারী জানান, লেবাননে যাওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা তাঁকে যৌন নির্যাতন করতে থাকেন। ওই ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি এটি বিশ্বাস করেননি। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উল্টো মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাঁকে দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন কর্মসূচির (ওকাপ) নিরাপদ আবাসে। সেখানে টানা কয়েক মাস ছিলেন তিনি। সংস্থাটি চিকিৎসার পাশাপাশি এই নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি লেবানন থেকে প্রতি দুই মাস পরপর ২৪ হাজার করে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা নিতেন স্বামী। এই নারী বলেন, ‘স্বামীই আমারে বিদেশ পাঠাইছিল, এহন স্বামী তাকাইয়্যাও দেহে না। বাপ-ভাইও চেনে না। বিদেশি বাচ্চা দেইখ্যা অন্যরা হাসে।’
সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফেরত আসা এক নারী রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি গ্রামে ফিরেছেন। ওই নারীর ভাই টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানালেন, বিদেশ যাওয়ার আগেই স্বামী তাঁর বোনকে ফেলে চলে গেছেন। সৌদিতে নয় মাস কাজ করলেও ছয় মাসের টাকা দেশে পাঠাতে পেরেছিলেন। বোন কবে সুস্থ, স্বাভাবিক হবে ঠিক নেই। এখন কে তাঁর দায়িত্ব নেবে, তা ভেবে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।
বেসরকারি সংস্থা ওকাপের কর্মকর্তা (কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার) শাহীনূর আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশফেরত নারীদের অনেককেই পরিবার নিতে চাচ্ছে না, কখনোবা ওই নারী নিজেই যেতে চাইছেন না। অনেকে সন্তান নিয়ে ফিরেছেন। এ অবস্থায় সামাজিকভাবে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ নারী সৌদি আরবে গেছেন। আর ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ৭ লাখ নারী। এই তথ্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অভিবাসনবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার।
নারী গৃহকর্মীদের ফিরে আসার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরত আসা নারীরা সবাই সরকারের বৈধ পথে বিদেশ গিয়েছিলেন। বর্তমানে নারীদের ফেরত আসার সংখ্যাটা বেড়েছে, কিন্তু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তার ইঙ্গিত তো আগে থেকেই ছিল। কোনো নারীর পরিবার যদি এই নারীদের নিতে না চায়, সেই পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্বও নিতে হবে সরকারকেই। আর পরিবার অপারগ হলে দীর্ঘ মেয়াদে ওই নারীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ সরকারের এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে কোনো নীতি নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যৌক্তিক একটি আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন উদ্বিগ্ন হতে হয়। এই আন্দোলনে এই পর্যন্ত বারবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আজ শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।
আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক সহসভাপতির ছবি দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ধ্যার পর কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যায়। তখন তাদের বাস ভাঙচুরের উসকানি দেওয়া হয়।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক ঘৃণ্য মতলব নিয়ে আজকে এই আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এখন তারা স্কুলের কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেশ বিশৃঙ্খল করতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। যারা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।
ছাত্রছাত্রীদের সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের শুভবুদ্ধির অনেকেই বলেছেন সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমাদ, আবুল মকসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন ।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রী কাদের আরও বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাসের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন। ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে আন্ডারপাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেন্ডার ছাড়াই সেনাবাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ যেগুলো করতে হয়, সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয় যাতে করে কোনো জটিলতা না থাকে। দ্রুত কাজগুলো শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে করে আধুনিক ডাম্বল স্পিডব্রেকার করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে স্কুল–কলেজের সামনে ডাম্বলস্পিড ব্রেকার করা হবে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট বাতিলসহ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে কিছুটা দেরিও হতে পারে।
সরকার অনুপ্রবেশকারীদের কেন আইনের আওতায় আনছে না, এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের ভূমিকা অবলোকন করছি। আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে তাদের ছবিও পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংগ্রহ করছে। তাদের গতিবিধিগুলো আমরা রাজনৈতিকভাবেও দূর থেকে দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর নেওয়া যাবে না।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘পুলিশ নানা অপমান–অপদস্থ এবং হয়রানির শিকার হয়ে ধৈর্যের প্রয়াস দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক অপশক্তির মদদ যে আছে, সেটা আমরা কাছ থেকে লক্ষ করছি। আমরা ধৈর্য ধরছি। আমাদের বিশ্বাস কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’
শান্তির স্বার্থে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করে কাদের বলেন, ‘শিক্ষক-অভিভাবক তাদের আমি গতকালও অনুরোধ করেছি। শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি সবাই এই ব্যাপারে হাত বাড়াবে। আমরা তাদের আবার অনুরোধ করব। দয়া করে শান্তির স্বার্থে আমাদের এই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সবাই যদি সমন্বিতভাবে চেষ্টা করি, ভালোভাবে বোঝালে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ভবিষ্যতের কথা অনুধাবন করে ঘরে ফিরে যাবে বলে আমরা আশা করি।’
জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালু রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, পিয়ংইয়ং জাহাজ থেকে জাহাজে অবৈধ তেলজাতীয় পণ্য স্থানান্তর বৃদ্ধি করেছে এবং বিদেশে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এই গোপনীয় প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জমা দেয়।
উত্তর কোরিয়া এখনো প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেয়নি।
গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্ক ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান সত্ত্বেও পিয়ংইয়ং নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।
একজন অজ্ঞাতনামা মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের একটি সাইটে অব্যাহত কর্মতৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া এর পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলো বন্ধ করেনি এবং সাগরে জাহাজ থেকে জাহাজে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও কয়লা অবৈধ স্থানান্তর করছে।’
এতে আরও বলা হয়, লিবিয়া, সুদান ও ইয়েমেনর কাছে ‘পিয়ংইয়ং বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও হালকা অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।’
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন, উত্তর কোরিয়ার কার্যক্রম আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করেছে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের ব্যাপারে তিনি ‘আশাবাদী’।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, পিকআপটির চালকের আসনে ছিল কিশোর হেলপার (চালকের সহকারী)। সে মাদকসেবী; স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তও করছিল সে। পরে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সখীপুর-সাগরদিঘি সড়কের বেলতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া আফরিন (১৫)। সে উপজেলার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আটক হেলপারের নাম তানভীর হাসান (১৫)। তার বাড়ি একই উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিকেলের দিকে সাদিয়াকে দাফন করা হয়েছে।
নিহত ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় সাদিয়া তার ফুপুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে হেঁটে আসছিল। সকাল ১০টার দিকে বেলতলী বাজারে পৌঁছালে ওই পিকআপের ধাক্কায় তার মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।
আটক তানভীর প্রথম আলোকে বলে, সে কচুয়া থেকে কয়েকজন যুবককে তুলে উপজেলার কুতুবপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলতলী এলাকায় পৌঁছালে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে আসা ওই মেয়েটিকে পিকআপে থাকা যুবকেরা ‘হিপহিপ হুররে’ বলে উত্ত্যক্ত করে। এ সময় তানভীর নিজেও মেয়েটির পাশ দিয়ে পিকআপ চালায়। একসময় পিকআপের পেছনের অংশ সাদিয়ার মাথায় জোরে আঘাত করে। তানভীরের দাবি, ওই যুবকদের হইহুল্লোড় সে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে ওই যুবকদের চিনতে পারেনি।
কিন্তু পুলিশের দাবি, আটক তানভীর নিজেও একজন উত্ত্যক্তকারী ও মাদকসেবী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ওই পিকআপের মূল চালক লাবলু মিয়ার কাছ থেকে তানভীর পিকআপটি নিয়ে বের হয়।
এদিকে ঘটনার পরপর সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সখীপুর-সাগরদিঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে চার ঘণ্টা ওই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এলাকাবাসী গাড়ির আসল চালক ও মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
পরে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী সরকার ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন আলী আন্দোলনকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে বেলা দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে কাল শনিবার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানা গেছে।
ওসি এস এম তুহীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। গাড়ির চালকের সহকারী তানভীরকে থানায় রাখা হয়েছে। মূল চালক লাবলু মিয়া ও গাড়ির মালিক উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের রাজ্জাক বিপ্লবকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বান্দরবানে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে গতকাল শুক্রবার রাতে উজানীপাড়ার এক সাবেক কার্বারী (পাড়াপ্রধান) ও তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কার্বারীর আরেক আত্মীয়কে মারাত্মক আহত অবস্থায় সেনাসদস্যরা উদ্ধার করেছেন বলে সেনাবাহিনী রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন।
পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে উজানীপাড়ার সাবেক কার্বারী কে অং প্রু মারমার (৬০) বাড়ির ওপর নতুন কার্বারীর লোকজন হামলা চালায়। হামলায় সাবেক কার্বারী কে অং প্রু সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন। তাঁর ছেলে মং এচিং মারমাকে (৩২) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে সেনাসদস্যরা তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাড়ার নিচে জঙ্গলে খুঁজে পান। একজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম জানা যায়নি।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেছেন, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি উজানীপাড়ায় নতুন কার্বারী ও পুরোনো কার্বারীর মধ্যে গত বছর থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। গত বছর নতুন কার্বারীর আত্মীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুসিংমং মারমাকে হত্যা করা হয়। তাঁকে হত্যার অভিযোগে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলে কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর নতুন কার্বারীর সঙ্গে বিরোধ আবার চরম আকার ধারণ করে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, পাড়াটি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। লাশ উদ্ধারে তিনি পাড়ার দিকে যাচ্ছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, সেনাবাহিনী সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজানীপাড়া গেছে। সেখান থেকে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত আরেকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে। পাড়ার সাবেক ও বর্তমান কার্বারীর লোকজনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, তারা তো নিজের জন্য কিছু চায়নি। তাদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন নয়। তারা চেয়েছে নিরাপদ সড়ক।
বাসচাপায় নিহত দিয়া খানমের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে আজ শুক্রবার সকালে তাদের মহাখালীর বাড়িতে গিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এরশাদ। সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নানা মন্তব্যের সমালোচনা করেন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘শাজাহান খানের হাসি দেখে দুঃখ পেয়েছি। একটা ছেলে মারা গেছে, একটা মেয়ে মারা গেছে। তিনি হাসিমুখে ঘটনাকে তুলনা করছেন ভারতের দুর্ঘটনার সঙ্গে। এই যদি তাঁর প্রতিক্রিয়া, কী বলার আছে।’
সড়ক পরিবহন আইনকে আরও কঠোর করার দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকতে আমি মৃত্যুদণ্ডের আইন করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে আইনটি পরে বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু যারা সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে, তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘আমার ছেলে যদি আজকে গাড়িতে করে স্কুলে যেত, সর্বক্ষণ আমি চিন্তায় থাকতাম ছেলে বাসায় ফিরবে কি না। মৃত্যু দেখলে তো আমি আত্মহত্যা করতাম। মৃত ছেলের মুখ দেখতে চাই না আমি।’
তোপের মুখে কথার সুর বদলালেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হেলসিঙ্কিতে মার্কিন গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত সমর্থনের বদলে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সমর্থন করায় ঘরে-বাইরে সমালোচিত হওয়ার পর ট্রাম্প জানালেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করে—এই কথা তিনি মানেন। পুতিনকে রেহাই দিয়ে যে বক্তব্য তিনি সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছিলেন, তাতে সঠিক শব্দ ব্যবহৃত হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে নিজের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক লিখিত বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা দপ্তরগুলোর যে সিদ্ধান্ত, তা তিনি সঠিক বলে মনে করেন। তবে শুধু রাশিয়া নয়, এই কাজে আরও অনেকে যুক্ত থাকতে পারে। তিনি পুনরায় দাবি করেন, তবে এই নির্বাচনে তাঁর ক্যাম্পেইনের সঙ্গে রাশিয়ার কোনো গোপন আঁতাত ছিল না, কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না। ট্রাম্প বলেন, হেলসিঙ্কিতে তিনি রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেনি বলে যে কথা বলেছিলেন, তাতে শব্দ ব্যবহারে ভুল ছিল। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বলতে চেয়েছিলাম, এই কাজ রাশিয়াও করতে পারে। আমার কথা থেকে “না” বাদ দিন, তাহলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।’
ট্রাম্পের এই ব্যাখ্যা খুব বেশি লোক যে বিশ্বাসযোগ্য বলে ভাবছে, তা মনে হয় না। একাধিক ভাষ্যকার বলেন, কথাটা ভুল হলে সে কথা স্বীকার করতে দেড় দিন লাগার কথা নয়। তা ছাড়া একবার নয়, একই সংবাদ সম্মেলনে তিনি একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থনের বদলে রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনের অব্যবহিত পরে তিনি ফক্স নিউজের সঙ্গে দুটি সাক্ষাৎকার দেন, তাতে সেই একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন।
সিনেটে ডেমোক্রেটিক নেতা সিনেটর চাক শুমার এক টুইটে ট্রাম্পের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ট্রাম্প যা বলেছেন, এখন তা বদলানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাজটা করতে ২৪ ঘণ্টা দেরি হয়ে গেছে, কথাটা যেখানে বলার কথা ছিল, সেখানে না বলে এখন ভিন্ন জায়গায় বলছেন।
যে কাগজ দেখে ট্রাম্প তাঁর কথার ব্যাখ্যা করেন, তাতেও এক নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক ফটোসাংবাদিক সে কাগজের ক্লোজআপ ছবি তুলতে সক্ষম হন। তাতে দেখা যায়, ট্রাম্প নিজের হাতে যোগ করেছেন, ‘কোনো আঁতাত ছিল না।’ কাগজের অন্যত্র ট্রাম্প একটি বাক্য কেটে দেন, যেখানে লেখা ছিল, গত নির্বাচনে যারা হস্তক্ষেপের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার করা হবে।
ট্রাম্প নিজ বক্তব্যের নতুন ব্যাখ্যা দিলেও তাঁর দলের ভেতরেও এ নিয়ে সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। সিনেটে রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল জানিয়েছেন, রুশ হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সমর্থন করে কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে। এই প্রশ্নে তাঁর দলের সদস্যদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্পের সরাসরি সমালোচনা না করে ম্যাককনেল রুশ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দাদের সিদ্ধান্ত সঠিক, সে কথা উল্লেখ করে বলেন, কংগ্রেসে এমন অনেকে আছেন, যাঁরা মনে করেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছিল। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাতে একই রকম কোনো ঘটনা না ঘটে, তার বিরুদ্ধে তিনি রাশিয়াকে সাবধান করে দেন।
এদিকে ট্রাম্পের বিতর্কিত বক্তব্যের পর তাঁর নিকট উপদেষ্টাদের ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছে। জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান ড্যান কোটস গত সোমবারই এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন। একাধিক সূত্র থেকে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের অনুমোদন ছাড়াই তিনি এই বিবৃতি প্রদান করেন। ভাবা হচ্ছে, হেলসিঙ্কি বিপর্যয়ের পর ড্যান কোটসই হবেন প্রথম পদত্যাগকারী ট্রাম্প কর্মকর্তা।
মস্কোতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন হান্টসম্যানেরও পদত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে। ইউটার এই সাবেক গভর্নরকে তাঁর ভাইয়ের মালিকানাধীন সল্ট লেক ট্রিবিউন পত্রিকা অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে লিখেছে, ‘রাষ্ট্রদূত হান্টসম্যান, ট্রাম্প স্বাধীন কোনো প্রেসিডেন্ট নন, একজনের দাবার গুটি মাত্র। আপনি সেই দাবার গুটির হয়ে কাজ করছেন। এখন সময় এসেছে নিজ ঘরে ফিরে আসার।’ উল্লেখ্য, ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ বৈঠকের আগে হান্টসম্যান জোর দিয়ে বলেছিলেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য পুতিনকে সরাসরি প্রশ্ন করতে হবে।
জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগোয়াকে নির্বাচনে জয়ী ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০টি প্রদেশের সব কটির ফল গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জানু-পিএফ পার্টির নানগাগোয়া জয়ী হয়েছেন। বিরোধী দলের নেতা নেলসন চামিসা পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট।
বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করার পর নির্বাচন কমিশনের মঞ্চ থেকে বিরোধী দলের কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
সোমবার জিম্বাবুয়েতে সাধারণ নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়। একই দিন পার্লামেন্টারি ও স্থানীয় নির্বাচনেরও ভোট নেওয়া হয়। বুধবার আংশিক ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, বেশির ভাগ আসনে জয়ী ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ। ১১০টি আসনে শাসক দল জানু-পিএফ ও ৪১টিতে এমডিসি জোট জয় পায়। জিম্বাবুয়ের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে মোট ২১০টি আসন রয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে মোট ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি পেতে হয়।
বুধবার নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করার কথা ছিল। বিরোধী দলের দাবি, চামিসা জয় পাওয়ায় কমিশন ফল প্রকাশে দেরি করে।
নির্বাচিত ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট নানগাগোয়া দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পেরে তিনি সম্মানবোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে দ্বিমত থাকলেও স্বপ্ন পূরণে আমরা এক। এটা নতুনভাবে শুরু। সবার জন্য নতুন জিম্বাবুয়ে গড়ে তুলতে আসুন আমরা শান্তি, একতা ও ভালোবাসায় একসঙ্গে হাতে হাত মিলাই।’
আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগে নির্বাচনে জয় পেয়েছেন বলে দাবি করেন চামিসা। গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি ‘ফল জালিয়াতির চেষ্টা করছে’ এবং তাঁরা ‘এটা হতে দেবেন না’।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, কোনো কারচুপি হয়নি।
গত নভেম্বরে সামরিক বাহিনীর চাপে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। ৯৪ বছর বয়স্ক মুগাবে প্রায় ৩৭ বছর দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন। নানগাগোয়া একসময় রবার্ট মুগাবের মিত্র ছিলেন। তবে এখন তাঁরা পরস্পরের চরম শত্রু।
গত বছর পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়ে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতা দখল করেন দেশটির জেনারেলরা। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় রবার্ট মুগাবে তাঁর স্ত্রী গ্রেসকে ক্ষমতায় বসাতে চেয়েছিলেন।
ভোট কারচুপির অভিযোগে রাজধানী হারারেতে বুধবার বিরোধী দলের বিক্ষোভে জিম্বাবুয়ের পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিরা সরকারবিরোধী মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন বলে জানায় স্থানীয় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন বেশ কজন। সহিংসতার ঘটনায় গতকাল হারারে ভুতুড়ে নগরে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের গোলাবাড়ি গ্রাম। সেখানকার হাওর বিলাস হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকাযোগে ছুটলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের রউয়া বিলের দিকে। খানিকটা এগোনোর পর দেখলাম, একটি মাইজলা বক মাছের জন্য স্থির দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। দুর্লভ সেই বকটির ছবি তোলার সময় ওর প্রায় ১০ মিটার পেছনে তিনটি হাঁস ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ল। নৌকা কাছাকাছি যেতেই ওরা উড়ে গেল। আরেকটু পর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরও ১৫-২০টি হাঁসের দেখা মিলল।
রউয়া বিল থেকে চটাইন্না খাল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমের চটাইন্না বিলে গিয়ে একটি কান্দায় (উঁচু জায়গা) নামলাম। এটি পার হয়ে সামনে যেতেই হঠাৎ রউয়া বিলে দেখা সেই হাঁসের বিশাল একটি ঝাঁক উড়াল দিল।
টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা হাঁসগুলো পরিযায়ী পাখি নাইরলি হাঁস। জিরিয়া হাঁস, ইটাপেরি হাঁস বা গাঙ রৈব নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম গারগেনি (Garganey) বা ব্লু-উইঙ্গড টিল (Blue-winged Teal)।
নাইরলি হাঁসের গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। প্রজননকালে হাঁসা, হাঁসির পালকের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। হাঁসার গাঢ় বাদামি মাথার চাঁদি হয় কালো। চোখের ওপর থাকে সাদা চওড়া ভ্রুরেখা। মুখ ও ঘাড়-গলা হয় গাঢ় বাদামি। পিঠ, পেটের নিম্নাংশ ও লেজের তলা বাদামি এবং তাতে থাকে কালো কালো বুটি। সাদাটে পেটের দুপাশে ছোট ছোট রুপালি দাগ। ডানার ওপরটা ধূসর।
হাঁসির পালক বাদামি ও তাতে গাঢ় বুটির মতো থাকে। কিন্তু ভ্রুরেখা অস্পষ্ট। হাঁসা-হাঁসি নির্বিশেষে চোখ ঘন বাদামি ও চঞ্চু কালচে-বাদামি। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় হাঁসা ও হাঁসি দেখতে একই রকম, শুধু ডানার পালকে কিছুটা পার্থক্য থাকে।
নাইরলি হাঁস বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। মাঝারি থেকে বড় দলে বিচরণ করে। জলজ উদ্ভিদের বিচি, পাতা প্রিয় খাবার। তবে কদাচিৎ কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট এবং খোলকি প্রাণী, যেমন চিংড়ি ও কাঁকড়া ইত্যাদি খায়।
নাইরলি হাঁসের প্রজননকাল এপ্রিল-মে। এ সময় এরা মূল আবাস ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে মাটিতে তৃণলতার ওপর বাসা বানায়। হালকা পীতাভ রঙের ৮-১২টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২১-২৩ দিনে। বাচ্চাদের পালক গজায় ৩৫-৪৯ দিনে। এরপর নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে তারা। এদের আয়ুষ্কাল ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর।
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকার পাশে শিল্প-কারখানা স্থাপন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক বিশেষ দূত জন এইচ নক্স।
গত মঙ্গলবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত ওই বনটি জাতিসংঘ ঘোষিত রামসার এলাকা বা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে তা শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনের জন্যই হুমকি না। এই বনে বসবাসকারী বেঙ্গল টাইগার, ডলফিন ও অন্যান্য বিপদাপন্ন বন্য প্রাণীর অস্তিত্বের জন্যও হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, শুধু বন্য প্রাণী নয়, সুন্দরবনের ওপরে নির্ভরশীল ৬৫ লাখ মানুষের জীবিকা, স্বাস্থ্য, বসতি, খাদ্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাও এর ওপরে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে ৩২০টি শিল্প-কারখানাকে অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের মতামত ও যথাযথ পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে না। সুন্দরবনের পাশে যেসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, তা আর সম্প্রসারণ না করার নির্দেশ সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব তথ্য জাতিসংঘের কাছে জমা দেব। আশা করি, তারা আমাদের তথ্যের সঙ্গে একমত হবে।’
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, গত বছর বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের সংবেদনশীল এলাকার (বাফার জোন) মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানার অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা অমান্য করে শিল্প-কারখানা অনুমোদনের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। পরিবেশের প্রতীক সুন্দরবনে এই বিশৃঙ্খল শিল্পায়ন বিশ্বের পরিবেশের জন্য হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে অল্প সময়ের অর্থনৈতিক স্বপ্নপূরণের চেষ্টা ‘ভুল জিনিসকে স্বর্ণ ভেবে পেছনে ছোটার মতো’। একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হবে না। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়ন পেতে হলে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে—পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। সুন্দরবনের পাশে এসব শিল্পায়নের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের কথা শুনতে হবে। তিনি বলেন, যেসব মানুষ ওই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের টেকসই উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ম্যানগ্রোভ বন বায়ু ও পানিকে বিশুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছে। যার সুবিধা বনের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সর্বত্র ম্যানগ্রোভ বন ছড়িয়ে পড়ুক—এটা আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এর বাইরেও সুন্দরবন আমাদের সবার সামনে দুটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে—তা হচ্ছে আমরা কি এমন উন্নয়নের দিকে যাব, যা মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলবে? নাকি আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে শিল্পায়নের দিকে এগোব। আমরা কি একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাই, নাকি একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি চাই?
জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের চারপাশের শিল্প-কারখানার ব্যাপারে যেসব আপত্তি তুলছিল, তার যৌক্তিকতা আবারও প্রমাণিত হলো। আমরা আবারও বলব, সরকার যাতে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে, চারপাশের সব শিল্প-কারখানার অনুমোদন বাতিল করে। নয়তো সুন্দরবন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে, আর এ জন্য এই সরকার দায়ী থাকবে।
ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটা দ্বীপ। বলা হয়, ওকিনাওয়ার লোকেরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বাঁচে বেশি দিন। ওখানে অনেক শতবর্ষী লোকের দেখা মেলে। মেয়েরা বাঁচে পুরুষদের চেয়ে বেশি দিন; তাদের গড় আয়ু প্রায় ৯০ বছর।
সেখানকার মানুষের হৃদ্রোগ খুব কম হয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই, ক্যানসারও খুব একটা হয় না। এসবের পেছনে আসলে রহস্যটা কী? জাপানের একদল গবেষক তা খুঁজেও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কারণটা আর কিছুই না; তাদের খাদ্যাভ্যাস। ওখানকার লোকেরা রোজ একটি গাছকে তাদের খাবারের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। গাছটা হলো বড় এলাচির গাছ। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম আলপিনিয়া জেরামবেট, পরিবার জিঞ্জিবারেসি। আদাগোত্রীয় গাছের পাতা ও শিকড় খাবারের সঙ্গে খায় না এমন একটি লোকও নাকি সেখানে নেই। আবার রোজ খায় না, তেমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ গাছকে যেমন তারা খাদ্য হিসেবে খায়, গাছের পাতা দিয়ে চা বানায়, তেমনি এ গাছ থেকে বানানো ওষুধও তারা খায়। এই খাদ্যাভ্যাসটাই তাদের দীর্ঘজীবনের মূল চাবিকাঠি।
এমন একটি গাছ আমাদের দেশেও আছে। সে গাছের দেখা পেলাম লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই গ্রামের বাসিন্দা আলম সরকারের বাড়িতে। উঁচু দুটি ঝোপে অনেকগুলো গাছ আকাশের দিকে পাতা মেলে যেন তাদের বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। আলম সরকার বললেন, ‘এটা এলাচিগাছ। তবে আমরা বাজার থেকে যে বিদেশি এলাচি কিনে খাই, ওটা সে জাতের এলাচিগাছ না। এই এলাচিগাছের শুকনো ফল আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করি।’
এ গাছের ফল বাজারের এলাচির চেয়ে অনেক বড়। সে জন্য আলম সরকার এ গাছের নাম দিয়েছেন বড় এলাচি। বইপত্রেও নাম পেলাম বড় এলাচি।
ঘন সবুজ পাতার ঝোপে গাছের ডাঁটির মাথায় পাকা শুকনো ফলের কিছু থোকা তখনো ঝুলে ছিল। কড়ে মার্বেল আকারের গোল ফলের রং শুকিয়ে হলদে বাদামি হয়ে গেছে। খোসা মচমচে ও সূক্ষ্ম পশমে আবৃত। একটা ফল ছিঁড়তেই আঙুলে কিছু শুঙ্গ বিঁধে গেল। কিন্তু আঙুলের চাপে ফলটা ভাঙতে ভুল করলাম না। ভাঙতেই খোসার ভেতরে পেলাম এলাচির মতো কালো বিচি। বিচি ও খোসার ঘ্রাণ এলাচির মতোই।
আলম সরকার জানালেন, প্রায় চার বছর আগে তিনি পাশের পশ্চিম আমবাড়ি গ্রামের শাহদাতের মেয়ের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের বাড়িতে এলাচিগাছ আছে, সে গাছে এলাচি ধরছে। গাছপাগল আলম সরকার সেই বাড়ি থেকে দুটি চারা সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতে লাগান। বছরের মাথায় তাতে ফল ধরে। দ্রুত গাছের গোড়া থেকে নতুন অনেক চারা গজাতে থাকে। একসময় বড় ঝোপ হয়ে যায়। মাঘ মাসে চমৎকার ফুল ফোটে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই। ক্ষুদ্র ঝিনুক আকৃতির সাদাটে রঙের ফুলের মধ্যে হলদে কমলা ছোপ। এ জন্যই কিনা জানি না, এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Shell ginger. ফুল থেকে ফল হয়।
প্রথমে কাঁচা ফলের রং থাকে পাতার মতোই সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হলুদ, পরে কমলা রং ধারণ করে। শেষে ধূসর বাদামি হয়ে যায়। একটা ছড়ায় ১০-১৫টা ফল ধরে। আষাঢ়-শ্রাবণে ফল পাকে। এলাচির গুঁড়ার মতোই রান্নায় ব্যবহার করেন তা।
হৃদ্রোগ, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদি সারাতে এটা এক ওস্তাদ গাছ। মাথাব্যথা হলে এর কাঁচা পাতা মাথায় বেঁধে রাখলে দ্রুত উপশম হয়। হজমেও সাহায্য করে এই এলাচি।
প্রেমের সূত্র ধরে এক তরুণীকে নিয়ে সারা দিন বেড়িয়ে রাতে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ওঠেন তাঁর কথিত প্রেমিক। সেখানে ওই প্রেমিকসহ তাঁর সহযোগীরা তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের রেলস্টেশন সড়কের একটি হোটেলে ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, কুলাউড়া পৌর শহরের মধ্য চাতলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সামী আহমদ (২২), শ্রীপুরের মো. আল আমিন (২৩), সিলেটের মোগলাবাজারের শাহান আহমদ (২২), হোটেলের ব্যবস্থাপক নির্মল বর্ধন (৩৫) ও হোটেলের কর্মচারী খোকন মিয়া (২০)।
পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামী সাভারের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে সহকর্মী তরুণীর (২০) সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শুক্রবার সামী ওই তরুণীকে বেড়ানোর কথা বলে সিলেটে নিয়ে যান। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বেড়িয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা ট্রেনে কুলাউড়ায় পৌঁছে ওই হোটেলে ওঠেন। রাতে সামীসহ তাঁর সহযোগী আল আমিন, শাহান ও সিলেটের মোগলাবাজারের কাশেম (২২) তরুণীকে ধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে কাশেম পালিয়ে যান।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, অভাবের তাড়নায় বছরখানেক আগে তিনি সাভারের পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে মামলা করবেন।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিনয় ভূষণ রায় শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া সামী, আল আমিন ও শাহান ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তরুণীকে রোববার হাসপাতালে পাঠানো হবে। হোটেলের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভাগ্যবদলের আশায় তাঁদের কেউ তিন মাস, কেউ ছয় মাস, কেউবা এক বছর আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব বেশি দিন লাগেনি তাঁদের। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন প্রায় এক হাজার নারী। এর মধ্যে ১-৬ জুন পর্যন্তই এসেছেন ৮২ নারী।
দেশে ফিরে সরকারের কোনো সংস্থাকে পাশে পাননি ওই নারীরা। এমনকি পরিবারেও ঠাঁই হচ্ছে না অনেকের। সামাজিকভাবেও হেয় হতে হচ্ছে তাঁদের। ফিরে আসা নারীদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন তাঁরা। সরকারের পক্ষে কেউ বিমানবন্দরে তাঁদের খোঁজ নিতে যায়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে কেন দেশে ফিরে আসার দায় রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আলাদাভাবে নারীশ্রমিকদের জন্য কোনো কার্যক্রম নেই। তাঁর দাবি, বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে তাঁদের কর্মীরা বিদেশফেরত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করছেন।
সরকারি এই কর্মকর্তা সৌদি আরবে নারীশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর দায় চাপালে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এর জন্য এককভাবে দায়ী নয়। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নারী গৃহকর্মীরা সৌদি আরবে গেছেন। এ ঘটনায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব-২ শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তির আগে কোনো নারী শ্রমিক ফেরত এলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে ওই দেশের মালিককে। আর শরীরে ইস্তিরির পোড়া দাগ, হাত-পা ভাঙাসহ শরীরে যতই প্রমাণ থাকুক, দূতাবাসগুলো এসব সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরছে না। এর আগেই ওই নারীকে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে নির্যাতনের বিষয়টি আর প্রমাণ করা যাচ্ছে না। অথচ সরকার এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। তিনি বলেন, বিদেশফেরত নারীদের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো কার্যক্রম নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা নারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত দুই সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে সচিবের নেতৃত্বে একাধিক সভা হয়েছে। ফেরত আসা নারীদের বিষয়ে সরকারের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বায়রা থেকে তদারক কমিটি গঠন, বিদেশে পাঠানো প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অভিবাসন খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরত আসা নারীদের শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের সমাজে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে শুধু সৌদি আরব নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো থেকেও যাঁরা ফেরত আসছেন, তাঁদের বিষয়েও সরকারকে ভাবতে হবে।
লেবানন থেকে প্রায় এক বছর আগে দেশে ফেরেন ২৫ বছর বয়সী এক নারী গৃহকর্মী। তাঁর কোলে ছিল ১ মাস ১০ দিন বয়সী শিশু। তিনি যেখানে কাজ করতেন, ওই বাসার গৃহকর্তা শিশুটির বাবা। এই নারী জানান, লেবাননে যাওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা তাঁকে যৌন নির্যাতন করতে থাকেন। ওই ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি এটি বিশ্বাস করেননি। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উল্টো মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাঁকে দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন কর্মসূচির (ওকাপ) নিরাপদ আবাসে। সেখানে টানা কয়েক মাস ছিলেন তিনি। সংস্থাটি চিকিৎসার পাশাপাশি এই নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি লেবানন থেকে প্রতি দুই মাস পরপর ২৪ হাজার করে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা নিতেন স্বামী। এই নারী বলেন, ‘স্বামীই আমারে বিদেশ পাঠাইছিল, এহন স্বামী তাকাইয়্যাও দেহে না। বাপ-ভাইও চেনে না। বিদেশি বাচ্চা দেইখ্যা অন্যরা হাসে।’
সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফেরত আসা এক নারী রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি গ্রামে ফিরেছেন। ওই নারীর ভাই টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানালেন, বিদেশ যাওয়ার আগেই স্বামী তাঁর বোনকে ফেলে চলে গেছেন। সৌদিতে নয় মাস কাজ করলেও ছয় মাসের টাকা দেশে পাঠাতে পেরেছিলেন। বোন কবে সুস্থ, স্বাভাবিক হবে ঠিক নেই। এখন কে তাঁর দায়িত্ব নেবে, তা ভেবে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।
বেসরকারি সংস্থা ওকাপের কর্মকর্তা (কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার) শাহীনূর আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশফেরত নারীদের অনেককেই পরিবার নিতে চাচ্ছে না, কখনোবা ওই নারী নিজেই যেতে চাইছেন না। অনেকে সন্তান নিয়ে ফিরেছেন। এ অবস্থায় সামাজিকভাবে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ নারী সৌদি আরবে গেছেন। আর ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ৭ লাখ নারী। এই তথ্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অভিবাসনবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার।
নারী গৃহকর্মীদের ফিরে আসার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরত আসা নারীরা সবাই সরকারের বৈধ পথে বিদেশ গিয়েছিলেন। বর্তমানে নারীদের ফেরত আসার সংখ্যাটা বেড়েছে, কিন্তু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তার ইঙ্গিত তো আগে থেকেই ছিল। কোনো নারীর পরিবার যদি এই নারীদের নিতে না চায়, সেই পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্বও নিতে হবে সরকারকেই। আর পরিবার অপারগ হলে দীর্ঘ মেয়াদে ওই নারীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ সরকারের এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে কোনো নীতি নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যৌক্তিক একটি আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন উদ্বিগ্ন হতে হয়। এই আন্দোলনে এই পর্যন্ত বারবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আজ শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।
আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক সহসভাপতির ছবি দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ধ্যার পর কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যায়। তখন তাদের বাস ভাঙচুরের উসকানি দেওয়া হয়।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক ঘৃণ্য মতলব নিয়ে আজকে এই আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এখন তারা স্কুলের কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেশ বিশৃঙ্খল করতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। যারা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।
ছাত্রছাত্রীদের সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের শুভবুদ্ধির অনেকেই বলেছেন সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমাদ, আবুল মকসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন ।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রী কাদের আরও বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাসের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন। ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে আন্ডারপাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেন্ডার ছাড়াই সেনাবাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ যেগুলো করতে হয়, সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয় যাতে করে কোনো জটিলতা না থাকে। দ্রুত কাজগুলো শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে করে আধুনিক ডাম্বল স্পিডব্রেকার করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে স্কুল–কলেজের সামনে ডাম্বলস্পিড ব্রেকার করা হবে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট বাতিলসহ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে কিছুটা দেরিও হতে পারে।
সরকার অনুপ্রবেশকারীদের কেন আইনের আওতায় আনছে না, এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের ভূমিকা অবলোকন করছি। আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে তাদের ছবিও পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংগ্রহ করছে। তাদের গতিবিধিগুলো আমরা রাজনৈতিকভাবেও দূর থেকে দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর নেওয়া যাবে না।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘পুলিশ নানা অপমান–অপদস্থ এবং হয়রানির শিকার হয়ে ধৈর্যের প্রয়াস দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক অপশক্তির মদদ যে আছে, সেটা আমরা কাছ থেকে লক্ষ করছি। আমরা ধৈর্য ধরছি। আমাদের বিশ্বাস কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’
শান্তির স্বার্থে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করে কাদের বলেন, ‘শিক্ষক-অভিভাবক তাদের আমি গতকালও অনুরোধ করেছি। শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি সবাই এই ব্যাপারে হাত বাড়াবে। আমরা তাদের আবার অনুরোধ করব। দয়া করে শান্তির স্বার্থে আমাদের এই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সবাই যদি সমন্বিতভাবে চেষ্টা করি, ভালোভাবে বোঝালে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ভবিষ্যতের কথা অনুধাবন করে ঘরে ফিরে যাবে বলে আমরা আশা করি।’
জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালু রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, পিয়ংইয়ং জাহাজ থেকে জাহাজে অবৈধ তেলজাতীয় পণ্য স্থানান্তর বৃদ্ধি করেছে এবং বিদেশে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এই গোপনীয় প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জমা দেয়।
উত্তর কোরিয়া এখনো প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেয়নি।
গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্ক ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান সত্ত্বেও পিয়ংইয়ং নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।
একজন অজ্ঞাতনামা মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের একটি সাইটে অব্যাহত কর্মতৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া এর পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলো বন্ধ করেনি এবং সাগরে জাহাজ থেকে জাহাজে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও কয়লা অবৈধ স্থানান্তর করছে।’
এতে আরও বলা হয়, লিবিয়া, সুদান ও ইয়েমেনর কাছে ‘পিয়ংইয়ং বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও হালকা অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।’
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন, উত্তর কোরিয়ার কার্যক্রম আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করেছে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের ব্যাপারে তিনি ‘আশাবাদী’।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, পিকআপটির চালকের আসনে ছিল কিশোর হেলপার (চালকের সহকারী)। সে মাদকসেবী; স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তও করছিল সে। পরে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সখীপুর-সাগরদিঘি সড়কের বেলতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া আফরিন (১৫)। সে উপজেলার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আটক হেলপারের নাম তানভীর হাসান (১৫)। তার বাড়ি একই উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিকেলের দিকে সাদিয়াকে দাফন করা হয়েছে।
নিহত ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় সাদিয়া তার ফুপুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে হেঁটে আসছিল। সকাল ১০টার দিকে বেলতলী বাজারে পৌঁছালে ওই পিকআপের ধাক্কায় তার মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।
আটক তানভীর প্রথম আলোকে বলে, সে কচুয়া থেকে কয়েকজন যুবককে তুলে উপজেলার কুতুবপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলতলী এলাকায় পৌঁছালে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে আসা ওই মেয়েটিকে পিকআপে থাকা যুবকেরা ‘হিপহিপ হুররে’ বলে উত্ত্যক্ত করে। এ সময় তানভীর নিজেও মেয়েটির পাশ দিয়ে পিকআপ চালায়। একসময় পিকআপের পেছনের অংশ সাদিয়ার মাথায় জোরে আঘাত করে। তানভীরের দাবি, ওই যুবকদের হইহুল্লোড় সে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে ওই যুবকদের চিনতে পারেনি।
কিন্তু পুলিশের দাবি, আটক তানভীর নিজেও একজন উত্ত্যক্তকারী ও মাদকসেবী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ওই পিকআপের মূল চালক লাবলু মিয়ার কাছ থেকে তানভীর পিকআপটি নিয়ে বের হয়।
এদিকে ঘটনার পরপর সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সখীপুর-সাগরদিঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে চার ঘণ্টা ওই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এলাকাবাসী গাড়ির আসল চালক ও মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
পরে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী সরকার ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন আলী আন্দোলনকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে বেলা দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে কাল শনিবার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানা গেছে।
ওসি এস এম তুহীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। গাড়ির চালকের সহকারী তানভীরকে থানায় রাখা হয়েছে। মূল চালক লাবলু মিয়া ও গাড়ির মালিক উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের রাজ্জাক বিপ্লবকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বান্দরবানে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে গতকাল শুক্রবার রাতে উজানীপাড়ার এক সাবেক কার্বারী (পাড়াপ্রধান) ও তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কার্বারীর আরেক আত্মীয়কে মারাত্মক আহত অবস্থায় সেনাসদস্যরা উদ্ধার করেছেন বলে সেনাবাহিনী রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন।
পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে উজানীপাড়ার সাবেক কার্বারী কে অং প্রু মারমার (৬০) বাড়ির ওপর নতুন কার্বারীর লোকজন হামলা চালায়। হামলায় সাবেক কার্বারী কে অং প্রু সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন। তাঁর ছেলে মং এচিং মারমাকে (৩২) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে সেনাসদস্যরা তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাড়ার নিচে জঙ্গলে খুঁজে পান। একজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম জানা যায়নি।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেছেন, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি উজানীপাড়ায় নতুন কার্বারী ও পুরোনো কার্বারীর মধ্যে গত বছর থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। গত বছর নতুন কার্বারীর আত্মীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুসিংমং মারমাকে হত্যা করা হয়। তাঁকে হত্যার অভিযোগে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলে কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর নতুন কার্বারীর সঙ্গে বিরোধ আবার চরম আকার ধারণ করে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, পাড়াটি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। লাশ উদ্ধারে তিনি পাড়ার দিকে যাচ্ছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, সেনাবাহিনী সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজানীপাড়া গেছে। সেখান থেকে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত আরেকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে। পাড়ার সাবেক ও বর্তমান কার্বারীর লোকজনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, তারা তো নিজের জন্য কিছু চায়নি। তাদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন নয়। তারা চেয়েছে নিরাপদ সড়ক।
বাসচাপায় নিহত দিয়া খানমের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে আজ শুক্রবার সকালে তাদের মহাখালীর বাড়িতে গিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এরশাদ। সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নানা মন্তব্যের সমালোচনা করেন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘শাজাহান খানের হাসি দেখে দুঃখ পেয়েছি। একটা ছেলে মারা গেছে, একটা মেয়ে মারা গেছে। তিনি হাসিমুখে ঘটনাকে তুলনা করছেন ভারতের দুর্ঘটনার সঙ্গে। এই যদি তাঁর প্রতিক্রিয়া, কী বলার আছে।’
সড়ক পরিবহন আইনকে আরও কঠোর করার দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকতে আমি মৃত্যুদণ্ডের আইন করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে আইনটি পরে বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু যারা সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে, তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘আমার ছেলে যদি আজকে গাড়িতে করে স্কুলে যেত, সর্বক্ষণ আমি চিন্তায় থাকতাম ছেলে বাসায় ফিরবে কি না। মৃত্যু দেখলে তো আমি আত্মহত্যা করতাম। মৃত ছেলের মুখ দেখতে চাই না আমি।’
ফুটবল-বিশ্বকে ব্রাজিল উপহার দিয়েছে পেলে। দিয়েছে গারিঞ্চা, টোস্টাও, জিকো, সক্রেটিস, রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহো ও নেইমারদের মতো তারকাদের। সুতরাং দলবদলের বাজারে ব্রাজিলিয়ানদের ঘিরে যে বাড়তি আগ্রহ থাকবে, এ তো জানা কথাই! তবে সর্বশেষ কয়েক মৌসুমের মধ্যে এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ব্রাজিলিয়ানদের দাপটটা একটু বেশিই বলে মনে হচ্ছে। দলবদলের তথ্য-উপাত্তবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, এবার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দামি ১৮টি দলবদলের মধ্যে ৯টিই ব্রাজিলিয়ানদের।
দলবদলের বাজারে সাড়া ফেলে দেওয়া এই ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে অবশ্য একজন গোলরক্ষক-আলিসন। কিছুদিন আগে রোমা থেকে তাঁকে কিনতে লিভারপুলের খরচ হয়েছে ৭ কোটি ২৫ লাখ ইউরো। যে দলবদলটা আলিসনকে বানিয়ে দিয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে দামি গোলরক্ষকও। আলিসন ছাড়াও গ্রীষ্মকালীন এই দলবদলে বাড়তি নজর কেড়েছেন ফ্রেড, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, ফাবিনহো, আর্থার ও ম্যালকম। শাখতার দোনেৎস্ক থেকে মিডফিল্ডার ফ্রেডকে কিনতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খরচ হয়েছে ৬ কোটি ইউরো।
বিস্ময়-বালক তকমা লেগে যাওয়া ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে পেতে অবশ্য ২০১৬ সালেই ফ্ল্যামেঙ্গোর সঙ্গে ৪ কোটি ৬০ লাখ ইউরোতে চুক্তি করে
রেখেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেই চুক্তি অনুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ায় কয়েক দিন আগে পাকাপাকিভাবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে চলে এসেছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। অবশ্য এখনই তাঁকে রিয়ালের মূল দলে দেখা যাবে না, আরও পরিণত হতে তাঁকে রাখা হয়েছে বয়সভিত্তিক দলে।
কেন এত আগ্রহ ব্রাজিলিয়ান এই ফুটবলারদের ঘিরে? তাঁদের বেশির ভাগই তরুণ ও প্রতিভাবান, এটা বড় কারণ। বায়ার্ন মিউনিখ থেকে জুভেন্টাসে
যোগ দেওয়া ডগলাস কস্তা ছাড়া এই ৯ জন ব্রাজিলিয়ানের মধ্যে কারও বয়সই ২৫-এর বেশি নয়। গড় বয়স ২৩। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র তো সদ্য কৈশোর পেরিয়েছেন। বার্সেলোনার নতুন দুই ব্রাজিলিয়ান ম্যালকম ও আর্থার, এভারটনের রিচার্লিসনরা ২১-এ পা রেখেছেন মাত্র। লিভারপুলের ফাবিনহোর
বয়সও মাত্র ২৪।
আলিসন-কস্তারা তো রাশিয়া বিশ্বকাপের দলেই ছিলেন। তাঁদের তাই নতুন করে চেনানোর কিছু নেই। ম্যালকম, আর্থার, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিচার্লিসনরা এখনো জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষায়। ওয়েস্ট হামের ২৫ বছর বয়সী উইঙ্গার ফিলিপে অ্যান্ডারসন ব্রাজিলের হয়ে খেলেছেন মাত্র একটি ম্যাচ, ফাবিনহো মাত্র চারটি। তবে নিজেদের সাবেক ক্লাবে সর্বশেষ কয়েকটা মৌসুম পারফর্ম করে হয়ে উঠেছেন দলবদল-বাজারের বড় আকর্ষণ।
যে কারণেই হয়তো বোর্দো থেকে ম্যালকমকে কিনতে বার্সেলোনা রীতিমতো মরিয়া হয়ে উঠেছিল। শেষ মুহূর্তে ৪ কোটি ১০ লাখ ইউরো দাম দিয়ে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারকে রোমার কাছ থেকে প্রায় ছিনতাই করে নিয়েছে লা লিগার চ্যাম্পিয়নরা। যে ঘটনায় রোমার সঙ্গে সম্পর্কটাই খারাপ হয়ে গেছে বার্সেলোনার।
দলবদলের বাজারে ব্রাজিলিয়ানদের নিয়ে এমন কাড়াকাড়ি দেখে হয়তো ভালোই লাগে তিতের। আরও চার বছরের জন্য ব্রাজিলের কোচ হিসেবে চুক্তি নবায়ন হয়েছে তাঁর। আগামী দিনের ব্রাজিল দল গড়তে এই খেলোয়াড়দের ওপর তো চোখ থাকবে তাঁরও।
রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় জানিয়ে তাঁর আবেগময় চিঠির কথা মনে আছে?
