ওকিনাওয়া জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের একটা দ্বীপ। বলা হয়, ওকিনাওয়ার লোকেরা পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা বাঁচে বেশি দিন। ওখানে অনেক শতবর্ষী লোকের দেখা মেলে। মেয়েরা বাঁচে পুরুষদের চেয়ে বেশি দিন; তাদের গড় আয়ু প্রায় ৯০ বছর।
সেখানকার মানুষের হৃদ্রোগ খুব কম হয়, স্ট্রোকের ঝুঁকি নেই, ক্যানসারও খুব একটা হয় না। এসবের পেছনে আসলে রহস্যটা কী? জাপানের একদল গবেষক তা খুঁজেও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কারণটা আর কিছুই না; তাদের খাদ্যাভ্যাস। ওখানকার লোকেরা রোজ একটি গাছকে তাদের খাবারের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে। গাছটা হলো বড় এলাচির গাছ। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম আলপিনিয়া জেরামবেট, পরিবার জিঞ্জিবারেসি। আদাগোত্রীয় গাছের পাতা ও শিকড় খাবারের সঙ্গে খায় না এমন একটি লোকও নাকি সেখানে নেই। আবার রোজ খায় না, তেমন লোকও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ গাছকে যেমন তারা খাদ্য হিসেবে খায়, গাছের পাতা দিয়ে চা বানায়, তেমনি এ গাছ থেকে বানানো ওষুধও তারা খায়। এই খাদ্যাভ্যাসটাই তাদের দীর্ঘজীবনের মূল চাবিকাঠি।
এমন একটি গাছ আমাদের দেশেও আছে। সে গাছের দেখা পেলাম লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ঢাকনাই গ্রামের বাসিন্দা আলম সরকারের বাড়িতে। উঁচু দুটি ঝোপে অনেকগুলো গাছ আকাশের দিকে পাতা মেলে যেন তাদের বিজয়বার্তা ঘোষণা করছে। আলম সরকার বললেন, ‘এটা এলাচিগাছ। তবে আমরা বাজার থেকে যে বিদেশি এলাচি কিনে খাই, ওটা সে জাতের এলাচিগাছ না। এই এলাচিগাছের শুকনো ফল আমরা মসলা হিসেবে ব্যবহার করি।’
এ গাছের ফল বাজারের এলাচির চেয়ে অনেক বড়। সে জন্য আলম সরকার এ গাছের নাম দিয়েছেন বড় এলাচি। বইপত্রেও নাম পেলাম বড় এলাচি।
ঘন সবুজ পাতার ঝোপে গাছের ডাঁটির মাথায় পাকা শুকনো ফলের কিছু থোকা তখনো ঝুলে ছিল। কড়ে মার্বেল আকারের গোল ফলের রং শুকিয়ে হলদে বাদামি হয়ে গেছে। খোসা মচমচে ও সূক্ষ্ম পশমে আবৃত। একটা ফল ছিঁড়তেই আঙুলে কিছু শুঙ্গ বিঁধে গেল। কিন্তু আঙুলের চাপে ফলটা ভাঙতে ভুল করলাম না। ভাঙতেই খোসার ভেতরে পেলাম এলাচির মতো কালো বিচি। বিচি ও খোসার ঘ্রাণ এলাচির মতোই।
আলম সরকার জানালেন, প্রায় চার বছর আগে তিনি পাশের পশ্চিম আমবাড়ি গ্রামের শাহদাতের মেয়ের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের বাড়িতে এলাচিগাছ আছে, সে গাছে এলাচি ধরছে। গাছপাগল আলম সরকার সেই বাড়ি থেকে দুটি চারা সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতে লাগান। বছরের মাথায় তাতে ফল ধরে। দ্রুত গাছের গোড়া থেকে নতুন অনেক চারা গজাতে থাকে। একসময় বড় ঝোপ হয়ে যায়। মাঘ মাসে চমৎকার ফুল ফোটে। ফুলে কোনো ঘ্রাণ নেই। ক্ষুদ্র ঝিনুক আকৃতির সাদাটে রঙের ফুলের মধ্যে হলদে কমলা ছোপ। এ জন্যই কিনা জানি না, এ গাছের ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে Shell ginger. ফুল থেকে ফল হয়।
প্রথমে কাঁচা ফলের রং থাকে পাতার মতোই সবুজ। পাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে হলুদ, পরে কমলা রং ধারণ করে। শেষে ধূসর বাদামি হয়ে যায়। একটা ছড়ায় ১০-১৫টা ফল ধরে। আষাঢ়-শ্রাবণে ফল পাকে। এলাচির গুঁড়ার মতোই রান্নায় ব্যবহার করেন তা।
হৃদ্রোগ, জ্বর, ঠান্ডা লাগা, মাথাব্যথা, চর্মরোগ ইত্যাদি সারাতে এটা এক ওস্তাদ গাছ। মাথাব্যথা হলে এর কাঁচা পাতা মাথায় বেঁধে রাখলে দ্রুত উপশম হয়। হজমেও সাহায্য করে এই এলাচি।