‘রিয়াল মাদ্রিদ আমার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে।…আমি এ জার্সি ছেড়ে যাচ্ছি কিন্তু যেখানেই থাকি না কেন, এই ক্লাব ও সান্তিয়াগো বার্নাব্যু আমার অংশ হয়ে থাকবে’, চিঠিতে এমন সব আবেগময় কথাই লিখেছিলেন রোনালদো। কিন্তু কে জানত, জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরই তিনি সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবেন!
রোনালদো যা করেছেন, তা নিয়ে বেশ শোরগোলই পড়ে গেছে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছাড়ার পর যে ক্লাবে খেলে তিনি আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার, সেই রিয়াল মাদ্রিদকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘আনফলো’ করেছেন রোনালদো! ভুল পড়েননি। রোনালদো তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ‘আনফলো’ করেছেন রিয়ালকে। অর্থাৎ, ইনস্টাগ্রামে তিনি আর রিয়ালের অনুসারী নন।
ফুটবল পেশাদারির দুনিয়ায় ঠিকানা পাল্টানোই রীতি। রোনালদো সেই রীতি মেনেই রিয়াল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন জুভেন্টাসে। তার আগে রিয়ালের হয়ে গড়েছেন অজস্র রেকর্ড—ক্লাবটির হয়ে সর্বোচ্চ গোল (৪৫১), লা লিগায় সর্বোচ্চ গোল (৩১১), চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোল (১০৫) আর চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাও জিতেছেন রোনালদো। ‘হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া’ সেই ক্লাবের অনুসারী তালিকা থেকে রোনালদো কিনা নিজেকে সরিয়ে নিলেন!
এমন তো নয়, জুভেন্টাসকে অনুসরণ করলে অন্য কোনো ক্লাবকে অনুসরণ করা যাবে না। সাধারণত তারকা জুটির মধ্যে দেখা যায় এই প্রবণতা। সম্পর্ক ছিন্ন হলে তারকাদের অনেকেই প্রথম যে কাজটা করেন, সামাজিক মাধ্যম থেকে একে অন্যকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। রোনালদো এত দ্রুত রিয়ালকে আনফলো কেন করলেন, এ নিয়ে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
পেশাদারির পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে রোনালদো এখন জুভেন্টাসের অনুসারী। ইনস্টাগ্রামে তিনি এখন ইতালিয়ান ক্লাবটির ‘ফলোয়ার’। তবে রিয়ালের সাবেক সতীর্থদের ‘আনফলো’ করেননি পর্তুগিজ তারকা। এ ছাড়াও সাবেক দুই কোচ কার্লো আনচেলত্তি আর জিনেদিন জিদানকেও তিনি অনুসরণ করছেন ইনস্টাগ্রামে। রিয়ালে তাঁর শেষটা কি তবে মনমতো হয়নি? তবে কি রিয়ালের কর্তাব্যক্তিদের ওপর রোনালদো আসলেই নাখোশ? যে গুঞ্জন শোনা গেছে এত দিন!
সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের গোলাবাড়ি গ্রাম। সেখানকার হাওর বিলাস হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকাযোগে ছুটলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের রউয়া বিলের দিকে। খানিকটা এগোনোর পর দেখলাম, একটি মাইজলা বক মাছের জন্য স্থির দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। দুর্লভ সেই বকটির ছবি তোলার সময় ওর প্রায় ১০ মিটার পেছনে তিনটি হাঁস ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ল। নৌকা কাছাকাছি যেতেই ওরা উড়ে গেল। আরেকটু পর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরও ১৫-২০টি হাঁসের দেখা মিলল।
রউয়া বিল থেকে চটাইন্না খাল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমের চটাইন্না বিলে গিয়ে একটি কান্দায় (উঁচু জায়গা) নামলাম। এটি পার হয়ে সামনে যেতেই হঠাৎ রউয়া বিলে দেখা সেই হাঁসের বিশাল একটি ঝাঁক উড়াল দিল।
টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা হাঁসগুলো পরিযায়ী পাখি নাইরলি হাঁস। জিরিয়া হাঁস, ইটাপেরি হাঁস বা গাঙ রৈব নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম গারগেনি (Garganey) বা ব্লু-উইঙ্গড টিল (Blue-winged Teal)।
নাইরলি হাঁসের গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। প্রজননকালে হাঁসা, হাঁসির পালকের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। হাঁসার গাঢ় বাদামি মাথার চাঁদি হয় কালো। চোখের ওপর থাকে সাদা চওড়া ভ্রুরেখা। মুখ ও ঘাড়-গলা হয় গাঢ় বাদামি। পিঠ, পেটের নিম্নাংশ ও লেজের তলা বাদামি এবং তাতে থাকে কালো কালো বুটি। সাদাটে পেটের দুপাশে ছোট ছোট রুপালি দাগ। ডানার ওপরটা ধূসর।
হাঁসির পালক বাদামি ও তাতে গাঢ় বুটির মতো থাকে। কিন্তু ভ্রুরেখা অস্পষ্ট। হাঁসা-হাঁসি নির্বিশেষে চোখ ঘন বাদামি ও চঞ্চু কালচে-বাদামি। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় হাঁসা ও হাঁসি দেখতে একই রকম, শুধু ডানার পালকে কিছুটা পার্থক্য থাকে।
নাইরলি হাঁস বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। মাঝারি থেকে বড় দলে বিচরণ করে। জলজ উদ্ভিদের বিচি, পাতা প্রিয় খাবার। তবে কদাচিৎ কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট এবং খোলকি প্রাণী, যেমন চিংড়ি ও কাঁকড়া ইত্যাদি খায়।
নাইরলি হাঁসের প্রজননকাল এপ্রিল-মে। এ সময় এরা মূল আবাস ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে মাটিতে তৃণলতার ওপর বাসা বানায়। হালকা পীতাভ রঙের ৮-১২টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২১-২৩ দিনে। বাচ্চাদের পালক গজায় ৩৫-৪৯ দিনে। এরপর নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে তারা। এদের আয়ুষ্কাল ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর।
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকার পাশে শিল্প-কারখানা স্থাপন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক বিশেষ দূত জন এইচ নক্স।
গত মঙ্গলবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত ওই বনটি জাতিসংঘ ঘোষিত রামসার এলাকা বা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে তা শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনের জন্যই হুমকি না। এই বনে বসবাসকারী বেঙ্গল টাইগার, ডলফিন ও অন্যান্য বিপদাপন্ন বন্য প্রাণীর অস্তিত্বের জন্যও হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, শুধু বন্য প্রাণী নয়, সুন্দরবনের ওপরে নির্ভরশীল ৬৫ লাখ মানুষের জীবিকা, স্বাস্থ্য, বসতি, খাদ্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাও এর ওপরে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে ৩২০টি শিল্প-কারখানাকে অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের মতামত ও যথাযথ পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে না। সুন্দরবনের পাশে যেসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, তা আর সম্প্রসারণ না করার নির্দেশ সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব তথ্য জাতিসংঘের কাছে জমা দেব। আশা করি, তারা আমাদের তথ্যের সঙ্গে একমত হবে।’
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, গত বছর বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের সংবেদনশীল এলাকার (বাফার জোন) মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানার অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা অমান্য করে শিল্প-কারখানা অনুমোদনের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। পরিবেশের প্রতীক সুন্দরবনে এই বিশৃঙ্খল শিল্পায়ন বিশ্বের পরিবেশের জন্য হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে অল্প সময়ের অর্থনৈতিক স্বপ্নপূরণের চেষ্টা ‘ভুল জিনিসকে স্বর্ণ ভেবে পেছনে ছোটার মতো’। একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হবে না। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়ন পেতে হলে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে—পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। সুন্দরবনের পাশে এসব শিল্পায়নের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের কথা শুনতে হবে। তিনি বলেন, যেসব মানুষ ওই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের টেকসই উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ম্যানগ্রোভ বন বায়ু ও পানিকে বিশুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছে। যার সুবিধা বনের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সর্বত্র ম্যানগ্রোভ বন ছড়িয়ে পড়ুক—এটা আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এর বাইরেও সুন্দরবন আমাদের সবার সামনে দুটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে—তা হচ্ছে আমরা কি এমন উন্নয়নের দিকে যাব, যা মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলবে? নাকি আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে শিল্পায়নের দিকে এগোব। আমরা কি একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাই, নাকি একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি চাই?
জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের চারপাশের শিল্প-কারখানার ব্যাপারে যেসব আপত্তি তুলছিল, তার যৌক্তিকতা আবারও প্রমাণিত হলো। আমরা আবারও বলব, সরকার যাতে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে, চারপাশের সব শিল্প-কারখানার অনুমোদন বাতিল করে। নয়তো সুন্দরবন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে, আর এ জন্য এই সরকার দায়ী থাকবে।
ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটা দ্বীপ। বলা হয়, ওকিনাওয়ার লোকেরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বাঁচে বেশি দিন। ওখানে অনেক শতবর্ষী লোকের দেখা মেলে। মেয়েরা বাঁচে পুরুষদের চেয়ে বেশি দিন; তাদের গড় আয়ু প্রায় ৯০ বছর।
সেখানকার মানুষের হৃদ্রোগ খুব কম হয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই, ক্যানসারও খুব একটা হয় না। এসবের পেছনে আসলে রহস্যটা কী? জাপানের একদল গবেষক তা খুঁজেও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কারণটা আর কিছুই না; তাদের খাদ্যাভ্যাস। ওখানকার লোকেরা রোজ একটি গাছকে তাদের খাবারের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। গাছটা হলো বড় এলাচির গাছ। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম আলপিনিয়া জেরামবেট, পরিবার জিঞ্জিবারেসি। আদাগোত্রীয় গাছের পাতা ও শিকড় খাবারের সঙ্গে খায় না এমন একটি লোকও নাকি সেখানে নেই। আবার রোজ খায় না, তেমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ গাছকে যেমন তারা খাদ্য হিসেবে খায়, গাছের পাতা দিয়ে চা বানায়, তেমনি এ গাছ থেকে বানানো ওষুধও তারা খায়। এই খাদ্যাভ্যাসটাই তাদের দীর্ঘজীবনের মূল চাবিকাঠি।
এমন একটি গাছ আমাদের দেশেও আছে। সে গাছের দেখা পেলাম লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই গ্রামের বাসিন্দা আলম সরকারের বাড়িতে। উঁচু দুটি ঝোপে অনেকগুলো গাছ আকাশের দিকে পাতা মেলে যেন তাদের বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। আলম সরকার বললেন, ‘এটা এলাচিগাছ। তবে আমরা বাজার থেকে যে বিদেশি এলাচি কিনে খাই, ওটা সে জাতের এলাচিগাছ না। এই এলাচিগাছের শুকনো ফল আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করি।’
এ গাছের ফল বাজারের এলাচির চেয়ে অনেক বড়। সে জন্য আলম সরকার এ গাছের নাম দিয়েছেন বড় এলাচি। বইপত্রেও নাম পেলাম বড় এলাচি।
ঘন সবুজ পাতার ঝোপে গাছের ডাঁটির মাথায় পাকা শুকনো ফলের কিছু থোকা তখনো ঝুলে ছিল। কড়ে মার্বেল আকারের গোল ফলের রং শুকিয়ে হলদে বাদামি হয়ে গেছে। খোসা মচমচে ও সূক্ষ্ম পশমে আবৃত। একটা ফল ছিঁড়তেই আঙুলে কিছু শুঙ্গ বিঁধে গেল। কিন্তু আঙুলের চাপে ফলটা ভাঙতে ভুল করলাম না। ভাঙতেই খোসার ভেতরে পেলাম এলাচির মতো কালো বিচি। বিচি ও খোসার ঘ্রাণ এলাচির মতোই।
আলম সরকার জানালেন, প্রায় চার বছর আগে তিনি পাশের পশ্চিম আমবাড়ি গ্রামের শাহদাতের মেয়ের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের বাড়িতে এলাচিগাছ আছে, সে গাছে এলাচি ধরছে। গাছপাগল আলম সরকার সেই বাড়ি থেকে দুটি চারা সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতে লাগান। বছরের মাথায় তাতে ফল ধরে। দ্রুত গাছের গোড়া থেকে নতুন অনেক চারা গজাতে থাকে। একসময় বড় ঝোপ হয়ে যায়। মাঘ মাসে চমৎকার ফুল ফোটে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই। ক্ষুদ্র ঝিনুক আকৃতির সাদাটে রঙের ফুলের মধ্যে হলদে কমলা ছোপ। এ জন্যই কিনা জানি না, এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Shell ginger. ফুল থেকে ফল হয়।
প্রথমে কাঁচা ফলের রং থাকে পাতার মতোই সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হলুদ, পরে কমলা রং ধারণ করে। শেষে ধূসর বাদামি হয়ে যায়। একটা ছড়ায় ১০-১৫টা ফল ধরে। আষাঢ়-শ্রাবণে ফল পাকে। এলাচির গুঁড়ার মতোই রান্নায় ব্যবহার করেন তা।
হৃদ্রোগ, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদি সারাতে এটা এক ওস্তাদ গাছ। মাথাব্যথা হলে এর কাঁচা পাতা মাথায় বেঁধে রাখলে দ্রুত উপশম হয়। হজমেও সাহায্য করে এই এলাচি।
প্রেমের সূত্র ধরে এক তরুণীকে নিয়ে সারা দিন বেড়িয়ে রাতে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ওঠেন তাঁর কথিত প্রেমিক। সেখানে ওই প্রেমিকসহ তাঁর সহযোগীরা তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের রেলস্টেশন সড়কের একটি হোটেলে ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, কুলাউড়া পৌর শহরের মধ্য চাতলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সামী আহমদ (২২), শ্রীপুরের মো. আল আমিন (২৩), সিলেটের মোগলাবাজারের শাহান আহমদ (২২), হোটেলের ব্যবস্থাপক নির্মল বর্ধন (৩৫) ও হোটেলের কর্মচারী খোকন মিয়া (২০)।
পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামী সাভারের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে সহকর্মী তরুণীর (২০) সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শুক্রবার সামী ওই তরুণীকে বেড়ানোর কথা বলে সিলেটে নিয়ে যান। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বেড়িয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা ট্রেনে কুলাউড়ায় পৌঁছে ওই হোটেলে ওঠেন। রাতে সামীসহ তাঁর সহযোগী আল আমিন, শাহান ও সিলেটের মোগলাবাজারের কাশেম (২২) তরুণীকে ধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে কাশেম পালিয়ে যান।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, অভাবের তাড়নায় বছরখানেক আগে তিনি সাভারের পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে মামলা করবেন।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিনয় ভূষণ রায় শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া সামী, আল আমিন ও শাহান ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তরুণীকে রোববার হাসপাতালে পাঠানো হবে। হোটেলের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভাগ্যবদলের আশায় তাঁদের কেউ তিন মাস, কেউ ছয় মাস, কেউবা এক বছর আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব বেশি দিন লাগেনি তাঁদের। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন প্রায় এক হাজার নারী। এর মধ্যে ১-৬ জুন পর্যন্তই এসেছেন ৮২ নারী।
দেশে ফিরে সরকারের কোনো সংস্থাকে পাশে পাননি ওই নারীরা। এমনকি পরিবারেও ঠাঁই হচ্ছে না অনেকের। সামাজিকভাবেও হেয় হতে হচ্ছে তাঁদের। ফিরে আসা নারীদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন তাঁরা। সরকারের পক্ষে কেউ বিমানবন্দরে তাঁদের খোঁজ নিতে যায়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে কেন দেশে ফিরে আসার দায় রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আলাদাভাবে নারীশ্রমিকদের জন্য কোনো কার্যক্রম নেই। তাঁর দাবি, বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে তাঁদের কর্মীরা বিদেশফেরত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করছেন।
সরকারি এই কর্মকর্তা সৌদি আরবে নারীশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর দায় চাপালে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এর জন্য এককভাবে দায়ী নয়। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নারী গৃহকর্মীরা সৌদি আরবে গেছেন। এ ঘটনায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব-২ শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তির আগে কোনো নারী শ্রমিক ফেরত এলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে ওই দেশের মালিককে। আর শরীরে ইস্তিরির পোড়া দাগ, হাত-পা ভাঙাসহ শরীরে যতই প্রমাণ থাকুক, দূতাবাসগুলো এসব সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরছে না। এর আগেই ওই নারীকে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে নির্যাতনের বিষয়টি আর প্রমাণ করা যাচ্ছে না। অথচ সরকার এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। তিনি বলেন, বিদেশফেরত নারীদের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো কার্যক্রম নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা নারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত দুই সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে সচিবের নেতৃত্বে একাধিক সভা হয়েছে। ফেরত আসা নারীদের বিষয়ে সরকারের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বায়রা থেকে তদারক কমিটি গঠন, বিদেশে পাঠানো প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অভিবাসন খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরত আসা নারীদের শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের সমাজে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে শুধু সৌদি আরব নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো থেকেও যাঁরা ফেরত আসছেন, তাঁদের বিষয়েও সরকারকে ভাবতে হবে।
লেবানন থেকে প্রায় এক বছর আগে দেশে ফেরেন ২৫ বছর বয়সী এক নারী গৃহকর্মী। তাঁর কোলে ছিল ১ মাস ১০ দিন বয়সী শিশু। তিনি যেখানে কাজ করতেন, ওই বাসার গৃহকর্তা শিশুটির বাবা। এই নারী জানান, লেবাননে যাওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা তাঁকে যৌন নির্যাতন করতে থাকেন। ওই ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি এটি বিশ্বাস করেননি। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উল্টো মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাঁকে দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন কর্মসূচির (ওকাপ) নিরাপদ আবাসে। সেখানে টানা কয়েক মাস ছিলেন তিনি। সংস্থাটি চিকিৎসার পাশাপাশি এই নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি লেবানন থেকে প্রতি দুই মাস পরপর ২৪ হাজার করে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা নিতেন স্বামী। এই নারী বলেন, ‘স্বামীই আমারে বিদেশ পাঠাইছিল, এহন স্বামী তাকাইয়্যাও দেহে না। বাপ-ভাইও চেনে না। বিদেশি বাচ্চা দেইখ্যা অন্যরা হাসে।’
সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফেরত আসা এক নারী রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি গ্রামে ফিরেছেন। ওই নারীর ভাই টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানালেন, বিদেশ যাওয়ার আগেই স্বামী তাঁর বোনকে ফেলে চলে গেছেন। সৌদিতে নয় মাস কাজ করলেও ছয় মাসের টাকা দেশে পাঠাতে পেরেছিলেন। বোন কবে সুস্থ, স্বাভাবিক হবে ঠিক নেই। এখন কে তাঁর দায়িত্ব নেবে, তা ভেবে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।
বেসরকারি সংস্থা ওকাপের কর্মকর্তা (কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার) শাহীনূর আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশফেরত নারীদের অনেককেই পরিবার নিতে চাচ্ছে না, কখনোবা ওই নারী নিজেই যেতে চাইছেন না। অনেকে সন্তান নিয়ে ফিরেছেন। এ অবস্থায় সামাজিকভাবে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ নারী সৌদি আরবে গেছেন। আর ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ৭ লাখ নারী। এই তথ্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অভিবাসনবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার।
নারী গৃহকর্মীদের ফিরে আসার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরত আসা নারীরা সবাই সরকারের বৈধ পথে বিদেশ গিয়েছিলেন। বর্তমানে নারীদের ফেরত আসার সংখ্যাটা বেড়েছে, কিন্তু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তার ইঙ্গিত তো আগে থেকেই ছিল। কোনো নারীর পরিবার যদি এই নারীদের নিতে না চায়, সেই পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্বও নিতে হবে সরকারকেই। আর পরিবার অপারগ হলে দীর্ঘ মেয়াদে ওই নারীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ সরকারের এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে কোনো নীতি নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যৌক্তিক একটি আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন উদ্বিগ্ন হতে হয়। এই আন্দোলনে এই পর্যন্ত বারবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আজ শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।
আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক সহসভাপতির ছবি দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ধ্যার পর কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যায়। তখন তাদের বাস ভাঙচুরের উসকানি দেওয়া হয়।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক ঘৃণ্য মতলব নিয়ে আজকে এই আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এখন তারা স্কুলের কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেশ বিশৃঙ্খল করতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। যারা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।
ছাত্রছাত্রীদের সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের শুভবুদ্ধির অনেকেই বলেছেন সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমাদ, আবুল মকসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন ।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রী কাদের আরও বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাসের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন। ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে আন্ডারপাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেন্ডার ছাড়াই সেনাবাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ যেগুলো করতে হয়, সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয় যাতে করে কোনো জটিলতা না থাকে। দ্রুত কাজগুলো শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে করে আধুনিক ডাম্বল স্পিডব্রেকার করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে স্কুল–কলেজের সামনে ডাম্বলস্পিড ব্রেকার করা হবে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট বাতিলসহ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে কিছুটা দেরিও হতে পারে।
সরকার অনুপ্রবেশকারীদের কেন আইনের আওতায় আনছে না, এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের ভূমিকা অবলোকন করছি। আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে তাদের ছবিও পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংগ্রহ করছে। তাদের গতিবিধিগুলো আমরা রাজনৈতিকভাবেও দূর থেকে দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর নেওয়া যাবে না।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘পুলিশ নানা অপমান–অপদস্থ এবং হয়রানির শিকার হয়ে ধৈর্যের প্রয়াস দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক অপশক্তির মদদ যে আছে, সেটা আমরা কাছ থেকে লক্ষ করছি। আমরা ধৈর্য ধরছি। আমাদের বিশ্বাস কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’
শান্তির স্বার্থে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করে কাদের বলেন, ‘শিক্ষক-অভিভাবক তাদের আমি গতকালও অনুরোধ করেছি। শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি সবাই এই ব্যাপারে হাত বাড়াবে। আমরা তাদের আবার অনুরোধ করব। দয়া করে শান্তির স্বার্থে আমাদের এই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সবাই যদি সমন্বিতভাবে চেষ্টা করি, ভালোভাবে বোঝালে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ভবিষ্যতের কথা অনুধাবন করে ঘরে ফিরে যাবে বলে আমরা আশা করি।’
জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালু রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, পিয়ংইয়ং জাহাজ থেকে জাহাজে অবৈধ তেলজাতীয় পণ্য স্থানান্তর বৃদ্ধি করেছে এবং বিদেশে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এই গোপনীয় প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জমা দেয়।
উত্তর কোরিয়া এখনো প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেয়নি।
গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্ক ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান সত্ত্বেও পিয়ংইয়ং নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।
একজন অজ্ঞাতনামা মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের একটি সাইটে অব্যাহত কর্মতৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া এর পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলো বন্ধ করেনি এবং সাগরে জাহাজ থেকে জাহাজে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও কয়লা অবৈধ স্থানান্তর করছে।’
এতে আরও বলা হয়, লিবিয়া, সুদান ও ইয়েমেনর কাছে ‘পিয়ংইয়ং বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও হালকা অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।’
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন, উত্তর কোরিয়ার কার্যক্রম আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করেছে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের ব্যাপারে তিনি ‘আশাবাদী’।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, পিকআপটির চালকের আসনে ছিল কিশোর হেলপার (চালকের সহকারী)। সে মাদকসেবী; স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তও করছিল সে। পরে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সখীপুর-সাগরদিঘি সড়কের বেলতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া আফরিন (১৫)। সে উপজেলার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আটক হেলপারের নাম তানভীর হাসান (১৫)। তার বাড়ি একই উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিকেলের দিকে সাদিয়াকে দাফন করা হয়েছে।
নিহত ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় সাদিয়া তার ফুপুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে হেঁটে আসছিল। সকাল ১০টার দিকে বেলতলী বাজারে পৌঁছালে ওই পিকআপের ধাক্কায় তার মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।
আটক তানভীর প্রথম আলোকে বলে, সে কচুয়া থেকে কয়েকজন যুবককে তুলে উপজেলার কুতুবপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলতলী এলাকায় পৌঁছালে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে আসা ওই মেয়েটিকে পিকআপে থাকা যুবকেরা ‘হিপহিপ হুররে’ বলে উত্ত্যক্ত করে। এ সময় তানভীর নিজেও মেয়েটির পাশ দিয়ে পিকআপ চালায়। একসময় পিকআপের পেছনের অংশ সাদিয়ার মাথায় জোরে আঘাত করে। তানভীরের দাবি, ওই যুবকদের হইহুল্লোড় সে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে ওই যুবকদের চিনতে পারেনি।
কিন্তু পুলিশের দাবি, আটক তানভীর নিজেও একজন উত্ত্যক্তকারী ও মাদকসেবী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ওই পিকআপের মূল চালক লাবলু মিয়ার কাছ থেকে তানভীর পিকআপটি নিয়ে বের হয়।
এদিকে ঘটনার পরপর সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সখীপুর-সাগরদিঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে চার ঘণ্টা ওই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এলাকাবাসী গাড়ির আসল চালক ও মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
পরে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী সরকার ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন আলী আন্দোলনকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে বেলা দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে কাল শনিবার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানা গেছে।
ওসি এস এম তুহীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। গাড়ির চালকের সহকারী তানভীরকে থানায় রাখা হয়েছে। মূল চালক লাবলু মিয়া ও গাড়ির মালিক উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের রাজ্জাক বিপ্লবকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বান্দরবানে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে গতকাল শুক্রবার রাতে উজানীপাড়ার এক সাবেক কার্বারী (পাড়াপ্রধান) ও তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কার্বারীর আরেক আত্মীয়কে মারাত্মক আহত অবস্থায় সেনাসদস্যরা উদ্ধার করেছেন বলে সেনাবাহিনী রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন।
পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে উজানীপাড়ার সাবেক কার্বারী কে অং প্রু মারমার (৬০) বাড়ির ওপর নতুন কার্বারীর লোকজন হামলা চালায়। হামলায় সাবেক কার্বারী কে অং প্রু সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন। তাঁর ছেলে মং এচিং মারমাকে (৩২) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে সেনাসদস্যরা তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাড়ার নিচে জঙ্গলে খুঁজে পান। একজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম জানা যায়নি।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেছেন, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি উজানীপাড়ায় নতুন কার্বারী ও পুরোনো কার্বারীর মধ্যে গত বছর থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। গত বছর নতুন কার্বারীর আত্মীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুসিংমং মারমাকে হত্যা করা হয়। তাঁকে হত্যার অভিযোগে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলে কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর নতুন কার্বারীর সঙ্গে বিরোধ আবার চরম আকার ধারণ করে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, পাড়াটি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। লাশ উদ্ধারে তিনি পাড়ার দিকে যাচ্ছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, সেনাবাহিনী সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজানীপাড়া গেছে। সেখান থেকে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত আরেকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে। পাড়ার সাবেক ও বর্তমান কার্বারীর লোকজনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, তারা তো নিজের জন্য কিছু চায়নি। তাদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন নয়। তারা চেয়েছে নিরাপদ সড়ক।
বাসচাপায় নিহত দিয়া খানমের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে আজ শুক্রবার সকালে তাদের মহাখালীর বাড়িতে গিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এরশাদ। সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নানা মন্তব্যের সমালোচনা করেন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘শাজাহান খানের হাসি দেখে দুঃখ পেয়েছি। একটা ছেলে মারা গেছে, একটা মেয়ে মারা গেছে। তিনি হাসিমুখে ঘটনাকে তুলনা করছেন ভারতের দুর্ঘটনার সঙ্গে। এই যদি তাঁর প্রতিক্রিয়া, কী বলার আছে।’
সড়ক পরিবহন আইনকে আরও কঠোর করার দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকতে আমি মৃত্যুদণ্ডের আইন করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে আইনটি পরে বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু যারা সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে, তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘আমার ছেলে যদি আজকে গাড়িতে করে স্কুলে যেত, সর্বক্ষণ আমি চিন্তায় থাকতাম ছেলে বাসায় ফিরবে কি না। মৃত্যু দেখলে তো আমি আত্মহত্যা করতাম। মৃত ছেলের মুখ দেখতে চাই না আমি।’
বাবার পথে হাঁটছে তাঁর ছয় বছরের মেয়ে। এমনকি বাবার দেখাদেখি মেয়েও চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। ভারতের দক্ষিণের সুপারস্টার মহেশ বাবু তাঁর ব্যস্ত শিডিউলের মাঝে তেলেঙ্গানা সরকারের বিধায়ক কে টি রমা রাওয়ের ‘গ্রিন চ্যালেঞ্জ’-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বাবার এই চ্যালেঞ্জকে সার্থক করতে এগিয়ে এসেছে মহেশ বাবুর মেয়ে সিতারা।
তেলেঙ্গানা সরকারের ‘গ্রিন চ্যালেঞ্জ’ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এরপর ভারতের অনেক তারকা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। এই তারকাদের মধ্যে আছেন শচীন টেন্ডুলকার, সাইনা নেওয়াল, পরিচালক রাজমৌলীসহ অনেকে। এবার এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন মহেশ বাবু। দেশকে সবুজায়ন করার অভিযানে দক্ষিণের এই নায়কের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তাঁর মেয়ে সিতারা আর ছেলে গৌতম। মহেশ বাবু টুইট করে জানিয়েছেন, এই অভিযানে তাঁর ছেলেমেয়েরাও যুক্ত হয়েছে। ‘গ্রিন চ্যালেঞ্জ’ তেলেঙ্গানা সরকারের ‘হরিথা হরম’-এর অংশ। এই অভিযানের লক্ষ্য হলো, ‘দেশজুড়ে বৃক্ষ রোপণ করে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। আর দেশকে সবুজ থেকে আরও সবুজ করা।’
মহেশ বাবু তাঁর ২৫তম ছবির শুটিং করেছেন উত্তরাখন্ডের অন্তর্বর্তী রাজধানী শহর দেরাদুনে। উত্তরাখন্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিভেন্দ্র সিং রাউত দক্ষিণের এই সুপারস্টারের সঙ্গে দেখা করতে তখন ছবির সেটে যান। মহেশ বাবু দক্ষিণের সুপারস্টার হলেও দেশজুড়ে তাঁর অসংখ্য ভক্ত রয়েছে।
ফোন নম্বর বন্ধ। ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ কোনো মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হচ্ছে না। ফেসবুকে হঠাৎ উঁকি দিলেও ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো প্রশ্নের কোনো কথার উত্তর দিচ্ছেন না সারিকা। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এই মডেল ও অভিনয়শিল্পীকে। কোথায় তিনি, পরিচিতজনদের অনেকেরই এই প্রশ্ন? প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সারিকা আর তাঁর মায়ের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও কোনো লাভ হয়নি। সারিকা তাহলে কোথায়?
ডিরেক্টরস গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ও পরিচালক এস এ হক অলীকের নাটকে অভিনয় করেছেন সারিকা। তিনি বলেন, ‘প্রযোজকদের সংগঠন থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। ফোন করেছি, এসএমএসও পাঠিয়েছি—কিন্তু সারিকা কোনো উত্তর দেয়নি। আমি শুনেছি, কারও সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ নাই।’
অভিনয়জগতে সারিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু চিত্রনায়ক ইমন। একসঙ্গে তাঁরা দুজন বিজ্ঞাপনচিত্র আর নাটকে অভিনয় করেছেন। বিভিন্ন স্টেজ শোতে তাঁদের পারফর্ম করতে দেখা গেছে। সারিকার সঙ্গে তাঁর বন্ধু ইমনেরও নাকি অনেক দিন কোনো যোগাযোগ নেই। আজ শনিবার দুপুরে ইমন বলেন, ‘ফোনে কথা হতো না। শেষ কথা হয়েছে, তা-ও মাস দুয়েক আগে। এসএমএসে বেশি যোগাযোগ হতো। ওর যে আসলে কী হয়েছে, কিছুই বুঝি না! যথেষ্ট সম্ভাবনাময় একজন মডেল ও অভিনয়শিল্পী। একটু যদি সিরিয়াস হতো, তাহলে অনেক ভালো করতে পারত।’
এদিকে ‘অ-শিল্পীসুলভ আচরণ’-এর জন্য অভিনয় শিল্পী সংঘের সদস্য সারিকা সাবরিনকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করেছে টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টেলিপ্যাব)। ১ আগস্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকা অবস্থায় এই অভিনেত্রী কোনো নাটক, মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপনসহ সংগঠনের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। গত ১০ এপ্রিল সারিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন প্রযোজক মোহাম্মদ বোরহান খান। তাঁর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ জুলাই টেলিপ্যাবের সালিস বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সংগঠনের কার্যকরী কমিটিতে পাস হয় সিদ্ধান্তটি। সালিস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন টেলিপ্যাবের সভাপতি মামুনুর রশীদ, সাধারণ সম্পাদক ইরেশ যাকের, সালিস বৈঠকের আহ্বায়ক তারেখ মিন্টুসহ অনেকেই।
সাংগঠনিক বিবৃতি থেকে জানা যায়, গত ২১ মার্চ পাঁচটি নাটকের শুটিংয়ে নেপাল যাওয়ার কথা ছিল সারিকার। এর জন্য নির্মাতার কাছ থেকে অগ্রিম পারিশ্রমিক ৫০ হাজার টাকা নেন তিনি। সেই সঙ্গে দেশে ফেরার টিকিট এবং নাটকের চিত্রনাট্য বুঝে নেন। এর আগে ২০ মার্চ সারিকার সঙ্গে নির্মাতাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঠিক সময়ে বিমানবন্দর পৌঁছে যাবেন। কিন্তু সঠিক সময়ে বিমানবন্দরে শুটিং ইউনিট পৌঁছালেও সারিকা যাননি। এরপর সারিকাকে ছাড়াই নেপালে চলে যায় শুটিং ইউনিট। তাই পরিকল্পনায় থাকা সারিকাকে নিয়ে পাঁচটি নাটক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি, যার কারণে প্রযোজক বোরহান খান আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের গোলাবাড়ি গ্রাম। সেখানকার হাওর বিলাস হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকাযোগে ছুটলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের রউয়া বিলের দিকে। খানিকটা এগোনোর পর দেখলাম, একটি মাইজলা বক মাছের জন্য স্থির দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। দুর্লভ সেই বকটির ছবি তোলার সময় ওর প্রায় ১০ মিটার পেছনে তিনটি হাঁস ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ল। নৌকা কাছাকাছি যেতেই ওরা উড়ে গেল। আরেকটু পর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরও ১৫-২০টি হাঁসের দেখা মিলল।
রউয়া বিল থেকে চটাইন্না খাল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমের চটাইন্না বিলে গিয়ে একটি কান্দায় (উঁচু জায়গা) নামলাম। এটি পার হয়ে সামনে যেতেই হঠাৎ রউয়া বিলে দেখা সেই হাঁসের বিশাল একটি ঝাঁক উড়াল দিল।
টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা হাঁসগুলো পরিযায়ী পাখি নাইরলি হাঁস। জিরিয়া হাঁস, ইটাপেরি হাঁস বা গাঙ রৈব নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম গারগেনি (Garganey) বা ব্লু-উইঙ্গড টিল (Blue-winged Teal)।
নাইরলি হাঁসের গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। প্রজননকালে হাঁসা, হাঁসির পালকের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। হাঁসার গাঢ় বাদামি মাথার চাঁদি হয় কালো। চোখের ওপর থাকে সাদা চওড়া ভ্রুরেখা। মুখ ও ঘাড়-গলা হয় গাঢ় বাদামি। পিঠ, পেটের নিম্নাংশ ও লেজের তলা বাদামি এবং তাতে থাকে কালো কালো বুটি। সাদাটে পেটের দুপাশে ছোট ছোট রুপালি দাগ। ডানার ওপরটা ধূসর।
হাঁসির পালক বাদামি ও তাতে গাঢ় বুটির মতো থাকে। কিন্তু ভ্রুরেখা অস্পষ্ট। হাঁসা-হাঁসি নির্বিশেষে চোখ ঘন বাদামি ও চঞ্চু কালচে-বাদামি। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় হাঁসা ও হাঁসি দেখতে একই রকম, শুধু ডানার পালকে কিছুটা পার্থক্য থাকে।
নাইরলি হাঁস বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। মাঝারি থেকে বড় দলে বিচরণ করে। জলজ উদ্ভিদের বিচি, পাতা প্রিয় খাবার। তবে কদাচিৎ কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট এবং খোলকি প্রাণী, যেমন চিংড়ি ও কাঁকড়া ইত্যাদি খায়।
নাইরলি হাঁসের প্রজননকাল এপ্রিল-মে। এ সময় এরা মূল আবাস ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে মাটিতে তৃণলতার ওপর বাসা বানায়। হালকা পীতাভ রঙের ৮-১২টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২১-২৩ দিনে। বাচ্চাদের পালক গজায় ৩৫-৪৯ দিনে। এরপর নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে তারা। এদের আয়ুষ্কাল ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর।
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকার পাশে শিল্প-কারখানা স্থাপন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক বিশেষ দূত জন এইচ নক্স।
গত মঙ্গলবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত ওই বনটি জাতিসংঘ ঘোষিত রামসার এলাকা বা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে তা শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনের জন্যই হুমকি না। এই বনে বসবাসকারী বেঙ্গল টাইগার, ডলফিন ও অন্যান্য বিপদাপন্ন বন্য প্রাণীর অস্তিত্বের জন্যও হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, শুধু বন্য প্রাণী নয়, সুন্দরবনের ওপরে নির্ভরশীল ৬৫ লাখ মানুষের জীবিকা, স্বাস্থ্য, বসতি, খাদ্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাও এর ওপরে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে ৩২০টি শিল্প-কারখানাকে অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের মতামত ও যথাযথ পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে না। সুন্দরবনের পাশে যেসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, তা আর সম্প্রসারণ না করার নির্দেশ সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব তথ্য জাতিসংঘের কাছে জমা দেব। আশা করি, তারা আমাদের তথ্যের সঙ্গে একমত হবে।’
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, গত বছর বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের সংবেদনশীল এলাকার (বাফার জোন) মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানার অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা অমান্য করে শিল্প-কারখানা অনুমোদনের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। পরিবেশের প্রতীক সুন্দরবনে এই বিশৃঙ্খল শিল্পায়ন বিশ্বের পরিবেশের জন্য হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে অল্প সময়ের অর্থনৈতিক স্বপ্নপূরণের চেষ্টা ‘ভুল জিনিসকে স্বর্ণ ভেবে পেছনে ছোটার মতো’। একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হবে না। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়ন পেতে হলে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে—পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। সুন্দরবনের পাশে এসব শিল্পায়নের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের কথা শুনতে হবে। তিনি বলেন, যেসব মানুষ ওই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের টেকসই উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ম্যানগ্রোভ বন বায়ু ও পানিকে বিশুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছে। যার সুবিধা বনের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সর্বত্র ম্যানগ্রোভ বন ছড়িয়ে পড়ুক—এটা আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এর বাইরেও সুন্দরবন আমাদের সবার সামনে দুটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে—তা হচ্ছে আমরা কি এমন উন্নয়নের দিকে যাব, যা মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলবে? নাকি আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে শিল্পায়নের দিকে এগোব। আমরা কি একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাই, নাকি একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি চাই?
জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের চারপাশের শিল্প-কারখানার ব্যাপারে যেসব আপত্তি তুলছিল, তার যৌক্তিকতা আবারও প্রমাণিত হলো। আমরা আবারও বলব, সরকার যাতে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে, চারপাশের সব শিল্প-কারখানার অনুমোদন বাতিল করে। নয়তো সুন্দরবন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে, আর এ জন্য এই সরকার দায়ী থাকবে।
ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটা দ্বীপ। বলা হয়, ওকিনাওয়ার লোকেরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বাঁচে বেশি দিন। ওখানে অনেক শতবর্ষী লোকের দেখা মেলে। মেয়েরা বাঁচে পুরুষদের চেয়ে বেশি দিন; তাদের গড় আয়ু প্রায় ৯০ বছর।
সেখানকার মানুষের হৃদ্রোগ খুব কম হয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই, ক্যানসারও খুব একটা হয় না। এসবের পেছনে আসলে রহস্যটা কী? জাপানের একদল গবেষক তা খুঁজেও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কারণটা আর কিছুই না; তাদের খাদ্যাভ্যাস। ওখানকার লোকেরা রোজ একটি গাছকে তাদের খাবারের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। গাছটা হলো বড় এলাচির গাছ। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম আলপিনিয়া জেরামবেট, পরিবার জিঞ্জিবারেসি। আদাগোত্রীয় গাছের পাতা ও শিকড় খাবারের সঙ্গে খায় না এমন একটি লোকও নাকি সেখানে নেই। আবার রোজ খায় না, তেমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ গাছকে যেমন তারা খাদ্য হিসেবে খায়, গাছের পাতা দিয়ে চা বানায়, তেমনি এ গাছ থেকে বানানো ওষুধও তারা খায়। এই খাদ্যাভ্যাসটাই তাদের দীর্ঘজীবনের মূল চাবিকাঠি।
এমন একটি গাছ আমাদের দেশেও আছে। সে গাছের দেখা পেলাম লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই গ্রামের বাসিন্দা আলম সরকারের বাড়িতে। উঁচু দুটি ঝোপে অনেকগুলো গাছ আকাশের দিকে পাতা মেলে যেন তাদের বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। আলম সরকার বললেন, ‘এটা এলাচিগাছ। তবে আমরা বাজার থেকে যে বিদেশি এলাচি কিনে খাই, ওটা সে জাতের এলাচিগাছ না। এই এলাচিগাছের শুকনো ফল আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করি।’
এ গাছের ফল বাজারের এলাচির চেয়ে অনেক বড়। সে জন্য আলম সরকার এ গাছের নাম দিয়েছেন বড় এলাচি। বইপত্রেও নাম পেলাম বড় এলাচি।
ঘন সবুজ পাতার ঝোপে গাছের ডাঁটির মাথায় পাকা শুকনো ফলের কিছু থোকা তখনো ঝুলে ছিল। কড়ে মার্বেল আকারের গোল ফলের রং শুকিয়ে হলদে বাদামি হয়ে গেছে। খোসা মচমচে ও সূক্ষ্ম পশমে আবৃত। একটা ফল ছিঁড়তেই আঙুলে কিছু শুঙ্গ বিঁধে গেল। কিন্তু আঙুলের চাপে ফলটা ভাঙতে ভুল করলাম না। ভাঙতেই খোসার ভেতরে পেলাম এলাচির মতো কালো বিচি। বিচি ও খোসার ঘ্রাণ এলাচির মতোই।
আলম সরকার জানালেন, প্রায় চার বছর আগে তিনি পাশের পশ্চিম আমবাড়ি গ্রামের শাহদাতের মেয়ের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের বাড়িতে এলাচিগাছ আছে, সে গাছে এলাচি ধরছে। গাছপাগল আলম সরকার সেই বাড়ি থেকে দুটি চারা সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতে লাগান। বছরের মাথায় তাতে ফল ধরে। দ্রুত গাছের গোড়া থেকে নতুন অনেক চারা গজাতে থাকে। একসময় বড় ঝোপ হয়ে যায়। মাঘ মাসে চমৎকার ফুল ফোটে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই। ক্ষুদ্র ঝিনুক আকৃতির সাদাটে রঙের ফুলের মধ্যে হলদে কমলা ছোপ। এ জন্যই কিনা জানি না, এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Shell ginger. ফুল থেকে ফল হয়।
প্রথমে কাঁচা ফলের রং থাকে পাতার মতোই সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হলুদ, পরে কমলা রং ধারণ করে। শেষে ধূসর বাদামি হয়ে যায়। একটা ছড়ায় ১০-১৫টা ফল ধরে। আষাঢ়-শ্রাবণে ফল পাকে। এলাচির গুঁড়ার মতোই রান্নায় ব্যবহার করেন তা।
হৃদ্রোগ, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদি সারাতে এটা এক ওস্তাদ গাছ। মাথাব্যথা হলে এর কাঁচা পাতা মাথায় বেঁধে রাখলে দ্রুত উপশম হয়। হজমেও সাহায্য করে এই এলাচি।
প্রেমের সূত্র ধরে এক তরুণীকে নিয়ে সারা দিন বেড়িয়ে রাতে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ওঠেন তাঁর কথিত প্রেমিক। সেখানে ওই প্রেমিকসহ তাঁর সহযোগীরা তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের রেলস্টেশন সড়কের একটি হোটেলে ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, কুলাউড়া পৌর শহরের মধ্য চাতলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সামী আহমদ (২২), শ্রীপুরের মো. আল আমিন (২৩), সিলেটের মোগলাবাজারের শাহান আহমদ (২২), হোটেলের ব্যবস্থাপক নির্মল বর্ধন (৩৫) ও হোটেলের কর্মচারী খোকন মিয়া (২০)।
পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামী সাভারের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে সহকর্মী তরুণীর (২০) সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শুক্রবার সামী ওই তরুণীকে বেড়ানোর কথা বলে সিলেটে নিয়ে যান। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বেড়িয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা ট্রেনে কুলাউড়ায় পৌঁছে ওই হোটেলে ওঠেন। রাতে সামীসহ তাঁর সহযোগী আল আমিন, শাহান ও সিলেটের মোগলাবাজারের কাশেম (২২) তরুণীকে ধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে কাশেম পালিয়ে যান।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, অভাবের তাড়নায় বছরখানেক আগে তিনি সাভারের পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে মামলা করবেন।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিনয় ভূষণ রায় শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া সামী, আল আমিন ও শাহান ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তরুণীকে রোববার হাসপাতালে পাঠানো হবে। হোটেলের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভাগ্যবদলের আশায় তাঁদের কেউ তিন মাস, কেউ ছয় মাস, কেউবা এক বছর আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব বেশি দিন লাগেনি তাঁদের। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন প্রায় এক হাজার নারী। এর মধ্যে ১-৬ জুন পর্যন্তই এসেছেন ৮২ নারী।
দেশে ফিরে সরকারের কোনো সংস্থাকে পাশে পাননি ওই নারীরা। এমনকি পরিবারেও ঠাঁই হচ্ছে না অনেকের। সামাজিকভাবেও হেয় হতে হচ্ছে তাঁদের। ফিরে আসা নারীদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন তাঁরা। সরকারের পক্ষে কেউ বিমানবন্দরে তাঁদের খোঁজ নিতে যায়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে কেন দেশে ফিরে আসার দায় রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আলাদাভাবে নারীশ্রমিকদের জন্য কোনো কার্যক্রম নেই। তাঁর দাবি, বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে তাঁদের কর্মীরা বিদেশফেরত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করছেন।
সরকারি এই কর্মকর্তা সৌদি আরবে নারীশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর দায় চাপালে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এর জন্য এককভাবে দায়ী নয়। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নারী গৃহকর্মীরা সৌদি আরবে গেছেন। এ ঘটনায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব-২ শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তির আগে কোনো নারী শ্রমিক ফেরত এলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে ওই দেশের মালিককে। আর শরীরে ইস্তিরির পোড়া দাগ, হাত-পা ভাঙাসহ শরীরে যতই প্রমাণ থাকুক, দূতাবাসগুলো এসব সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরছে না। এর আগেই ওই নারীকে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে নির্যাতনের বিষয়টি আর প্রমাণ করা যাচ্ছে না। অথচ সরকার এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। তিনি বলেন, বিদেশফেরত নারীদের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো কার্যক্রম নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা নারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত দুই সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে সচিবের নেতৃত্বে একাধিক সভা হয়েছে। ফেরত আসা নারীদের বিষয়ে সরকারের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বায়রা থেকে তদারক কমিটি গঠন, বিদেশে পাঠানো প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অভিবাসন খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরত আসা নারীদের শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের সমাজে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে শুধু সৌদি আরব নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো থেকেও যাঁরা ফেরত আসছেন, তাঁদের বিষয়েও সরকারকে ভাবতে হবে।
লেবানন থেকে প্রায় এক বছর আগে দেশে ফেরেন ২৫ বছর বয়সী এক নারী গৃহকর্মী। তাঁর কোলে ছিল ১ মাস ১০ দিন বয়সী শিশু। তিনি যেখানে কাজ করতেন, ওই বাসার গৃহকর্তা শিশুটির বাবা। এই নারী জানান, লেবাননে যাওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা তাঁকে যৌন নির্যাতন করতে থাকেন। ওই ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি এটি বিশ্বাস করেননি। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উল্টো মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাঁকে দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন কর্মসূচির (ওকাপ) নিরাপদ আবাসে। সেখানে টানা কয়েক মাস ছিলেন তিনি। সংস্থাটি চিকিৎসার পাশাপাশি এই নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি লেবানন থেকে প্রতি দুই মাস পরপর ২৪ হাজার করে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা নিতেন স্বামী। এই নারী বলেন, ‘স্বামীই আমারে বিদেশ পাঠাইছিল, এহন স্বামী তাকাইয়্যাও দেহে না। বাপ-ভাইও চেনে না। বিদেশি বাচ্চা দেইখ্যা অন্যরা হাসে।’
সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফেরত আসা এক নারী রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি গ্রামে ফিরেছেন। ওই নারীর ভাই টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানালেন, বিদেশ যাওয়ার আগেই স্বামী তাঁর বোনকে ফেলে চলে গেছেন। সৌদিতে নয় মাস কাজ করলেও ছয় মাসের টাকা দেশে পাঠাতে পেরেছিলেন। বোন কবে সুস্থ, স্বাভাবিক হবে ঠিক নেই। এখন কে তাঁর দায়িত্ব নেবে, তা ভেবে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।
বেসরকারি সংস্থা ওকাপের কর্মকর্তা (কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার) শাহীনূর আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশফেরত নারীদের অনেককেই পরিবার নিতে চাচ্ছে না, কখনোবা ওই নারী নিজেই যেতে চাইছেন না। অনেকে সন্তান নিয়ে ফিরেছেন। এ অবস্থায় সামাজিকভাবে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ নারী সৌদি আরবে গেছেন। আর ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ৭ লাখ নারী। এই তথ্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অভিবাসনবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার।
নারী গৃহকর্মীদের ফিরে আসার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরত আসা নারীরা সবাই সরকারের বৈধ পথে বিদেশ গিয়েছিলেন। বর্তমানে নারীদের ফেরত আসার সংখ্যাটা বেড়েছে, কিন্তু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তার ইঙ্গিত তো আগে থেকেই ছিল। কোনো নারীর পরিবার যদি এই নারীদের নিতে না চায়, সেই পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্বও নিতে হবে সরকারকেই। আর পরিবার অপারগ হলে দীর্ঘ মেয়াদে ওই নারীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ সরকারের এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে কোনো নীতি নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যৌক্তিক একটি আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন উদ্বিগ্ন হতে হয়। এই আন্দোলনে এই পর্যন্ত বারবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আজ শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।
আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক সহসভাপতির ছবি দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ধ্যার পর কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যায়। তখন তাদের বাস ভাঙচুরের উসকানি দেওয়া হয়।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক ঘৃণ্য মতলব নিয়ে আজকে এই আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এখন তারা স্কুলের কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেশ বিশৃঙ্খল করতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। যারা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।
ছাত্রছাত্রীদের সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের শুভবুদ্ধির অনেকেই বলেছেন সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমাদ, আবুল মকসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন ।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রী কাদের আরও বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাসের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন। ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে আন্ডারপাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেন্ডার ছাড়াই সেনাবাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ যেগুলো করতে হয়, সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয় যাতে করে কোনো জটিলতা না থাকে। দ্রুত কাজগুলো শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে করে আধুনিক ডাম্বল স্পিডব্রেকার করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে স্কুল–কলেজের সামনে ডাম্বলস্পিড ব্রেকার করা হবে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট বাতিলসহ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে কিছুটা দেরিও হতে পারে।
সরকার অনুপ্রবেশকারীদের কেন আইনের আওতায় আনছে না, এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের ভূমিকা অবলোকন করছি। আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে তাদের ছবিও পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংগ্রহ করছে। তাদের গতিবিধিগুলো আমরা রাজনৈতিকভাবেও দূর থেকে দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর নেওয়া যাবে না।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘পুলিশ নানা অপমান–অপদস্থ এবং হয়রানির শিকার হয়ে ধৈর্যের প্রয়াস দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক অপশক্তির মদদ যে আছে, সেটা আমরা কাছ থেকে লক্ষ করছি। আমরা ধৈর্য ধরছি। আমাদের বিশ্বাস কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’
শান্তির স্বার্থে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করে কাদের বলেন, ‘শিক্ষক-অভিভাবক তাদের আমি গতকালও অনুরোধ করেছি। শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি সবাই এই ব্যাপারে হাত বাড়াবে। আমরা তাদের আবার অনুরোধ করব। দয়া করে শান্তির স্বার্থে আমাদের এই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সবাই যদি সমন্বিতভাবে চেষ্টা করি, ভালোভাবে বোঝালে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ভবিষ্যতের কথা অনুধাবন করে ঘরে ফিরে যাবে বলে আমরা আশা করি।’
জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালু রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, পিয়ংইয়ং জাহাজ থেকে জাহাজে অবৈধ তেলজাতীয় পণ্য স্থানান্তর বৃদ্ধি করেছে এবং বিদেশে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এই গোপনীয় প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জমা দেয়।
উত্তর কোরিয়া এখনো প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেয়নি।
গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্ক ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান সত্ত্বেও পিয়ংইয়ং নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।
একজন অজ্ঞাতনামা মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের একটি সাইটে অব্যাহত কর্মতৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া এর পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলো বন্ধ করেনি এবং সাগরে জাহাজ থেকে জাহাজে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও কয়লা অবৈধ স্থানান্তর করছে।’
এতে আরও বলা হয়, লিবিয়া, সুদান ও ইয়েমেনর কাছে ‘পিয়ংইয়ং বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও হালকা অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।’
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন, উত্তর কোরিয়ার কার্যক্রম আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করেছে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের ব্যাপারে তিনি ‘আশাবাদী’।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, পিকআপটির চালকের আসনে ছিল কিশোর হেলপার (চালকের সহকারী)। সে মাদকসেবী; স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তও করছিল সে। পরে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সখীপুর-সাগরদিঘি সড়কের বেলতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া আফরিন (১৫)। সে উপজেলার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আটক হেলপারের নাম তানভীর হাসান (১৫)। তার বাড়ি একই উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিকেলের দিকে সাদিয়াকে দাফন করা হয়েছে।
নিহত ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় সাদিয়া তার ফুপুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে হেঁটে আসছিল। সকাল ১০টার দিকে বেলতলী বাজারে পৌঁছালে ওই পিকআপের ধাক্কায় তার মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।
আটক তানভীর প্রথম আলোকে বলে, সে কচুয়া থেকে কয়েকজন যুবককে তুলে উপজেলার কুতুবপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলতলী এলাকায় পৌঁছালে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে আসা ওই মেয়েটিকে পিকআপে থাকা যুবকেরা ‘হিপহিপ হুররে’ বলে উত্ত্যক্ত করে। এ সময় তানভীর নিজেও মেয়েটির পাশ দিয়ে পিকআপ চালায়। একসময় পিকআপের পেছনের অংশ সাদিয়ার মাথায় জোরে আঘাত করে। তানভীরের দাবি, ওই যুবকদের হইহুল্লোড় সে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে ওই যুবকদের চিনতে পারেনি।
কিন্তু পুলিশের দাবি, আটক তানভীর নিজেও একজন উত্ত্যক্তকারী ও মাদকসেবী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ওই পিকআপের মূল চালক লাবলু মিয়ার কাছ থেকে তানভীর পিকআপটি নিয়ে বের হয়।
এদিকে ঘটনার পরপর সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সখীপুর-সাগরদিঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে চার ঘণ্টা ওই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এলাকাবাসী গাড়ির আসল চালক ও মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
পরে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী সরকার ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন আলী আন্দোলনকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে বেলা দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে কাল শনিবার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানা গেছে।
ওসি এস এম তুহীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। গাড়ির চালকের সহকারী তানভীরকে থানায় রাখা হয়েছে। মূল চালক লাবলু মিয়া ও গাড়ির মালিক উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের রাজ্জাক বিপ্লবকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বান্দরবানে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে গতকাল শুক্রবার রাতে উজানীপাড়ার এক সাবেক কার্বারী (পাড়াপ্রধান) ও তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কার্বারীর আরেক আত্মীয়কে মারাত্মক আহত অবস্থায় সেনাসদস্যরা উদ্ধার করেছেন বলে সেনাবাহিনী রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন।
পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে উজানীপাড়ার সাবেক কার্বারী কে অং প্রু মারমার (৬০) বাড়ির ওপর নতুন কার্বারীর লোকজন হামলা চালায়। হামলায় সাবেক কার্বারী কে অং প্রু সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন। তাঁর ছেলে মং এচিং মারমাকে (৩২) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে সেনাসদস্যরা তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাড়ার নিচে জঙ্গলে খুঁজে পান। একজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম জানা যায়নি।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেছেন, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি উজানীপাড়ায় নতুন কার্বারী ও পুরোনো কার্বারীর মধ্যে গত বছর থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। গত বছর নতুন কার্বারীর আত্মীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুসিংমং মারমাকে হত্যা করা হয়। তাঁকে হত্যার অভিযোগে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলে কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর নতুন কার্বারীর সঙ্গে বিরোধ আবার চরম আকার ধারণ করে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, পাড়াটি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। লাশ উদ্ধারে তিনি পাড়ার দিকে যাচ্ছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, সেনাবাহিনী সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজানীপাড়া গেছে। সেখান থেকে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত আরেকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে। পাড়ার সাবেক ও বর্তমান কার্বারীর লোকজনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, তারা তো নিজের জন্য কিছু চায়নি। তাদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন নয়। তারা চেয়েছে নিরাপদ সড়ক।
বাসচাপায় নিহত দিয়া খানমের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে আজ শুক্রবার সকালে তাদের মহাখালীর বাড়িতে গিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এরশাদ। সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নানা মন্তব্যের সমালোচনা করেন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘শাজাহান খানের হাসি দেখে দুঃখ পেয়েছি। একটা ছেলে মারা গেছে, একটা মেয়ে মারা গেছে। তিনি হাসিমুখে ঘটনাকে তুলনা করছেন ভারতের দুর্ঘটনার সঙ্গে। এই যদি তাঁর প্রতিক্রিয়া, কী বলার আছে।’
সড়ক পরিবহন আইনকে আরও কঠোর করার দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকতে আমি মৃত্যুদণ্ডের আইন করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে আইনটি পরে বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু যারা সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে, তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘আমার ছেলে যদি আজকে গাড়িতে করে স্কুলে যেত, সর্বক্ষণ আমি চিন্তায় থাকতাম ছেলে বাসায় ফিরবে কি না। মৃত্যু দেখলে তো আমি আত্মহত্যা করতাম। মৃত ছেলের মুখ দেখতে চাই না আমি।’
গতকাল শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করতে সমস্যায় পড়েন। অনেকের প্রোফাইল লোড হতে সমস্যা দেখা যায়। অবশ্য এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সমস্যায় পড়েন। অনেকেই তাঁদের সমস্যার কথা খুদে বার্তার সাইট টুইটারে প্রকাশ করেন। ফলে টুইটারে #facebookdown ট্রেন্ড উঠে আসে। ডেইলি মেইল ও খালিজ টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যবহারকারী ফেসবুকে কোনো পোস্ট দিতে গেলে ‘সরি সামথিং ওয়েন্ট রং’ বার্তা দেখায়।
প্রায় ৪৩ শতাংশ ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন, ফেসবুক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেকে আংশিক অসুবিধার কথা বলেন।
ডাউনডিটেকটর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু এলাকায় সমস্যা দেখা দেয়। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন পেরু, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ও ব্রাজিলের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। অনেকে প্রোফাইল দেখতে পারেননি। এ ছাড়া ফেসবুকে ছবি দেখতে ও অ্যাপ ব্যবহার করতে সমস্যা হয়।
ঠিক কী কারণে হঠাৎ ফেসবুক গায়েব হয়ে গিয়েছিল, তা জানায়নি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। অনেকেই ধারণা করছেন, ফেসবুক হালনাগাদ বা আপডেটের কারণে এ সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।
ই-মেইলটার শিরোনামই অদ্ভুত। দেখলেই চমকে যাবেন নিশ্চিত। কারণ, ই-মেইলের শিরোনামেই আছে আপনার ব্যবহার করা একটি পাসওয়ার্ড এবং আপনার ইউজার নেম। না খুলে যাবেন কোথায়!! ‘ঘরের কথা পরে জানল ক্যামনে’—এই ভেবে ই-মেইলটা খুললেই আঁতকে উঠবেন।
কারণ আর কিছু না, তা হলো এই ই-মেইলটা সাইবার চাঁদাবাজদের এক নতুন ভয়াবহ কৌশল।
কম্পিউটার নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা ও শিক্ষকতা করি। এ জন্য সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধ নিয়ে নিয়মিত কাজ করতে হয়, শেখাতে হয় শিক্ষার্থীদের সাইবার অপরাধের নানা কৌশল। কিন্তু এই নতুন কায়দাটা দেখে আমিও অবাক হয়ে গেছি। এটা সফল হতে বাধ্য। কারণ, এখানে চাঁদাবাজেরা মানুষের মনস্তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে ভীতিকর একটা ই-মেইলের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেল করছে। আসুন দেখা যাক, ঘটনাটা কী!
ই-মেইলে যা থাকে
ই-মেইলের শুরু হয় এভাবে (ইংরেজি থেকে সহজবোধ্য বাংলায় লিখছি)—‘আপনার পাসওয়ার্ড হলো অমুক। আপনি আমাকে চেনেন না, কিন্তু আপনার সবকিছু আমার জানা, আপনারই দুর্ভাগ্য যে আমার হাতে আপনার সম্পর্কে গোপন তথ্য এসে গেছে।’
এরপরেই চলে যায় হুমকির অংশে—
‘আপনি অমুক ভিডিও/ছবির সাইট ভিজিট করেছেন (বুঝতেই পারছেন কী রকমের “ভিডিও” সাইট হতে পারে এটা) যেখানে আমরা ম্যালওয়ার বসিয়ে রেখেছিলাম। ওই সাইটে যাওয়ামাত্র আপনার কম্পিউটারে সেটা ইনস্টল হয়ে গেছে আর আপনার কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ এসে গেছে আমার হাতে। সেটা কাজে লাগিয়ে আপনার কম্পিউটারের যাবতীয় কর্মকাণ্ড আমরা রেকর্ড করতে পেরেছি। এর সঙ্গে সঙ্গে আপনার ওয়েবক্যাম চালু করে আপনার ভিডিও আমরা রেকর্ড করেছি। আমরা এখন এমন একটা ভিডিও তৈরি করেছি, যার বাঁ পাশে আছে আপনি গোপনে বসে বসে যেসব দুষ্টু ভিডিও দেখছেন সেটা, আর ডান পাশে আছে সেই ভিডিও দেখে আপনি নিজে যা দুষ্টু কাজ করছিলেন, তার ভিডিও। আপনার সব ফ্রেন্ড ও কনট্যাক্ট লিস্টও আমাদের হাতে এসে গেছে।
এখন আপনার হাতে অপশন দুটি—কিছুই না করে বসে থাকতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে এক দিনের মাথায় আপনার বন্ধুবান্ধব, বউ-পরিবার, বস—সবার কাছে পৌঁছে যাবে এই ভিডিওর কপি। আর অন্য অপশন হলো, মান-সম্মান বাঁচাতে আপনি আমাদের ২৭০০ ডলার পাঠাবেন, বিটকয়েনের মাধ্যমে, অমুক ঠিকানায়। এই ই-মেইলে একটা গোপন পিক্সেল বসানো আছে। কাজেই আপনি ই-মেইলটা পড়েছেন তা আমরা জানি। যদি এক দিনের মধ্যে টাকাটা দিতে না পারেন, তাহলে কিন্তু আপনার হাঁড়ি আমরা হাটে ভাঙবই। এই কাজে অনেক সময় দিয়েছি আমি, কাজেই টাকা না দিয়ে যাবেন কোথায়! আর খবরদার, কাউকে জানাবেন না, জানালেই কিন্তু ভিডিও ছেড়ে দেব।’
আর যদি নিশ্চিত হতে চান এই ই-মেইলটা আসল কি না, ইয়েস বলে জবাব দেন। নমুনা হিসেবে পাঁচজন বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেব আপনার এই দুষ্টু ভিডিওটি।
পুলিশের কাছে গিয়ে কোনো লাভ নেই। কারণ, আমি ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাজেই আকাম–কুকামের এসব প্রমাণ সবার কাছে পাঠাতে না চাইলে জলদি পয়সা পাঠান। পয়সা পেলেই আমরা ভিডিওটা ডিলিট করে দেব।’
এই হলো ক্রিমিনাল ব্যাটার দেওয়া হুমকি।
আপনি কি ভয় পাবেন?
এখন প্রশ্ন হলো, আপনার কি ভয় পাওয়া উচিত? দুষ্টু সাইটে যদি না–ও গিয়ে থাকেন, আপনার ওয়েবক্যাম দিয়ে আপনার নানা সময়ের ছবি কি আসলেই কেউ তুলে রেখেছে? এই হুমকির বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু? চাঁদাবাজ অপরাধী কিন্তু শুরুতেই বড় একটা কাজ করে রেখেছে, আপনার ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দেখিয়ে দিয়েছে, যাতে করে আপনি বিশ্বাস করে ফেলেন তার কথা। আপনার গোপন পাসওয়ার্ড যদি ব্যাটা জানে, নির্ঘাত তার বাকি কথাও সত্যি!! এখন কী করবেন? বিটকয়েন কিনতে দৌড়াবেন? নাকি বনবাসে যাবেন?
কোনোটাই না! একেবারে নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। কেন? বলছি এখনই।
আপনার যে ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড দেখিয়ে আপনাকে কনভিন্স করছে হ্যাকার, সেটা সত্যি বটে। কিন্তু ঘরের কথা পরে জানল ক্যামনে?
ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে খুব বড় বড় কিছু পাসওয়ার্ড ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। লিংকড-ইন, বিটলি—এসব প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড চুরি গেছে। আর ডার্ক ওয়েবে এসব পাসওয়ার্ডের তালিকা গেছে ছড়িয়ে। ফলে অপরাধীদের হাতে আপনার লিংকড-ইনের বা অন্য সাইটের (পুরোনো) পাসওয়ার্ড আছে বটে। এসব কোম্পানি বছরখানেক আগেই ব্যাপারটা সবাইকে জানিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল, ফলে অধিকাংশ মানুষই পাসওয়ার্ড পাল্টে ফেলেছেন। (যদি না পাল্টান, তাহলে জলদি পাল্টে ফেলুন)। কিন্তু চাঁদাবাজ এটার সুযোগ নিয়েছে, শুরুতেই আপনার পুরোনো সেই পাসওয়ার্ডের কথা বলে আপনাকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। আপনি অন্য কথায় হয়তো বিশ্বাস করতেন না, কিন্তু আপনার গোপন একটা তথ্য দেখিয়ে আপনাকে সহজেই বিভ্রান্ত করে ফেলেছে চাঁদাবাদ। হয়তো আপনি বিশ্বাস করে বসেছেন, আসলেই আপনার ও রকম ভিডিও বানিয়ে ফেলেছে হ্যাকাররা, আর এখনই সবার কাছে ফাঁস করে দেবে।
আসল ঘটনা হলো, এ রকম কোনো ভিডিওই তাদের হাতে নেই, কেবল কানপাতলা লোকজনকে ঘোল খাইয়ে তাদের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতানোই এই চাঁদাবাজের কাজ। আমি নিশ্চিত, প্রচুর লোকজন এ রকম ই-মেইলে বিশ্বাস করবে আর হাজার হাজার টাকা পাঠাবে এই বিটকয়েন অ্যাড্রেসের মাধ্যমে। এই প্রতারণা কয়েক মাস ধরেই চলছে—আমার একজন সহকর্মী গবেষক এই চাঁদাবাজ গ্রুপটাকে মনিটর করছে কয়েক মাস ধরে। জুলাই মাস থেকে এই রকম প্রতারণার জন্য লাখ লাখ ই-মেইল ছেড়েছে প্রতারকেরা।
অনলাইনে নিরাপদ থাকবেন কী করে?
এই প্রতারণাটা না হয় বানোয়াট একটা ব্যাপার নিয়ে, কিন্তু অনলাইনে নিরাপদ থাকবেন কীভাবে? আপনার এ কম্পিউটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, নিয়মিতভাবে অ্যান্টিভাইরাস হালনাগাদ করে রাখুন। আর অচেনা অজানা ওয়েবসাইটে না যাওয়াই ভালো; তার সঙ্গে সঙ্গে ই–মেইলে কেউ কোনো লিংকে ক্লিক করতে বললে নিশ্চিত না হয়ে ক্লিক করবেন না। একই কথা চলে মেসেঞ্জারে বা অন্যভাবে পাঠানো বার্তার ক্ষেত্রেও—এমনকি পরিচিত মানুষ কেউ লিংক পাঠালেও নিশ্চিত না হয়ে সেখানে ক্লিক করবেন না। কারণ, সাইবার অপরাধীরা এভাবেই অনেক সময় পরিচিত মানুষের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে সেখান থেকে ফ্রেন্ডলিস্টের সবাইকে মেসেজ পাঠায় তাদের অ্যাকাউন্ট দখল করার জন্য। কোনো ওয়েবসাইটে যাওয়ার পর ওয়েবক্যামের মাধ্যমে ভিডিও রেকর্ডের সমস্যার সমাধানটা খুব সহজ। ওয়েবক্যামের ওপরে একটা কাগজ বা কালো টেপ লাগিয়ে রাখুন, যখন ভিডিও চ্যাট করবেন আসলেই, তখনই কেবল সেটা সরিয়ে নেবেন। এতে করে আপনার কম্পিউটারে ম্যালওয়ার ঢুকে গেলেও ওয়েবক্যাম দিয়ে রেকর্ড করতে পারবে না কেউ। আর আপনার পাসওয়ার্ড বা ইউজার নেম ডার্ক ওয়েবে ছড়িয়ে গেছে কি না, তা যাচাই করতে হলে এই সাইটে দেখতে পারেন
সাইবার চাঁদাবাজদের বিশ্বাস করবেন না, প্রতিহত করুন তাদের সব প্রতারণার ফাঁদ।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম, যুক্তরাষ্ট্র।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের গোলাবাড়ি গ্রাম। সেখানকার হাওর বিলাস হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকাযোগে ছুটলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের রউয়া বিলের দিকে। খানিকটা এগোনোর পর দেখলাম, একটি মাইজলা বক মাছের জন্য স্থির দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। দুর্লভ সেই বকটির ছবি তোলার সময় ওর প্রায় ১০ মিটার পেছনে তিনটি হাঁস ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ল। নৌকা কাছাকাছি যেতেই ওরা উড়ে গেল। আরেকটু পর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরও ১৫-২০টি হাঁসের দেখা মিলল।
রউয়া বিল থেকে চটাইন্না খাল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমের চটাইন্না বিলে গিয়ে একটি কান্দায় (উঁচু জায়গা) নামলাম। এটি পার হয়ে সামনে যেতেই হঠাৎ রউয়া বিলে দেখা সেই হাঁসের বিশাল একটি ঝাঁক উড়াল দিল।
টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা হাঁসগুলো পরিযায়ী পাখি নাইরলি হাঁস। জিরিয়া হাঁস, ইটাপেরি হাঁস বা গাঙ রৈব নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম গারগেনি (Garganey) বা ব্লু-উইঙ্গড টিল (Blue-winged Teal)।
নাইরলি হাঁসের গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। প্রজননকালে হাঁসা, হাঁসির পালকের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। হাঁসার গাঢ় বাদামি মাথার চাঁদি হয় কালো। চোখের ওপর থাকে সাদা চওড়া ভ্রুরেখা। মুখ ও ঘাড়-গলা হয় গাঢ় বাদামি। পিঠ, পেটের নিম্নাংশ ও লেজের তলা বাদামি এবং তাতে থাকে কালো কালো বুটি। সাদাটে পেটের দুপাশে ছোট ছোট রুপালি দাগ। ডানার ওপরটা ধূসর।
হাঁসির পালক বাদামি ও তাতে গাঢ় বুটির মতো থাকে। কিন্তু ভ্রুরেখা অস্পষ্ট। হাঁসা-হাঁসি নির্বিশেষে চোখ ঘন বাদামি ও চঞ্চু কালচে-বাদামি। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় হাঁসা ও হাঁসি দেখতে একই রকম, শুধু ডানার পালকে কিছুটা পার্থক্য থাকে।
নাইরলি হাঁস বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। মাঝারি থেকে বড় দলে বিচরণ করে। জলজ উদ্ভিদের বিচি, পাতা প্রিয় খাবার। তবে কদাচিৎ কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট এবং খোলকি প্রাণী, যেমন চিংড়ি ও কাঁকড়া ইত্যাদি খায়।
নাইরলি হাঁসের প্রজননকাল এপ্রিল-মে। এ সময় এরা মূল আবাস ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে মাটিতে তৃণলতার ওপর বাসা বানায়। হালকা পীতাভ রঙের ৮-১২টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২১-২৩ দিনে। বাচ্চাদের পালক গজায় ৩৫-৪৯ দিনে। এরপর নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে তারা। এদের আয়ুষ্কাল ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর।
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকার পাশে শিল্প-কারখানা স্থাপন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক বিশেষ দূত জন এইচ নক্স।
গত মঙ্গলবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত ওই বনটি জাতিসংঘ ঘোষিত রামসার এলাকা বা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে তা শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনের জন্যই হুমকি না। এই বনে বসবাসকারী বেঙ্গল টাইগার, ডলফিন ও অন্যান্য বিপদাপন্ন বন্য প্রাণীর অস্তিত্বের জন্যও হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, শুধু বন্য প্রাণী নয়, সুন্দরবনের ওপরে নির্ভরশীল ৬৫ লাখ মানুষের জীবিকা, স্বাস্থ্য, বসতি, খাদ্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাও এর ওপরে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে ৩২০টি শিল্প-কারখানাকে অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের মতামত ও যথাযথ পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে না। সুন্দরবনের পাশে যেসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, তা আর সম্প্রসারণ না করার নির্দেশ সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব তথ্য জাতিসংঘের কাছে জমা দেব। আশা করি, তারা আমাদের তথ্যের সঙ্গে একমত হবে।’
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, গত বছর বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের সংবেদনশীল এলাকার (বাফার জোন) মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানার অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা অমান্য করে শিল্প-কারখানা অনুমোদনের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। পরিবেশের প্রতীক সুন্দরবনে এই বিশৃঙ্খল শিল্পায়ন বিশ্বের পরিবেশের জন্য হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে অল্প সময়ের অর্থনৈতিক স্বপ্নপূরণের চেষ্টা ‘ভুল জিনিসকে স্বর্ণ ভেবে পেছনে ছোটার মতো’। একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হবে না। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়ন পেতে হলে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে—পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। সুন্দরবনের পাশে এসব শিল্পায়নের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের কথা শুনতে হবে। তিনি বলেন, যেসব মানুষ ওই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের টেকসই উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ম্যানগ্রোভ বন বায়ু ও পানিকে বিশুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছে। যার সুবিধা বনের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সর্বত্র ম্যানগ্রোভ বন ছড়িয়ে পড়ুক—এটা আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এর বাইরেও সুন্দরবন আমাদের সবার সামনে দুটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে—তা হচ্ছে আমরা কি এমন উন্নয়নের দিকে যাব, যা মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলবে? নাকি আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে শিল্পায়নের দিকে এগোব। আমরা কি একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাই, নাকি একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি চাই?
জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের চারপাশের শিল্প-কারখানার ব্যাপারে যেসব আপত্তি তুলছিল, তার যৌক্তিকতা আবারও প্রমাণিত হলো। আমরা আবারও বলব, সরকার যাতে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে, চারপাশের সব শিল্প-কারখানার অনুমোদন বাতিল করে। নয়তো সুন্দরবন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে, আর এ জন্য এই সরকার দায়ী থাকবে।
ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটা দ্বীপ। বলা হয়, ওকিনাওয়ার লোকেরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বাঁচে বেশি দিন। ওখানে অনেক শতবর্ষী লোকের দেখা মেলে। মেয়েরা বাঁচে পুরুষদের চেয়ে বেশি দিন; তাদের গড় আয়ু প্রায় ৯০ বছর।
সেখানকার মানুষের হৃদ্রোগ খুব কম হয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই, ক্যানসারও খুব একটা হয় না। এসবের পেছনে আসলে রহস্যটা কী? জাপানের একদল গবেষক তা খুঁজেও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কারণটা আর কিছুই না; তাদের খাদ্যাভ্যাস। ওখানকার লোকেরা রোজ একটি গাছকে তাদের খাবারের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। গাছটা হলো বড় এলাচির গাছ। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম আলপিনিয়া জেরামবেট, পরিবার জিঞ্জিবারেসি। আদাগোত্রীয় গাছের পাতা ও শিকড় খাবারের সঙ্গে খায় না এমন একটি লোকও নাকি সেখানে নেই। আবার রোজ খায় না, তেমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ গাছকে যেমন তারা খাদ্য হিসেবে খায়, গাছের পাতা দিয়ে চা বানায়, তেমনি এ গাছ থেকে বানানো ওষুধও তারা খায়। এই খাদ্যাভ্যাসটাই তাদের দীর্ঘজীবনের মূল চাবিকাঠি।
এমন একটি গাছ আমাদের দেশেও আছে। সে গাছের দেখা পেলাম লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই গ্রামের বাসিন্দা আলম সরকারের বাড়িতে। উঁচু দুটি ঝোপে অনেকগুলো গাছ আকাশের দিকে পাতা মেলে যেন তাদের বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। আলম সরকার বললেন, ‘এটা এলাচিগাছ। তবে আমরা বাজার থেকে যে বিদেশি এলাচি কিনে খাই, ওটা সে জাতের এলাচিগাছ না। এই এলাচিগাছের শুকনো ফল আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করি।’
এ গাছের ফল বাজারের এলাচির চেয়ে অনেক বড়। সে জন্য আলম সরকার এ গাছের নাম দিয়েছেন বড় এলাচি। বইপত্রেও নাম পেলাম বড় এলাচি।
ঘন সবুজ পাতার ঝোপে গাছের ডাঁটির মাথায় পাকা শুকনো ফলের কিছু থোকা তখনো ঝুলে ছিল। কড়ে মার্বেল আকারের গোল ফলের রং শুকিয়ে হলদে বাদামি হয়ে গেছে। খোসা মচমচে ও সূক্ষ্ম পশমে আবৃত। একটা ফল ছিঁড়তেই আঙুলে কিছু শুঙ্গ বিঁধে গেল। কিন্তু আঙুলের চাপে ফলটা ভাঙতে ভুল করলাম না। ভাঙতেই খোসার ভেতরে পেলাম এলাচির মতো কালো বিচি। বিচি ও খোসার ঘ্রাণ এলাচির মতোই।
আলম সরকার জানালেন, প্রায় চার বছর আগে তিনি পাশের পশ্চিম আমবাড়ি গ্রামের শাহদাতের মেয়ের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের বাড়িতে এলাচিগাছ আছে, সে গাছে এলাচি ধরছে। গাছপাগল আলম সরকার সেই বাড়ি থেকে দুটি চারা সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতে লাগান। বছরের মাথায় তাতে ফল ধরে। দ্রুত গাছের গোড়া থেকে নতুন অনেক চারা গজাতে থাকে। একসময় বড় ঝোপ হয়ে যায়। মাঘ মাসে চমৎকার ফুল ফোটে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই। ক্ষুদ্র ঝিনুক আকৃতির সাদাটে রঙের ফুলের মধ্যে হলদে কমলা ছোপ। এ জন্যই কিনা জানি না, এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Shell ginger. ফুল থেকে ফল হয়।
প্রথমে কাঁচা ফলের রং থাকে পাতার মতোই সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হলুদ, পরে কমলা রং ধারণ করে। শেষে ধূসর বাদামি হয়ে যায়। একটা ছড়ায় ১০-১৫টা ফল ধরে। আষাঢ়-শ্রাবণে ফল পাকে। এলাচির গুঁড়ার মতোই রান্নায় ব্যবহার করেন তা।
হৃদ্রোগ, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদি সারাতে এটা এক ওস্তাদ গাছ। মাথাব্যথা হলে এর কাঁচা পাতা মাথায় বেঁধে রাখলে দ্রুত উপশম হয়। হজমেও সাহায্য করে এই এলাচি।
প্রেমের সূত্র ধরে এক তরুণীকে নিয়ে সারা দিন বেড়িয়ে রাতে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ওঠেন তাঁর কথিত প্রেমিক। সেখানে ওই প্রেমিকসহ তাঁর সহযোগীরা তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের রেলস্টেশন সড়কের একটি হোটেলে ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, কুলাউড়া পৌর শহরের মধ্য চাতলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সামী আহমদ (২২), শ্রীপুরের মো. আল আমিন (২৩), সিলেটের মোগলাবাজারের শাহান আহমদ (২২), হোটেলের ব্যবস্থাপক নির্মল বর্ধন (৩৫) ও হোটেলের কর্মচারী খোকন মিয়া (২০)।
পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামী সাভারের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে সহকর্মী তরুণীর (২০) সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শুক্রবার সামী ওই তরুণীকে বেড়ানোর কথা বলে সিলেটে নিয়ে যান। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বেড়িয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা ট্রেনে কুলাউড়ায় পৌঁছে ওই হোটেলে ওঠেন। রাতে সামীসহ তাঁর সহযোগী আল আমিন, শাহান ও সিলেটের মোগলাবাজারের কাশেম (২২) তরুণীকে ধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে কাশেম পালিয়ে যান।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, অভাবের তাড়নায় বছরখানেক আগে তিনি সাভারের পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে মামলা করবেন।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিনয় ভূষণ রায় শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া সামী, আল আমিন ও শাহান ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তরুণীকে রোববার হাসপাতালে পাঠানো হবে। হোটেলের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভাগ্যবদলের আশায় তাঁদের কেউ তিন মাস, কেউ ছয় মাস, কেউবা এক বছর আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব বেশি দিন লাগেনি তাঁদের। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন প্রায় এক হাজার নারী। এর মধ্যে ১-৬ জুন পর্যন্তই এসেছেন ৮২ নারী।
দেশে ফিরে সরকারের কোনো সংস্থাকে পাশে পাননি ওই নারীরা। এমনকি পরিবারেও ঠাঁই হচ্ছে না অনেকের। সামাজিকভাবেও হেয় হতে হচ্ছে তাঁদের। ফিরে আসা নারীদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন তাঁরা। সরকারের পক্ষে কেউ বিমানবন্দরে তাঁদের খোঁজ নিতে যায়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে কেন দেশে ফিরে আসার দায় রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আলাদাভাবে নারীশ্রমিকদের জন্য কোনো কার্যক্রম নেই। তাঁর দাবি, বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে তাঁদের কর্মীরা বিদেশফেরত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করছেন।
সরকারি এই কর্মকর্তা সৌদি আরবে নারীশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর দায় চাপালে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এর জন্য এককভাবে দায়ী নয়। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নারী গৃহকর্মীরা সৌদি আরবে গেছেন। এ ঘটনায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব-২ শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তির আগে কোনো নারী শ্রমিক ফেরত এলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে ওই দেশের মালিককে। আর শরীরে ইস্তিরির পোড়া দাগ, হাত-পা ভাঙাসহ শরীরে যতই প্রমাণ থাকুক, দূতাবাসগুলো এসব সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরছে না। এর আগেই ওই নারীকে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে নির্যাতনের বিষয়টি আর প্রমাণ করা যাচ্ছে না। অথচ সরকার এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। তিনি বলেন, বিদেশফেরত নারীদের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো কার্যক্রম নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা নারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত দুই সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে সচিবের নেতৃত্বে একাধিক সভা হয়েছে। ফেরত আসা নারীদের বিষয়ে সরকারের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বায়রা থেকে তদারক কমিটি গঠন, বিদেশে পাঠানো প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অভিবাসন খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরত আসা নারীদের শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের সমাজে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে শুধু সৌদি আরব নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো থেকেও যাঁরা ফেরত আসছেন, তাঁদের বিষয়েও সরকারকে ভাবতে হবে।
লেবানন থেকে প্রায় এক বছর আগে দেশে ফেরেন ২৫ বছর বয়সী এক নারী গৃহকর্মী। তাঁর কোলে ছিল ১ মাস ১০ দিন বয়সী শিশু। তিনি যেখানে কাজ করতেন, ওই বাসার গৃহকর্তা শিশুটির বাবা। এই নারী জানান, লেবাননে যাওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা তাঁকে যৌন নির্যাতন করতে থাকেন। ওই ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি এটি বিশ্বাস করেননি। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উল্টো মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাঁকে দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন কর্মসূচির (ওকাপ) নিরাপদ আবাসে। সেখানে টানা কয়েক মাস ছিলেন তিনি। সংস্থাটি চিকিৎসার পাশাপাশি এই নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি লেবানন থেকে প্রতি দুই মাস পরপর ২৪ হাজার করে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা নিতেন স্বামী। এই নারী বলেন, ‘স্বামীই আমারে বিদেশ পাঠাইছিল, এহন স্বামী তাকাইয়্যাও দেহে না। বাপ-ভাইও চেনে না। বিদেশি বাচ্চা দেইখ্যা অন্যরা হাসে।’
সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফেরত আসা এক নারী রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি গ্রামে ফিরেছেন। ওই নারীর ভাই টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানালেন, বিদেশ যাওয়ার আগেই স্বামী তাঁর বোনকে ফেলে চলে গেছেন। সৌদিতে নয় মাস কাজ করলেও ছয় মাসের টাকা দেশে পাঠাতে পেরেছিলেন। বোন কবে সুস্থ, স্বাভাবিক হবে ঠিক নেই। এখন কে তাঁর দায়িত্ব নেবে, তা ভেবে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।
বেসরকারি সংস্থা ওকাপের কর্মকর্তা (কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার) শাহীনূর আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশফেরত নারীদের অনেককেই পরিবার নিতে চাচ্ছে না, কখনোবা ওই নারী নিজেই যেতে চাইছেন না। অনেকে সন্তান নিয়ে ফিরেছেন। এ অবস্থায় সামাজিকভাবে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ নারী সৌদি আরবে গেছেন। আর ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ৭ লাখ নারী। এই তথ্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অভিবাসনবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার।
নারী গৃহকর্মীদের ফিরে আসার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরত আসা নারীরা সবাই সরকারের বৈধ পথে বিদেশ গিয়েছিলেন। বর্তমানে নারীদের ফেরত আসার সংখ্যাটা বেড়েছে, কিন্তু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তার ইঙ্গিত তো আগে থেকেই ছিল। কোনো নারীর পরিবার যদি এই নারীদের নিতে না চায়, সেই পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্বও নিতে হবে সরকারকেই। আর পরিবার অপারগ হলে দীর্ঘ মেয়াদে ওই নারীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ সরকারের এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে কোনো নীতি নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যৌক্তিক একটি আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন উদ্বিগ্ন হতে হয়। এই আন্দোলনে এই পর্যন্ত বারবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আজ শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।
আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক সহসভাপতির ছবি দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ধ্যার পর কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যায়। তখন তাদের বাস ভাঙচুরের উসকানি দেওয়া হয়।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক ঘৃণ্য মতলব নিয়ে আজকে এই আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এখন তারা স্কুলের কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেশ বিশৃঙ্খল করতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। যারা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।
ছাত্রছাত্রীদের সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের শুভবুদ্ধির অনেকেই বলেছেন সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমাদ, আবুল মকসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন ।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রী কাদের আরও বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাসের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন। ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে আন্ডারপাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেন্ডার ছাড়াই সেনাবাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ যেগুলো করতে হয়, সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয় যাতে করে কোনো জটিলতা না থাকে। দ্রুত কাজগুলো শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে করে আধুনিক ডাম্বল স্পিডব্রেকার করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে স্কুল–কলেজের সামনে ডাম্বলস্পিড ব্রেকার করা হবে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট বাতিলসহ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে কিছুটা দেরিও হতে পারে।
সরকার অনুপ্রবেশকারীদের কেন আইনের আওতায় আনছে না, এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের ভূমিকা অবলোকন করছি। আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে তাদের ছবিও পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংগ্রহ করছে। তাদের গতিবিধিগুলো আমরা রাজনৈতিকভাবেও দূর থেকে দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর নেওয়া যাবে না।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘পুলিশ নানা অপমান–অপদস্থ এবং হয়রানির শিকার হয়ে ধৈর্যের প্রয়াস দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক অপশক্তির মদদ যে আছে, সেটা আমরা কাছ থেকে লক্ষ করছি। আমরা ধৈর্য ধরছি। আমাদের বিশ্বাস কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’
শান্তির স্বার্থে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করে কাদের বলেন, ‘শিক্ষক-অভিভাবক তাদের আমি গতকালও অনুরোধ করেছি। শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি সবাই এই ব্যাপারে হাত বাড়াবে। আমরা তাদের আবার অনুরোধ করব। দয়া করে শান্তির স্বার্থে আমাদের এই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সবাই যদি সমন্বিতভাবে চেষ্টা করি, ভালোভাবে বোঝালে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ভবিষ্যতের কথা অনুধাবন করে ঘরে ফিরে যাবে বলে আমরা আশা করি।’
জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালু রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, পিয়ংইয়ং জাহাজ থেকে জাহাজে অবৈধ তেলজাতীয় পণ্য স্থানান্তর বৃদ্ধি করেছে এবং বিদেশে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এই গোপনীয় প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জমা দেয়।
উত্তর কোরিয়া এখনো প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেয়নি।
গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্ক ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান সত্ত্বেও পিয়ংইয়ং নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।
একজন অজ্ঞাতনামা মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের একটি সাইটে অব্যাহত কর্মতৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া এর পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলো বন্ধ করেনি এবং সাগরে জাহাজ থেকে জাহাজে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও কয়লা অবৈধ স্থানান্তর করছে।’
এতে আরও বলা হয়, লিবিয়া, সুদান ও ইয়েমেনর কাছে ‘পিয়ংইয়ং বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও হালকা অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।’
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন, উত্তর কোরিয়ার কার্যক্রম আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করেছে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের ব্যাপারে তিনি ‘আশাবাদী’।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, পিকআপটির চালকের আসনে ছিল কিশোর হেলপার (চালকের সহকারী)। সে মাদকসেবী; স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তও করছিল সে। পরে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সখীপুর-সাগরদিঘি সড়কের বেলতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া আফরিন (১৫)। সে উপজেলার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আটক হেলপারের নাম তানভীর হাসান (১৫)। তার বাড়ি একই উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিকেলের দিকে সাদিয়াকে দাফন করা হয়েছে।
নিহত ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় সাদিয়া তার ফুপুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে হেঁটে আসছিল। সকাল ১০টার দিকে বেলতলী বাজারে পৌঁছালে ওই পিকআপের ধাক্কায় তার মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।
আটক তানভীর প্রথম আলোকে বলে, সে কচুয়া থেকে কয়েকজন যুবককে তুলে উপজেলার কুতুবপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলতলী এলাকায় পৌঁছালে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে আসা ওই মেয়েটিকে পিকআপে থাকা যুবকেরা ‘হিপহিপ হুররে’ বলে উত্ত্যক্ত করে। এ সময় তানভীর নিজেও মেয়েটির পাশ দিয়ে পিকআপ চালায়। একসময় পিকআপের পেছনের অংশ সাদিয়ার মাথায় জোরে আঘাত করে। তানভীরের দাবি, ওই যুবকদের হইহুল্লোড় সে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে ওই যুবকদের চিনতে পারেনি।
কিন্তু পুলিশের দাবি, আটক তানভীর নিজেও একজন উত্ত্যক্তকারী ও মাদকসেবী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ওই পিকআপের মূল চালক লাবলু মিয়ার কাছ থেকে তানভীর পিকআপটি নিয়ে বের হয়।
এদিকে ঘটনার পরপর সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সখীপুর-সাগরদিঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে চার ঘণ্টা ওই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এলাকাবাসী গাড়ির আসল চালক ও মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
পরে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী সরকার ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন আলী আন্দোলনকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে বেলা দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে কাল শনিবার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানা গেছে।
ওসি এস এম তুহীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। গাড়ির চালকের সহকারী তানভীরকে থানায় রাখা হয়েছে। মূল চালক লাবলু মিয়া ও গাড়ির মালিক উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের রাজ্জাক বিপ্লবকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বান্দরবানে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে গতকাল শুক্রবার রাতে উজানীপাড়ার এক সাবেক কার্বারী (পাড়াপ্রধান) ও তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কার্বারীর আরেক আত্মীয়কে মারাত্মক আহত অবস্থায় সেনাসদস্যরা উদ্ধার করেছেন বলে সেনাবাহিনী রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন।
পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে উজানীপাড়ার সাবেক কার্বারী কে অং প্রু মারমার (৬০) বাড়ির ওপর নতুন কার্বারীর লোকজন হামলা চালায়। হামলায় সাবেক কার্বারী কে অং প্রু সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন। তাঁর ছেলে মং এচিং মারমাকে (৩২) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে সেনাসদস্যরা তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাড়ার নিচে জঙ্গলে খুঁজে পান। একজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম জানা যায়নি।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেছেন, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি উজানীপাড়ায় নতুন কার্বারী ও পুরোনো কার্বারীর মধ্যে গত বছর থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। গত বছর নতুন কার্বারীর আত্মীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুসিংমং মারমাকে হত্যা করা হয়। তাঁকে হত্যার অভিযোগে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলে কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর নতুন কার্বারীর সঙ্গে বিরোধ আবার চরম আকার ধারণ করে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, পাড়াটি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। লাশ উদ্ধারে তিনি পাড়ার দিকে যাচ্ছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, সেনাবাহিনী সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজানীপাড়া গেছে। সেখান থেকে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত আরেকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে। পাড়ার সাবেক ও বর্তমান কার্বারীর লোকজনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, তারা তো নিজের জন্য কিছু চায়নি। তাদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন নয়। তারা চেয়েছে নিরাপদ সড়ক।
বাসচাপায় নিহত দিয়া খানমের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে আজ শুক্রবার সকালে তাদের মহাখালীর বাড়িতে গিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এরশাদ। সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নানা মন্তব্যের সমালোচনা করেন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘শাজাহান খানের হাসি দেখে দুঃখ পেয়েছি। একটা ছেলে মারা গেছে, একটা মেয়ে মারা গেছে। তিনি হাসিমুখে ঘটনাকে তুলনা করছেন ভারতের দুর্ঘটনার সঙ্গে। এই যদি তাঁর প্রতিক্রিয়া, কী বলার আছে।’
সড়ক পরিবহন আইনকে আরও কঠোর করার দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকতে আমি মৃত্যুদণ্ডের আইন করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে আইনটি পরে বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু যারা সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে, তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘আমার ছেলে যদি আজকে গাড়িতে করে স্কুলে যেত, সর্বক্ষণ আমি চিন্তায় থাকতাম ছেলে বাসায় ফিরবে কি না। মৃত্যু দেখলে তো আমি আত্মহত্যা করতাম। মৃত ছেলের মুখ দেখতে চাই না আমি।’
ঠোঁটকাঠি, মানে লিপস্টিকের জন্ম প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। নানা পদ্ধতিতে ঠোঁট রাঙানোর কারিগরি চলত প্রাচীন সেই সময়ে। কয়েক শতক আগেও লিপস্টিক বলতে লাল রংই বোঝাত। ত্বকের রং যেমনই হোক, ওই একটা রংই চলত। বিশেষজ্ঞ মতামত—ত্বকের রঙের ধারার সঙ্গে মিলিয়ে লিপস্টিকের রং বেছে নেওয়া ভালো। লিপস্টিকের সঠিক রং যতটা সুন্দর করে তুলবে আপনাকে, বেঠিক রং ঠিক ততটাই অসুন্দর করে তুলতে পারে।লিপস্টিক পাওয়া যখন দুষ্কর ছিল, তখন থেকেই কিন্তু লিপস্টিকের প্রচলন। নিত্যনতুন পদ্ধতিতে ঠোঁট রাঙানো হতো। পাশ্চাত্যে বেরি ফলের রস দিয়ে লিপস্টিক, ব্লাশঅন কিংবা আইশ্যাডোর কাজ সারতেন অনেকে। আমাদের এখানে একই কাজটি করা হতো ঠোঁটে রঙিন কাগজ চেপে ধরে।
চিত্র বদলে গেছে। এখন লিপস্টিক হাতের মুঠোয়। লিপস্টিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বয়সও এখন কোনো বিষয় নয়। বরং ত্বকের রংটা এখানে মুখ্য। লিপস্টিক এমনই একটা প্রসাধন, ত্বকের রঙের সঙ্গে না মানালে যা নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করাই ভালো।
রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খানের মতে, মেরুন, রুবি লাল রঙের লিপস্টিকে প্রায় সবাইকে ভালো লাগে। যাঁদের গায়ের রং চাপা, তাঁরা যদি লালের সঙ্গে একটু কালচে কোনো রং মিশিয়ে নেন, মানাবে ভালো।
ত্বকের রঙের ধারা মানে স্কিন টোন বোঝার সহজ বুদ্ধি হলো ত্বকের নিচের শিরার রং বোঝা। শিরার রং যদি নীল বা বেগুনি হয়, তাহলে আপনি ‘কুল টোন’-এর অধিকারী। অর্থাৎ আপনার ত্বকের নিচের রং হলো গোলাপি, লাল বা নীলচে। ত্বকের নিচের রং (আন্ডার টোন) হলদেটে, বাঙ্গি বা সোনালি ধাঁচের হলে সেটি ‘ওয়ার্ম টোন’ আর শিরার রং সবুজ। নীল ও সবুজ শিরা যাঁদের, তাঁদের সুবিধা সবচেয়ে বেশি। ত্বকের রং নিরপেক্ষ হওয়ায় তাঁরা প্রায় সব রঙেই সাজাতে পারেন ঠোঁট। ত্বকের ওপরের রঙের ওপর নির্ভর করে লিপস্টিকের রং ঠিক করা হয় না। বরং ত্বকের নিচে যে রং লুকিয়ে আছে, সেটার ওপর নির্ভর করেই লিপস্টিকের রঙের তালিকা (কালার চার্ট) বানানো হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে—জানালেন কানিজ আলমাস খান।
আন্ডার টোন নীলচে হলে মেরুন ধাঁচের গাঢ় রং মানাবে। হলদেটে টোন যাঁদের, তাঁদের জন্য চকলেট, কফির মতো রং। আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের আন্ডার টোন জলপাই রঙের। কারোরটা একটু উজ্জ্বল জলপাইরঙা, কারও-বা চাপা।
দিনের বেলায় ম্যাট লিপস্টিকই ভালো। রাতের বেলায় দাওয়াতে বা চকচকে (শাইনি) মেকআপের সঙ্গে গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। দুটোই এখন বেশ চলছে। লিপলাইনার শুধু লিপস্টিকের লাইন ঠিক করার জন্য। মেটালিক লিপস্টিকও চলছে। এখন তো কালো লিপস্টিকও জনপ্রিয়। ন্যুড রং পাশ্চাত্যে আগে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে। আমরা যখন পাশ্চাত্যের ফ্যাশন ও স্টাইলগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করা শুরু করলাম, তখন থেকে ন্যুড রঙের ব্যবহারও শুরু হয়েছে। প্লাম রং, লাল, মেরুন, নীল, সবুজ, ছাই রঙের লিপস্টিক এখন বেশ জনপ্রিয়। কানিজ আলমাসের মতে, কোনো স্টাইলই এখন আর উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সবাই সবকিছু ব্যবহার করে দেখছেন।
লিপস্টিক আর একটু কাজল একজন মানুষের চেহারায় সতেজতা নিয়ে আসতে পারে। একটু রঙের ছোঁয়া পুরো চেহারায় প্রাণবন্ত ভাব নিয়ে আসে। আনুষ্ঠানিক কোনো আয়োজনে যাওয়ার আগে লিপস্টিক লাগানো উচিত। এতে চেহারাতেও আনুষ্ঠানিকতা ফুটে ওঠে।
মডেল তৃণর ত্বকের রং উজ্জ্বল হওয়ায় তার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বাঙ্গি ন্যুড টোন, রুবি লাল, প্লাম (একটু মেরুনরঙা বেগুনি), মভ (হালকা বেগুনি ধাঁচের) রঙের লিপস্টিক। মডেল সায়রার ত্বক মিষ্টি শ্যামলা, ঠোঁটের রংগুলোতেও আছে সেই ধারা। কোরাল কমলা, হালকা গোলাপি, ন্যুড, হালকা বাঙ্গি রংগুলো মানিয়ে গেছে তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও। মডেল মাইশার চাপা রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পাউডার গোলাপি, হালকা বেগুনি, কমলা রঙের লিপস্টিকগুলো প্রাধান্য পেয়েছে।
ঠোঁটকাঠির রঙে রাঙা ঠোঁটে আপনাকে দেখাবে সুন্দর, সে নিয়ে তো সন্দেহ নেই। এতে আপনার ব্যক্তিত্বও ফুটে উঠবে। শুধু ত্বকের রংটা কোন ধাঁচের, তা বুঝে নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
সমস্যা
আমরা ভালোবেসে পরিবারের সম্মতিতে চার বছর আগে বিয়ে করেছি। দুজনই প্রকৌশলী। ওর নিজের একটা ফার্ম রয়েছে। এত দিন অনেক সুখী ছিলাম। কিন্তু এ বছর একজন মেয়ের সঙ্গে তার পরিচয়, দেখা করা এবং ঘনিষ্ঠভাবে সময় কাটানো আমাকে আহত করেছে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ঘটনাগুলো ঘটেছে। আমার স্বামী সবকিছু স্বীকার করে নিয়ে কথা দিয়েছে, সে আর কখনো এমনটা করবে না। সে বলেছে, মেয়েটার সঙ্গে তার কোনো মানসিক সম্পর্ক ছিল না, তা শুধুই শারীরিক। মেয়েটার সঙ্গে তার আর যোগাযোগ নেই, কখনো আর কথা বলবেও না। বিষয়টার জন্য সে খুবই অনুতপ্ত। কিন্তু যা হয়েছে আমি সেটা কিছুতেই মানতে পারছি না। আমি ততক্ষণই ভালো থাকি, যতক্ষণ এটা ভুলে থাকি। বাস্তবতা হলো, আমি তাকে ছেড়ে কখনো থাকতে পারব না। আবার আমি তাকে ভালোবাসতেও পারছি না। খুব ঘৃণা হয় ওকে। ঘটনার কথা মনে হলেই, পাগলের মতো আচরণ করি। এভাবে চললে, যেকোনো দিন বড় একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে। আমার কী করা উচিত?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তোমার মনের ওপর দিয়ে যে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে গেছে তা সহজেই অনুমেয়। জীবনে চলতে গিয়ে আমরা যত ধরনের ট্রমা বা ভীতিকর ও পীড়াদায়ক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাই, তার মধ্যে সবচেয়ে দুঃসহ হচ্ছে খুব কাছের, বিশ্বস্ত একটি মানুষের দ্বারা প্রতারণা বা প্রবঞ্চনার শিকার হওয়া। এতে করে অত্যন্ত অসহায়ত্বের সৃষ্টি হয়, মনে হয় আর কখনো এই মানুষটিকে বিশ্বাস করা বা তার সঙ্গে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব নয়। যে মানুষটি সবচেয়ে আস্থার জায়গায় ছিল, যে সমস্যাগুলো সমাধানের সহায়ক ছিল, হঠাৎ করে সে সমস্যার উৎস হয়ে মনের মধ্যে সব সময় ঘোরাফেরা করতে থাকে। একেবারে বিশ্বাসের শিকড়ে গিয়ে প্রচণ্ডভাবে আঘাত লাগে। মনে হতে থাকে, ভবিষ্যতে আর কখনো কোনো কাছের মানুষকে বিশ্বাস করা যাবে না। তার প্রতি ঘৃণা, অশ্রদ্ধা ও অনীহা সৃষ্টি হয়। তার কণ্ঠস্বর, শারীরিক উপস্থিতি সবকিছুই অরুচিকর মনে হতে থাকে। আবার যখন তাকে একেবারে ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবা যায় না, তখন মনঃকষ্ট আরও হাজার গুণ বেড়ে যায়।
বর্তমানে তুমি এই অবস্থাতেই রয়েছ। তোমরা দুজন সহপাঠী ছিলে কি না তা জানাওনি। এমনকি হয়েছে যে একই সঙ্গে প্রকৌশলী হওয়ার পর থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অনেক সময় দিতে হয়েছে? দাম্পত্য ও কর্মজীবন একই সঙ্গে শুরু হওয়ার ফলে তোমরা কি পারস্পরিক সম্পর্কটি খুব একটা যত্ন করতে পারনি? অনেক সময় বিয়ের আগের প্রেমের সম্পর্কটিকে আমরা কিছুটা গুরুত্ব দিয়ে সেটির প্রতি বেশ মনোযোগী থাকি। বিয়ের পর দুজন সারা জীবনের জন্য পরস্পরের সঙ্গী হয়ে থাকার অঙ্গীকার হয়ে যায় বলে সম্পর্কটি কিছুটা অযত্নেœপড়ে যায়। তখন আমরা জীবনের অন্য দিকগুলো গোছাতে শুরু করি। তোমার স্বামী নিজের ফার্মটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পেছনে অতিরিক্ত সময় দিয়ে দেওয়ার ফলে সম্পর্কে কিছুটা শিথিলতা এসেছিল কি না তা ভেবে দেখতে পারো। হয়তো নিজেদের অজান্তেই পারস্পরিক নির্ভরশীলতার জায়গাটি কমে গিয়ে থাকতে পারে। যদিও ব্যাপারটি খুব অল্প দিনের ছিল এবং তোমার স্বামী সব স্বীকার করেছে, তারপরও তুমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছ। সে অনুতপ্ত হয়েছে ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তোমার কাছে যে অঙ্গীকার করেছে সেটি তোমাকে এই মুহূর্তে খুব একটা স্বস্তি দিতে পারছে না।
তুমি লিখেছ, এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে যা সত্যিই বেশ আশঙ্কার নির্দেশ করে। তুমি কি তাকে এখন অনেক প্রশ্ন করে যাচ্ছ? যেমন, তোমার মধ্যে কিসের ঘাটতি ছিল, মেয়েটির কাছে সে এমন কী পেয়েছে তা তোমার মধ্যে পায়নি ইত্যাদি? আমি অনুরোধ করব, এই প্রশ্নগুলোর পরিবর্তে তুমি তার কাছে জানতে চাইতে পার এই অভিজ্ঞতাটি তাকে নিজের নতুন কোনো সত্তার সন্ধান দিয়েছে কি না যার খোঁজ সে আগে জানত না? এই নতুন সত্তাটি সঙ্গে করেই সে আবার তোমার সঙ্গে আগের মতোই সংযুক্ত হতে পারবে কি না। তাকে ক্রমাগত প্রশ্নবাণে বিদ্ধ না করে বা নিজের কোনো ক্ষতি না করে দুজনে সম্ভব হলে আবার আগের সময়গুলোর মতো একসঙ্গে কাটাও। ওর মোবাইল ফোন বা ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দিতে অনেক ইচ্ছে হলেও চেষ্টা কর সেখান থেকে বিরত থাকতে। এই ঘটনার জন্য নিজেকে একদম কষ্ট না দিয়ে আত্মমর্যাদা বোধটি কীভাবে আরও বাড়ানো যায় তা চেষ্টা কর, কেমন?
তোমার স্বামীকেও বল যে সে যেন এখন তোমার প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ও ¯স্নেহপরায়ণ হয়। অনেক ধৈর্য নিয়ে সে যেন তোমার অস্থির মনের বহিঃপ্রকাশকে কিছুটা সহ্য করে নেয়। কারণ, তাকেই বেশি চেষ্টা করতে হবে তোমার বিশ্বাসটি পুনরুদ্ধার করতে। যে কারণেই হোক না কেন সে তোমার মনে অনেক বেশি আঘাত দিয়ে ফেলেছে। যদি বিবাহিত সম্পর্কটি ওর কাছে মূল্যবান হয়, তাহলে বেশ কিছুদিন ওকে তোমার এলোমেলো আচরণের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। তবে তোমার মনের এই ক্ষতটি যদি দীর্ঘায়িত হয় এবং সম্পর্কটির মধ্যে টানাপোড়েন চলতেই থাকে, তাহলে তোমাদের কোনো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানীর কাছে যেতে হবে। তাঁরা অনেক ধৈর্যের সঙ্গে ও সহমর্মী হয়ে কথাগুলো শুনবেন এবং সাইকো-থেরাপিউটিক কৌশল দ্বারা নিজেদের মনকে গুছিয়ে নিতে এবং সম্পর্কটিকে কিছুটা হলেও একটি স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যেতে সহায়তা করবেন। এককভাবে নিজেদের কথা অকপটে বলার জন্য বসে কিছু সেশন করতে পার। আবার একসঙ্গে বসেও নিজেদের সম্পর্কটি আবার উন্নয়নের লক্ষ্যে থেরাপিস্টের সঙ্গে আলোচনা করতে পার।
সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুরের গোলাবাড়ি গ্রাম। সেখানকার হাওর বিলাস হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নৌকাযোগে ছুটলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের রউয়া বিলের দিকে। খানিকটা এগোনোর পর দেখলাম, একটি মাইজলা বক মাছের জন্য স্থির দৃষ্টিতে পানিতে তাকিয়ে আছে। দুর্লভ সেই বকটির ছবি তোলার সময় ওর প্রায় ১০ মিটার পেছনে তিনটি হাঁস ক্যামেরার ফ্রেমে ধরা পড়ল। নৌকা কাছাকাছি যেতেই ওরা উড়ে গেল। আরেকটু পর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আরও ১৫-২০টি হাঁসের দেখা মিলল।
রউয়া বিল থেকে চটাইন্না খাল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমের চটাইন্না বিলে গিয়ে একটি কান্দায় (উঁচু জায়গা) নামলাম। এটি পার হয়ে সামনে যেতেই হঠাৎ রউয়া বিলে দেখা সেই হাঁসের বিশাল একটি ঝাঁক উড়াল দিল।
টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা হাঁসগুলো পরিযায়ী পাখি নাইরলি হাঁস। জিরিয়া হাঁস, ইটাপেরি হাঁস বা গাঙ রৈব নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম গারগেনি (Garganey) বা ব্লু-উইঙ্গড টিল (Blue-winged Teal)।
নাইরলি হাঁসের গড় ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম। প্রজননকালে হাঁসা, হাঁসির পালকের রঙে পার্থক্য দেখা যায়। হাঁসার গাঢ় বাদামি মাথার চাঁদি হয় কালো। চোখের ওপর থাকে সাদা চওড়া ভ্রুরেখা। মুখ ও ঘাড়-গলা হয় গাঢ় বাদামি। পিঠ, পেটের নিম্নাংশ ও লেজের তলা বাদামি এবং তাতে থাকে কালো কালো বুটি। সাদাটে পেটের দুপাশে ছোট ছোট রুপালি দাগ। ডানার ওপরটা ধূসর।
হাঁসির পালক বাদামি ও তাতে গাঢ় বুটির মতো থাকে। কিন্তু ভ্রুরেখা অস্পষ্ট। হাঁসা-হাঁসি নির্বিশেষে চোখ ঘন বাদামি ও চঞ্চু কালচে-বাদামি। প্রজনন মৌসুম ছাড়া অন্য সময় হাঁসা ও হাঁসি দেখতে একই রকম, শুধু ডানার পালকে কিছুটা পার্থক্য থাকে।
নাইরলি হাঁস বহুল দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। মাঝারি থেকে বড় দলে বিচরণ করে। জলজ উদ্ভিদের বিচি, পাতা প্রিয় খাবার। তবে কদাচিৎ কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট এবং খোলকি প্রাণী, যেমন চিংড়ি ও কাঁকড়া ইত্যাদি খায়।
নাইরলি হাঁসের প্রজননকাল এপ্রিল-মে। এ সময় এরা মূল আবাস ইউরোপ ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে মাটিতে তৃণলতার ওপর বাসা বানায়। হালকা পীতাভ রঙের ৮-১২টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ২১-২৩ দিনে। বাচ্চাদের পালক গজায় ৩৫-৪৯ দিনে। এরপর নীল আকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে তারা। এদের আয়ুষ্কাল ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর।
সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকার পাশে শিল্প-কারখানা স্থাপন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও পরিবেশবিষয়ক বিশেষ দূত জন এইচ নক্স।
গত মঙ্গলবার দেওয়া ওই বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত ওই বনটি জাতিসংঘ ঘোষিত রামসার এলাকা বা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ জলাভূমি। এখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে তা শুধু বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনের জন্যই হুমকি না। এই বনে বসবাসকারী বেঙ্গল টাইগার, ডলফিন ও অন্যান্য বিপদাপন্ন বন্য প্রাণীর অস্তিত্বের জন্যও হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, শুধু বন্য প্রাণী নয়, সুন্দরবনের ওপরে নির্ভরশীল ৬৫ লাখ মানুষের জীবিকা, স্বাস্থ্য, বসতি, খাদ্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতাও এর ওপরে নির্ভরশীল। তিনি বলেন, জাতিসংঘের বিজ্ঞান, শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে ৩২০টি শিল্প-কারখানাকে অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় জনগণের মতামত ও যথাযথ পরিবেশ সমীক্ষা ছাড়া বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতিসংঘ থেকে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে না। সুন্দরবনের পাশে যেসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, তা আর সম্প্রসারণ না করার নির্দেশ সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এসব তথ্য জাতিসংঘের কাছে জমা দেব। আশা করি, তারা আমাদের তথ্যের সঙ্গে একমত হবে।’
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, গত বছর বাংলাদেশের উচ্চ আদালত থেকে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের সংবেদনশীল এলাকার (বাফার জোন) মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানার অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা অমান্য করে শিল্প-কারখানা অনুমোদনের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। পরিবেশের প্রতীক সুন্দরবনে এই বিশৃঙ্খল শিল্পায়ন বিশ্বের পরিবেশের জন্য হুমকি।
জন এইচ নক্স বলেন, অবশ্যই বিশ্বের অন্যান্য মানুষের মতো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির চাহিদা রয়েছে। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে অল্প সময়ের অর্থনৈতিক স্বপ্নপূরণের চেষ্টা ‘ভুল জিনিসকে স্বর্ণ ভেবে পেছনে ছোটার মতো’। একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই হবে না। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়ন পেতে হলে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে—পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। সুন্দরবনের পাশে এসব শিল্পায়নের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের কথা শুনতে হবে। তিনি বলেন, যেসব মানুষ ওই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তাদের রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের টেকসই উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ম্যানগ্রোভ বন বায়ু ও পানিকে বিশুদ্ধ করতে ভূমিকা রাখছে। যার সুবিধা বনের অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। পৃথিবীর সর্বত্র ম্যানগ্রোভ বন ছড়িয়ে পড়ুক—এটা আমাদের সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। এর বাইরেও সুন্দরবন আমাদের সবার সামনে দুটি প্রশ্ন তুলে ধরেছে—তা হচ্ছে আমরা কি এমন উন্নয়নের দিকে যাব, যা মানবাধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলবে? নাকি আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে শিল্পায়নের দিকে এগোব। আমরা কি একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাই, নাকি একটি স্বাস্থ্যকর অর্থনীতি চাই?
জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর ও খনিজ সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবনের চারপাশের শিল্প-কারখানার ব্যাপারে যেসব আপত্তি তুলছিল, তার যৌক্তিকতা আবারও প্রমাণিত হলো। আমরা আবারও বলব, সরকার যাতে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে, চারপাশের সব শিল্প-কারখানার অনুমোদন বাতিল করে। নয়তো সুন্দরবন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে, আর এ জন্য এই সরকার দায়ী থাকবে।
ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটা দ্বীপ। বলা হয়, ওকিনাওয়ার লোকেরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বাঁচে বেশি দিন। ওখানে অনেক শতবর্ষী লোকের দেখা মেলে। মেয়েরা বাঁচে পুরুষদের চেয়ে বেশি দিন; তাদের গড় আয়ু প্রায় ৯০ বছর।
সেখানকার মানুষের হৃদ্রোগ খুব কম হয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই, ক্যানসারও খুব একটা হয় না। এসবের পেছনে আসলে রহস্যটা কী? জাপানের একদল গবেষক তা খুঁজেও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কারণটা আর কিছুই না; তাদের খাদ্যাভ্যাস। ওখানকার লোকেরা রোজ একটি গাছকে তাদের খাবারের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। গাছটা হলো বড় এলাচির গাছ। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম আলপিনিয়া জেরামবেট, পরিবার জিঞ্জিবারেসি। আদাগোত্রীয় গাছের পাতা ও শিকড় খাবারের সঙ্গে খায় না এমন একটি লোকও নাকি সেখানে নেই। আবার রোজ খায় না, তেমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ গাছকে যেমন তারা খাদ্য হিসেবে খায়, গাছের পাতা দিয়ে চা বানায়, তেমনি এ গাছ থেকে বানানো ওষুধও তারা খায়। এই খাদ্যাভ্যাসটাই তাদের দীর্ঘজীবনের মূল চাবিকাঠি।
এমন একটি গাছ আমাদের দেশেও আছে। সে গাছের দেখা পেলাম লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই গ্রামের বাসিন্দা আলম সরকারের বাড়িতে। উঁচু দুটি ঝোপে অনেকগুলো গাছ আকাশের দিকে পাতা মেলে যেন তাদের বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। আলম সরকার বললেন, ‘এটা এলাচিগাছ। তবে আমরা বাজার থেকে যে বিদেশি এলাচি কিনে খাই, ওটা সে জাতের এলাচিগাছ না। এই এলাচিগাছের শুকনো ফল আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করি।’
এ গাছের ফল বাজারের এলাচির চেয়ে অনেক বড়। সে জন্য আলম সরকার এ গাছের নাম দিয়েছেন বড় এলাচি। বইপত্রেও নাম পেলাম বড় এলাচি।
ঘন সবুজ পাতার ঝোপে গাছের ডাঁটির মাথায় পাকা শুকনো ফলের কিছু থোকা তখনো ঝুলে ছিল। কড়ে মার্বেল আকারের গোল ফলের রং শুকিয়ে হলদে বাদামি হয়ে গেছে। খোসা মচমচে ও সূক্ষ্ম পশমে আবৃত। একটা ফল ছিঁড়তেই আঙুলে কিছু শুঙ্গ বিঁধে গেল। কিন্তু আঙুলের চাপে ফলটা ভাঙতে ভুল করলাম না। ভাঙতেই খোসার ভেতরে পেলাম এলাচির মতো কালো বিচি। বিচি ও খোসার ঘ্রাণ এলাচির মতোই।
আলম সরকার জানালেন, প্রায় চার বছর আগে তিনি পাশের পশ্চিম আমবাড়ি গ্রামের শাহদাতের মেয়ের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের বাড়িতে এলাচিগাছ আছে, সে গাছে এলাচি ধরছে। গাছপাগল আলম সরকার সেই বাড়ি থেকে দুটি চারা সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতে লাগান। বছরের মাথায় তাতে ফল ধরে। দ্রুত গাছের গোড়া থেকে নতুন অনেক চারা গজাতে থাকে। একসময় বড় ঝোপ হয়ে যায়। মাঘ মাসে চমৎকার ফুল ফোটে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই। ক্ষুদ্র ঝিনুক আকৃতির সাদাটে রঙের ফুলের মধ্যে হলদে কমলা ছোপ। এ জন্যই কিনা জানি না, এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Shell ginger. ফুল থেকে ফল হয়।
প্রথমে কাঁচা ফলের রং থাকে পাতার মতোই সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হলুদ, পরে কমলা রং ধারণ করে। শেষে ধূসর বাদামি হয়ে যায়। একটা ছড়ায় ১০-১৫টা ফল ধরে। আষাঢ়-শ্রাবণে ফল পাকে। এলাচির গুঁড়ার মতোই রান্নায় ব্যবহার করেন তা।
হৃদ্রোগ, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদি সারাতে এটা এক ওস্তাদ গাছ। মাথাব্যথা হলে এর কাঁচা পাতা মাথায় বেঁধে রাখলে দ্রুত উপশম হয়। হজমেও সাহায্য করে এই এলাচি।
প্রেমের সূত্র ধরে এক তরুণীকে নিয়ে সারা দিন বেড়িয়ে রাতে একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ওঠেন তাঁর কথিত প্রেমিক। সেখানে ওই প্রেমিকসহ তাঁর সহযোগীরা তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌর শহরের রেলস্টেশন সড়কের একটি হোটেলে ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন, কুলাউড়া পৌর শহরের মধ্য চাতলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সামী আহমদ (২২), শ্রীপুরের মো. আল আমিন (২৩), সিলেটের মোগলাবাজারের শাহান আহমদ (২২), হোটেলের ব্যবস্থাপক নির্মল বর্ধন (৩৫) ও হোটেলের কর্মচারী খোকন মিয়া (২০)।
পুলিশ ও নির্যাতনের শিকার তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামী সাভারের একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। সেখানে সহকর্মী তরুণীর (২০) সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শুক্রবার সামী ওই তরুণীকে বেড়ানোর কথা বলে সিলেটে নিয়ে যান। সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বেড়িয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা ট্রেনে কুলাউড়ায় পৌঁছে ওই হোটেলে ওঠেন। রাতে সামীসহ তাঁর সহযোগী আল আমিন, শাহান ও সিলেটের মোগলাবাজারের কাশেম (২২) তরুণীকে ধর্ষণ করেন। খবর পেয়ে ওই দিন দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই হোটেলে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে কাশেম পালিয়ে যান।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে বলেন, অভাবের তাড়নায় বছরখানেক আগে তিনি সাভারের পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। প্রেমের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে মামলা করবেন।
কুলাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিনয় ভূষণ রায় শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া সামী, আল আমিন ও শাহান ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তরুণীকে রোববার হাসপাতালে পাঠানো হবে। হোটেলের ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভাগ্যবদলের আশায় তাঁদের কেউ তিন মাস, কেউ ছয় মাস, কেউবা এক বছর আগে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হতে খুব বেশি দিন লাগেনি তাঁদের। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন প্রায় এক হাজার নারী। এর মধ্যে ১-৬ জুন পর্যন্তই এসেছেন ৮২ নারী।
দেশে ফিরে সরকারের কোনো সংস্থাকে পাশে পাননি ওই নারীরা। এমনকি পরিবারেও ঠাঁই হচ্ছে না অনেকের। সামাজিকভাবেও হেয় হতে হচ্ছে তাঁদের। ফিরে আসা নারীদের মধ্যে ১০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। নির্যাতনের ভয়াবহ বিবরণ দিয়েছেন তাঁরা। সরকারের পক্ষে কেউ বিমানবন্দরে তাঁদের খোঁজ নিতে যায়নি। এ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে কেন দেশে ফিরে আসার দায় রিক্রুটিং এজেন্সিকে নিতে হবে। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের আলাদাভাবে নারীশ্রমিকদের জন্য কোনো কার্যক্রম নেই। তাঁর দাবি, বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে তাঁদের কর্মীরা বিদেশফেরত শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করছেন।
সরকারি এই কর্মকর্তা সৌদি আরবে নারীশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর ওপর দায় চাপালে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো এর জন্য এককভাবে দায়ী নয়। দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে নারী গৃহকর্মীরা সৌদি আরবে গেছেন। এ ঘটনায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে।
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব-২ শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তির আগে কোনো নারী শ্রমিক ফেরত এলে রিক্রুটিং এজেন্সিকে উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে ওই দেশের মালিককে। আর শরীরে ইস্তিরির পোড়া দাগ, হাত-পা ভাঙাসহ শরীরে যতই প্রমাণ থাকুক, দূতাবাসগুলো এসব সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরছে না। এর আগেই ওই নারীকে দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ফলে নির্যাতনের বিষয়টি আর প্রমাণ করা যাচ্ছে না। অথচ সরকার এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে। তিনি বলেন, বিদেশফেরত নারীদের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো কার্যক্রম নেই।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা নারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত দুই সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে সচিবের নেতৃত্বে একাধিক সভা হয়েছে। ফেরত আসা নারীদের বিষয়ে সরকারের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বায়রা থেকে তদারক কমিটি গঠন, বিদেশে পাঠানো প্রতিটি কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নির্যাতনের অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
অভিবাসন খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরত আসা নারীদের শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের সমাজে পুনর্বাসন করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে শুধু সৌদি আরব নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো থেকেও যাঁরা ফেরত আসছেন, তাঁদের বিষয়েও সরকারকে ভাবতে হবে।
লেবানন থেকে প্রায় এক বছর আগে দেশে ফেরেন ২৫ বছর বয়সী এক নারী গৃহকর্মী। তাঁর কোলে ছিল ১ মাস ১০ দিন বয়সী শিশু। তিনি যেখানে কাজ করতেন, ওই বাসার গৃহকর্তা শিশুটির বাবা। এই নারী জানান, লেবাননে যাওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা তাঁকে যৌন নির্যাতন করতে থাকেন। ওই ব্যক্তির স্ত্রীর কাছে অভিযোগ করলেও তিনি এটি বিশ্বাস করেননি। পরে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে উল্টো মামলা দিয়ে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাঁকে দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নেওয়া হয় বেসরকারি সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন কর্মসূচির (ওকাপ) নিরাপদ আবাসে। সেখানে টানা কয়েক মাস ছিলেন তিনি। সংস্থাটি চিকিৎসার পাশাপাশি এই নারীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাউন্সেলিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। তিনি লেবানন থেকে প্রতি দুই মাস পরপর ২৪ হাজার করে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা নিতেন স্বামী। এই নারী বলেন, ‘স্বামীই আমারে বিদেশ পাঠাইছিল, এহন স্বামী তাকাইয়্যাও দেহে না। বাপ-ভাইও চেনে না। বিদেশি বাচ্চা দেইখ্যা অন্যরা হাসে।’
সৌদি আরব থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফেরত আসা এক নারী রাজধানীর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সম্প্রতি গ্রামে ফিরেছেন। ওই নারীর ভাই টেলিফোনে প্রথম আলোকে জানালেন, বিদেশ যাওয়ার আগেই স্বামী তাঁর বোনকে ফেলে চলে গেছেন। সৌদিতে নয় মাস কাজ করলেও ছয় মাসের টাকা দেশে পাঠাতে পেরেছিলেন। বোন কবে সুস্থ, স্বাভাবিক হবে ঠিক নেই। এখন কে তাঁর দায়িত্ব নেবে, তা ভেবে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।
বেসরকারি সংস্থা ওকাপের কর্মকর্তা (কেস ম্যানেজমেন্ট অফিসার) শাহীনূর আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশফেরত নারীদের অনেককেই পরিবার নিতে চাচ্ছে না, কখনোবা ওই নারী নিজেই যেতে চাইছেন না। অনেকে সন্তান নিয়ে ফিরেছেন। এ অবস্থায় সামাজিকভাবে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন।
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এরপর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ নারী সৌদি আরবে গেছেন। আর ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে গেছেন প্রায় ৭ লাখ নারী। এই তথ্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ অভিবাসনবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার।
নারী গৃহকর্মীদের ফিরে আসার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সমন্বয়ক সি আর আবরার প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেরত আসা নারীরা সবাই সরকারের বৈধ পথে বিদেশ গিয়েছিলেন। বর্তমানে নারীদের ফেরত আসার সংখ্যাটা বেড়েছে, কিন্তু নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তার ইঙ্গিত তো আগে থেকেই ছিল। কোনো নারীর পরিবার যদি এই নারীদের নিতে না চায়, সেই পরিবারকে বোঝানোর দায়িত্বও নিতে হবে সরকারকেই। আর পরিবার অপারগ হলে দীর্ঘ মেয়াদে ওই নারীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অথচ সরকারের এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি নিয়ে কোনো নীতি নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যৌক্তিক একটি আন্দোলনের মধ্যে যখন রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটে, তখন উদ্বিগ্ন হতে হয়। এই আন্দোলনে এই পর্যন্ত বারবার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এখানে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
আজ শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকতে হবে।
আন্দোলনে ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের এক সহসভাপতির ছবি দেখিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সন্ধ্যার পর কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা যখন বেশি থাকে না, তখন এদের মধ্যে এই অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে যায়। তখন তাদের বাস ভাঙচুরের উসকানি দেওয়া হয়।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক ঘৃণ্য মতলব নিয়ে আজকে এই আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য তাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এখন তারা স্কুলের কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেশ বিশৃঙ্খল করতে চাইছে। তিনি আরও বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। যারা অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক রং চড়াতে চায়, তাদের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার জন্য আমরা অনুরোধ করছি।
ছাত্রছাত্রীদের সব দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের শুভবুদ্ধির অনেকেই বলেছেন সরকার দাবি মেনে নিচ্ছে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমাদ, আবুল মকসুদ, ইলিয়াস কাঞ্চন ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে চলে যেতে বলেছেন ।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে মন্ত্রী কাদের আরও বলেন, তাদের দাবি অনুযায়ী শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের সামনে আন্ডারপাসের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনীকে বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন। ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে আন্ডারপাসের কাজ সম্পন্ন করার জন্য টেন্ডার ছাড়াই সেনাবাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়েছে। দ্রুত কাজ যেগুলো করতে হয়, সেগুলো সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয় যাতে করে কোনো জটিলতা না থাকে। দ্রুত কাজগুলো শেষ হয়ে যায়। এ ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলো যৌক্তিক মনে করে আধুনিক ডাম্বল স্পিডব্রেকার করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে স্কুল–কলেজের সামনে ডাম্বলস্পিড ব্রেকার করা হবে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট বাতিলসহ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। জনবল সংকটের কারণে কিছুটা দেরিও হতে পারে।
সরকার অনুপ্রবেশকারীদের কেন আইনের আওতায় আনছে না, এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছি। তাদের ভূমিকা অবলোকন করছি। আন্দোলনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে তাদের ছবিও পুলিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সংগ্রহ করছে। তাদের গতিবিধিগুলো আমরা রাজনৈতিকভাবেও দূর থেকে দেখছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোনো দমনমূলক পদক্ষেপ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের ওপর নেওয়া যাবে না।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘পুলিশ নানা অপমান–অপদস্থ এবং হয়রানির শিকার হয়ে ধৈর্যের প্রয়াস দেখাচ্ছে। রাজনৈতিক অপশক্তির মদদ যে আছে, সেটা আমরা কাছ থেকে লক্ষ করছি। আমরা ধৈর্য ধরছি। আমাদের বিশ্বাস কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে যাবে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।’
শান্তির স্বার্থে সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করে কাদের বলেন, ‘শিক্ষক-অভিভাবক তাদের আমি গতকালও অনুরোধ করেছি। শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি সবাই এই ব্যাপারে হাত বাড়াবে। আমরা তাদের আবার অনুরোধ করব। দয়া করে শান্তির স্বার্থে আমাদের এই ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে সবাই যদি সমন্বিতভাবে চেষ্টা করি, ভালোভাবে বোঝালে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ভবিষ্যতের কথা অনুধাবন করে ঘরে ফিরে যাবে বলে আমরা আশা করি।’
জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তর কোরিয়া তার পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালু রেখেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন আরও বলা হয়, পিয়ংইয়ং জাহাজ থেকে জাহাজে অবৈধ তেলজাতীয় পণ্য স্থানান্তর বৃদ্ধি করেছে এবং বিদেশে অস্ত্র বিক্রির চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এই গোপনীয় প্রতিবেদন গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জমা দেয়।
উত্তর কোরিয়া এখনো প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেয়নি।
গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে সাম্প্রতিক উষ্ণ সম্পর্ক ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান সত্ত্বেও পিয়ংইয়ং নতুন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।
একজন অজ্ঞাতনামা মার্কিন কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, গোয়েন্দা উপগ্রহগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের একটি সাইটে অব্যাহত কর্মতৎপরতার প্রমাণ পেয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়া এর পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিগুলো বন্ধ করেনি এবং সাগরে জাহাজ থেকে জাহাজে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ও কয়লা অবৈধ স্থানান্তর করছে।’
এতে আরও বলা হয়, লিবিয়া, সুদান ও ইয়েমেনর কাছে ‘পিয়ংইয়ং বিদেশি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও হালকা অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির চেষ্টা করে।’
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দেন, উত্তর কোরিয়ার কার্যক্রম আর্থিক নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করেছে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ অর্জনের ব্যাপারে তিনি ‘আশাবাদী’।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ বলছে, পিকআপটির চালকের আসনে ছিল কিশোর হেলপার (চালকের সহকারী)। সে মাদকসেবী; স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্তও করছিল সে। পরে স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সখীপুর-সাগরদিঘি সড়কের বেলতলী বাজারে এই ঘটনা ঘটে। আহত ওই শিক্ষার্থী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মারা যায়। নিহত শিক্ষার্থীর নাম সাদিয়া আফরিন (১৫)। সে উপজেলার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আটক হেলপারের নাম তানভীর হাসান (১৫)। তার বাড়ি একই উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। বিকেলের দিকে সাদিয়াকে দাফন করা হয়েছে।
নিহত ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সময় সাদিয়া তার ফুপুর বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে হেঁটে আসছিল। সকাল ১০টার দিকে বেলতলী বাজারে পৌঁছালে ওই পিকআপের ধাক্কায় তার মাথা ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সে মারা যায়।
আটক তানভীর প্রথম আলোকে বলে, সে কচুয়া থেকে কয়েকজন যুবককে তুলে উপজেলার কুতুবপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলতলী এলাকায় পৌঁছালে রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে আসা ওই মেয়েটিকে পিকআপে থাকা যুবকেরা ‘হিপহিপ হুররে’ বলে উত্ত্যক্ত করে। এ সময় তানভীর নিজেও মেয়েটির পাশ দিয়ে পিকআপ চালায়। একসময় পিকআপের পেছনের অংশ সাদিয়ার মাথায় জোরে আঘাত করে। তানভীরের দাবি, ওই যুবকদের হইহুল্লোড় সে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সে ওই যুবকদের চিনতে পারেনি।
কিন্তু পুলিশের দাবি, আটক তানভীর নিজেও একজন উত্ত্যক্তকারী ও মাদকসেবী। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ওই পিকআপের মূল চালক লাবলু মিয়ার কাছ থেকে তানভীর পিকআপটি নিয়ে বের হয়।
এদিকে ঘটনার পরপর সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত সখীপুর-সাগরদিঘি সড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। এতে চার ঘণ্টা ওই সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। এলাকাবাসী গাড়ির আসল চালক ও মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
পরে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী সরকার ও সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন আলী আন্দোলনকারীদের বিচারের আশ্বাস দিলে বেলা দুইটার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। তবে কাল শনিবার বড়চওনা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানা গেছে।
ওসি এস এম তুহীন আলী প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি জব্দ করে থানায় আনা হয়েছে। গাড়ির চালকের সহকারী তানভীরকে থানায় রাখা হয়েছে। মূল চালক লাবলু মিয়া ও গাড়ির মালিক উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের রাজ্জাক বিপ্লবকে আটকের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বান্দরবানে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে গতকাল শুক্রবার রাতে উজানীপাড়ার এক সাবেক কার্বারী (পাড়াপ্রধান) ও তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কার্বারীর আরেক আত্মীয়কে মারাত্মক আহত অবস্থায় সেনাসদস্যরা উদ্ধার করেছেন বলে সেনাবাহিনী রুমা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ জানিয়েছেন।
পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, গতকাল দিবাগত রাত দুইটার দিকে উজানীপাড়ার সাবেক কার্বারী কে অং প্রু মারমার (৬০) বাড়ির ওপর নতুন কার্বারীর লোকজন হামলা চালায়। হামলায় সাবেক কার্বারী কে অং প্রু সঙ্গে সঙ্গেই নিহত হন। তাঁর ছেলে মং এচিং মারমাকে (৩২) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে সেনাসদস্যরা তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাড়ার নিচে জঙ্গলে খুঁজে পান। একজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর নাম জানা যায়নি।
পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেছেন, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি উজানীপাড়ায় নতুন কার্বারী ও পুরোনো কার্বারীর মধ্যে গত বছর থেকে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। গত বছর নতুন কার্বারীর আত্মীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুসিংমং মারমাকে হত্যা করা হয়। তাঁকে হত্যার অভিযোগে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলে কারাগারে ছিলেন। সম্প্রতি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর নতুন কার্বারীর সঙ্গে বিরোধ আবার চরম আকার ধারণ করে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, পাড়াটি অত্যন্ত দুর্গম এলাকায়। লাশ উদ্ধারে তিনি পাড়ার দিকে যাচ্ছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, সেনাবাহিনী সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উজানীপাড়া গেছে। সেখান থেকে সাবেক কার্বারী ও তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গুরুতর আহত আরেকজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে। পাড়ার সাবেক ও বর্তমান কার্বারীর লোকজনের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তিনি বলেন, তারা তো নিজের জন্য কিছু চায়নি। তাদের আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন নয়। তারা চেয়েছে নিরাপদ সড়ক।
বাসচাপায় নিহত দিয়া খানমের পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে আজ শুক্রবার সকালে তাদের মহাখালীর বাড়িতে গিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এরশাদ। সড়কে মৃত্যুর ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নানা মন্তব্যের সমালোচনা করেন এরশাদ। তিনি বলেন, ‘শাজাহান খানের হাসি দেখে দুঃখ পেয়েছি। একটা ছেলে মারা গেছে, একটা মেয়ে মারা গেছে। তিনি হাসিমুখে ঘটনাকে তুলনা করছেন ভারতের দুর্ঘটনার সঙ্গে। এই যদি তাঁর প্রতিক্রিয়া, কী বলার আছে।’
সড়ক পরিবহন আইনকে আরও কঠোর করার দাবি জানিয়ে এরশাদ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি থাকতে আমি মৃত্যুদণ্ডের আইন করেছিলাম। কিন্তু আন্দোলনের কারণে আইনটি পরে বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। কিন্তু যারা সড়কে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ মারবে, তাদের মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত।’
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত বলেন, ‘আমার ছেলে যদি আজকে গাড়িতে করে স্কুলে যেত, সর্বক্ষণ আমি চিন্তায় থাকতাম ছেলে বাসায় ফিরবে কি না। মৃত্যু দেখলে তো আমি আত্মহত্যা করতাম। মৃত ছেলের মুখ দেখতে চাই না আমি।’